মাহমুদুল হক আনসারী
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের বিভাজন রয়েছে। এই বিভাজনটি আরও প্রকট হয়, রাজনীতির পট পরিবর্তনের পর। আমাদের রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, মারমুখী অবস্থান স্বাভাবিক একটি বিষয়। বিদেশিরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নানা মন্তব্য ও ভূমিকা রাখার সংস্কৃতি চলে আসছে। আমাদের দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের বিভাজনের কারণে তারা এ সুযোগটি পায়। বাস্তবে বিদেশিরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু বেশি দেখে না। তাদের নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য যদি ঠিক থাকে, তাহলে তারাও চুপ হয়ে থাকে। তারা নিজেদের স্বার্থ ঠিক রেখে সম্পর্ক তৈরি করে। একটি দেশ যখন কথা বলবে, অন্য দেশ তখন চুপ থাকবে কেন, মেনে নেবে ? কারণ, পৃথিবী আর আগের মতো নেই। এগুলো নতুন কিছু নয়। তবে দেশের অর্থনীতি, অর্থনীতির কাঠামো যদি ভালো হয়, বিদেশিরা এমন সুযোগ নিতে পারবে না। বিদেশীরা বাংলাদেশের রাজনীতির উপর প্রভাব সেটি পুরোনো বিষয়। স্বার্থ নিয়ে এখানে পাল্টা পাল্টি অবস্থান বিদেশীরা তাদের স্বার্থেই করে। আমাদের দেশে রাজনীতি গণতন্ত্র, মানবাধিকার কী পর্যায়ে আছে সেটি কম বেশী সারা দুনিয়ায় জানে। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সরকার দেশের রাজনীতির ময়দানে গণতন্ত্র চর্চার ধারাবাহিকতা রেখেছে। আমাদের দেশে রাজনীতি গণতন্ত্র মানবাধিকার সবকিছু সরকার এবং জনগন নির্ধারণ করবে। সেটিই মূলত বাস্তব বিষয়। গণতন্ত্রকে শক্তিশালীর কথা বলে বিদেশীরা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের উপর প্রভাব খাঠায় ।
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করছে, কতখানি মানবাধিকারের জন্য বা কতটা তাদের দেশের স্বার্থে- এটি ভাবতে হবে। তারা যদি সত্যিই মানবাধিকার নিয়ে চিন্তা করত, তাহলে তো দুনিয়ার নানা দেশে গণতন্ত্র মানবাধিকার যে ভাবে কবরস্থ হচ্ছে কৈ সেখানে তো তাদের জোর ভূমিকা লক্ষ্য করা যায় না। ফিলিস্তিন, গাজা, লেবাননে এভাবে গণহত্যার চলার কথা নয়। সিরিয়া বা ইয়েমেনে যুদ্ধ হওয়ার কথা নয়। ছোট বড় সংঘর্ষ রাজনৈতিক হাঙ্গামা কম বেশী সব দেশেই হয়ে থাকে। যেখানে গণতন্ত্রের চর্চা আছে সেখানেই একদল অপরদলের উপর ছড়াও হবে সেটিই স্বাভাবিক। একটি স্থিতিশীল দেশের রাজনীতির উপর হস্তক্ষেপ করে সরকারকে চাপে রেখে নানা সময় বিদেশীরা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়। বাংলাদেশের জনগন এধরনের কূটচাল ও আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আন্তর্জাতিক চাপ সম্পর্কে ভালো করেই অবগত আছে। বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে। এদেশের মানুষ কর্মঠ,পরিশ্রমী ও উদ্দোমী। এদেশের জনগন জানে দেশ ও জাতিকে কিভাবে এগিয়ে যেতে হয়। তবে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বাংলাদেশ।
গণতান্ত্রিক সরকার গনতন্ত্রের চর্চা ও ধারাবাহিকতা রক্ষার সুরক্ষা চায় জনগন। আগামীতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের কার্যক্রমের প্রতি জনগনের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।উন্নয়ন অগ্রগতিতে বাংলাদেশের সফলতার শরীক এদেশের জনগন। জনগন উন্নয়ন অগ্রগতির সুফল ভোগ করছে তাই আগামীতেও উন্নয়নের দলকেই জনগন ক্ষমতার আসনে বিজয়ী করবে।
একটি বিষয়ে পরিস্কার থাকতে হবে যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এজেন্ডা বিদেশিরা ঠিক করে দিয়েছে- এমন নজির নেই। যেটুকু গণতন্ত্র আমরা পেয়েছি, তা এখানকার মানুষের লড়াই-সংগ্রামের ফসল। ভাষা আন্দোলন থেকে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান, চব্বিশের ছাত্র গণআন্দোলন এ দেশের জনগনের আন্দোলনের ফসল। রাজনৈতিক দল ও নেতাদের উচিত জনগণের ওপর ভরসা রাখা। জনগণের ওপর বিনিয়োগ করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে অনেক কিছুর পরিবর্তন দরকার ও সংস্কার আনতে হবে। এখানে নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। নির্বাচনি পরিবেশকে সংস্কার করতে হবে। অবৈধ টাকার প্রবাহ বন্ধ হলে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। তাই জনগনের মনের ভাষা কথা অধিকার সম্পর্কে রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে। দেশের রাজনীতি দেশে চলবে। বিদেশী রাজনীতি ষড়যন্ত্র আমদানি করে দেশের রাজনীতিকে কুলোষীত করার তৎপরতা জনগন ভালো করেই বুঝতে শিখেছে। জনগন সচেতন এবং রাজনৈতিক সব কূটচাল বুঝতে পারে। অন্তর্বর্তিকালীন সরকার দুই মাস পার করেছে। জনগনের ভালো মন্দ এখনো বুঝবার ক্ষমতা তাদের হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ করতে হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি স্থিতিশীর রাজনীতির জন্য ক্যান্সার। উন্নয়ন অগ্রগতির প্রতিবন্ধক। আসুন নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে সহনশীল স্থিতিশিল রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করি। হিংসা প্রতিহিংসার মামলা হামলা পরিহার করি। আসুন সত্যিকার অর্থেই দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনৈতিক শিষ্টাচার পরিচর্যা করি।

শেয়ার করুনঃ