নিজস্ব প্রতিনিধি

আমার অফিসটা থাকবে ওপেন, এখানে কোনো দরজা থাকবে না। সব ডিসির (উপ-কমিশনার) অফিসেও দরজা থাকবে ওপেন। এ পাঁচটা জায়গা আমি ওপেন করে দিচ্ছি এখনই। যখনই মানুষ আসবে, তখনই দেখা হবে, যদি আমি অফিসে থাকি। যে ধরনের সহযোগিতা মানুষ চায়, আমি কমিশনার হিসেবে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। গেটে ঢুকার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা, সেটা আমি দেখব। দরকার হলে গেটই রাখব না। তিনি বলেন, শুধু সাংবাদিক নয়, সব মানুষ যেন আমার কাছে আসতে পারে, সবার কথা যেন আমি শুনতে পারি, সেটা আমি অবশ্যই করব। কারও বক্তব্য যদি আমার এখতিয়ারের মধ্যে নাও হয়, তাও আমি তার কথা শুনতে চাই।

৮ জুলাই সোমবার দামপাড়া পুলিশ লাইন মাল্টিপারপাস শেডে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন থেকে কোনো থানায় ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত হবে না। প্রতিটি থানায় চারটি করে ওয়ার্ড আছে। এলাকার লোকজন থানায় এসে কেন কথা বলবে? পুলিশ তাদের কাছে যাবে। তারা তাদের কথা পুলিশের কাছে বলবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, থানার ওসিদের কোনো অপকর্মের দায় তিনি নেবেন না। ‘দুষ্টু গোয়ালের চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, কোনো থানার ওসি আমার আত্মীয় না। কাজে অসঙ্গতির জবাব তাদেরকেই দিতে হবে। কোনো প্রটোকল–গার্ড ছাড়াই বিভিন্ন থানা আমি পরিদর্শনে যাব। কখন কোন থানার ওসিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসব, সে নিজেও জানবে না। ব্যক্তির দায় কোনো সংস্থা নেবে না। আমি অন্যায় করলে সেই দায় দায়িত্ব আমার। এটা পুলিশ বাহিনীর নয়। আমি মানুষ, আমার ভুল হবে। কিন্তু ইনটেনশনাল কোনো ভুল আমার থাকবে না।

কিশোর অপরাধ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ে আমি কাজ শুরু করেছি। আমি বিভিন্ন কলেজে যাব। কলেজ–ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে প্রোগ্রাম করব। দুয়েকটা প্রোগ্রাম করