মাহমুদুল হক আনসারী
রাজনীতিতে মানবাধিকার সংকট বাড়ছে। রাজনীতি গণতন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনা অপরিহার্য্য অংশ। গণতন্ত্র সভা সমাবেশ মত প্রকাশের অধিকার , মানবাধিকার এইসব গুনাবলি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র। কিন্তু রাজনীতির প্রেক্ষাপট বিশ্বব্যাপি পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র রাজনীতি মানবাধিকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। একদলীয় শাসন ব্যাক্তিকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা কয়েক বছরের মধ্যেই জগদ্দল পাথরের মতো দেশ জনগনের উপর চেপে বসেছে।
মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলা, মত প্রকাশ, সভা-সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার জন্মগত ভাবে একজন নাগরিকের পাবারই কথা। কিন্তু দেশে দেশে পৃথিবীতে সেই অধিকার জনগন পাচ্ছে না। শাসক ব্যাক্তি ও দল অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। কোনো ভাবেই পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। বঞ্চিত, নির্যাতিত বৈষম্যের শিকার জনগন। কথা বলতে পারছে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য অধিকার হারা মানুষ নানা ভাবে প্রতিবাদ করছে। দেশের মানুষ নানা ভাবে অর্থনৈতিক সংকট এবং মুক্তির জন্য তাদের সর্ব শক্তি দিয়ে বেচেঁ থাকার লড়াই করছে। এক শ্রেণির পুজিঁবাদী গোষ্টী নিরীহ শান্তিকামী মজলুম মানুষের উপর অর্থনৈতিক জুলুম চালাচ্ছে। ক্ষমতার অহমিকা অত্যাচার নিপিড়ন চালিয়ে জনগনের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে জেল জুলুম গুম খুন অত্যাচারের মাধ্যমে থামিয়ে দিতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের জনগন জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছে না। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার নিরীহ জনগন পাচ্ছে না। রাষ্ট্রের শাসক গোষ্টী জনগনের অধিকার নিয়ে বারবার ছিনিমিনি খেলছে। রাজনৈতিক অধিকার, ভোট প্রদানের অধিকার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার মতো সমস্ত নাগরিক অধিকার বলতে গেলে রাষ্ট্রীয় ভাবে জিম্মি একটি কঠিন পরিস্থিতি পার করছে জনগন। মানুষ সৃষ্টি কুলের শ্রেষ্ট প্রাণী। জীবন ও মৃত্যু মানুষের জীবন সঙ্গী। মানুষকে তার কর্মের সমস্ত হিসেব নিকেষ দেয়ার একটি সিস্টেম আছে। অন্য পশুর মতো যেন তেন ভাবে মানুষ জীবন পরিচালনা করতে পারে না। পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত, রাষ্ট্র থেকে অপর রাষ্ট্র সব জায়গাতেই ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহীর সম্মুখীন হতে হবে। দুনিয়ায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেনোতেনো ভাবে পরিচালনা করলেও পরকালে অক্ষরে অক্ষরে হিসেবের সম্মুখীন হতে হবে। যেহেতু মানুষ পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ভাবে সংগবদ্ধ জীবন যাপন করতে শিখেছে সেহেতু মানুষের দলনেতা সমাজনেতা একটি রাষ্ট্র থাকবে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় সরকার কাঠামো রাষ্ট্র গঠন হবে। সে রাষ্ট্র সরকার জনগনের হয়ে তাদের সমস্ত মানবিক নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করবে।
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান আছে। সংবিধানে জনগনের মৌলিক অধিকারের বিবরণ রয়েছে। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত সরকারের কর্তব্য। সেই জায়গায় কথা হলো মূলত রাষ্ট্র যারা সরকার গঠন করে চালাচ্ছে তারা কী প্রকৃত ভাবে সেই রাষ্ট্রের জনগনের মৌলিক অধিকার পূরণ করছে ? এই প্রশ্নের উত্তর রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কেউই সঠিক ভাবে দিতে পারবে না। বিশ্বব্যাপী আজকের এই সময়ে কোথাও না কোথাও মানবজাতি তার নাগরিক ও মৌলিক রাষ্ট্রীয় অধিকারের জন্য যুদ্ধ সংগ্রাম আত্মাহুতি দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে অব্যাহত ভাবে সেই দেশের নিরীহ বিভিন্ন ধর্ম গোত্রের মানুষের উপর অত্যাচার জুলুম হত্যা চালাচ্ছে সেই দেশের সেনা সমর্থিত জালিম সরকার। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগগোষ্টীকে তাদের বাড়ি ঘর ধ্বংস করে অত্যাচার ব্যভিচার হত্যা করে তাদের জন্মগত ভিটা বাড়ী ফেলে তাদেরকে বাংলাদেশে উদ্ভাস্ত হিসেবে আশ্রয় নিতে হয়েছে। বাংলাদেশ বার্মার পাশ্ববর্তী দেশ হওয়াতে তারা জীবন বাঁচানোর জন্য এখানে পালিয়ে আসতে পেরেছে। বাংলাদেশ সরকারের মহানুভবতায় তাদের এই আশ্রয় সম্ভব হয়েছে।
আজকের এই সময়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীন নিরীহ মজলুম মানুষ গুলোকে পশু পাখির মতো ভারি অস্ত্র সস্ত্র ব্যবহার করে তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। আজকের দিন পর্যন্ত এক লাখের অধিক শিশু নারী নিরীহ জনগনকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন শত শত নিরস্ত্র নিরীহ মজলুম শান্তিকামি জনগনকে জায়ানবাদি নেতা নিয়াহু সরকার নির্মম ভাবে হত্যা করছে। দুনিয়ার মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা বৃহৎ শক্তি ইসরাইলকে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে আর্থিক ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। দুনিয়ার শান্তি প্রিয় জনগন ফিলিস্তিনের জনগনের পক্ষে প্রতিবাদ করলেও পরাশক্তি অস্ত্রবাজ ইহুদী ইসরাইল সরকার ও তাদের মিত্ররা এখনও যুদ্ধ বন্ধ করছে না।
মানবতা নিরবে নিবৃত্তে ক্রন্দন করছে। শোনার কেউ নেই। কোথায় মানবাধিকার যারা মানুসের নাগরিক অধিকার নিয়ে দেশ হতে দেশান্তর পর্যন্ত ফেরি করে বেড়ায় তারা নিজেদের মধ্যে প্রকৃত মানবাধিকার বাস্তবায়ন করতে দেখছি না। গোটা দুনিয়ার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ আজ জালিম শোষক অস্ত্রবাজ শক্তির হাতে জিম্মি। এই সময়ে মানবাধিকার নিয়ে বলা, লেখা ও প্রতিবাদ ইত্যাদি একটি গতানুগতিক বিষয়ে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। প্রকৃত পক্ষে নিরিহ জনগনের অধিকার নিয়ে দুনিয়াব্যাপী যাদের কথা বলার শক্তি কাজ করার সামর্থ্য আছে তারা কিন্তু জনগনের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ধারে কাছেও নেই। তবুও শান্তি প্রিয় জনগন মজলুম মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে চিৎকার আওয়াজ অব্যাহত রাখবে। বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আসুন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সারা দুনিয়ার জন্য কল্যাণময় পৃথিবী প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ বন্ধ করুন। অস্ত্রের অযাচিত ব্যবহার বেচা বিক্রি শান্তি প্রিয় বিশ্ববাসী চায় না। বার্মার নিরীহ রোহিঙ্গা জনগোষ্টীকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। তাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার মানবিক অধিকার বাস্তবায়ন করুন। ফিলিস্তিন ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ করুন। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ইসরাইলকে না বলুন। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ববাসী চায় না।
বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনে ইতিমধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সূত্র মতে দুই শতাধিক মূল্যবান জীবন নিহত হয়েছে। ছাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা কোটা পদ্ধতি বাতিল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বিল পাশের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতি জীবনের জন্য বাতিল সহ নয় দফা দাবিতে বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলন নিরস্ত্র সংগ্রাম করছে।
জুলাই মাস জুড়েই এই আন্দোলনে প্রায় এক হাজার ছাত্র জনতা গ্রেফতার হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছে অসংখ্য ছাত্র। নিহত আহত গুম হ্ওয়া পরিবারে কান্নার মাতম চলছে। বাংলাদেশের শাসক দমন নিপিড়ন গনগ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। পার্শ্ব বর্তি দেশ কলকাতায় বাংলাদেশের সরকারের দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সেই দেশের ছাত্র ও রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ করছে। আন্তর্জাতিক নানা দেশ সংস্থা বাংলাদেশের জনগনের বিরুদ্ধে সরকারের আইন – শৃঙ্খলা বাহিনীর দমন নিপীড়ন মামলা গুম খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্ছার হতে দেখছি। এই মূহুর্তে বাংলাদেশ সরকারের ছাত্র আন্দোলন বিরোধী যে ধরণের বক্তব্য বিবৃতি মনোভাব জাতীয় পর্যায়ে জনগন দেখতে চেয়েছিল সেটি জনগন দেখছে না। ফলে জনমনে ক্রমেই উদ্ধিগ্নতা অস্তিরতা রাজনৈতিক অস্বস্থি বাড়ছে। মানবাধিকার , মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সংকট বাড়ছে।

শেয়ার করুনঃ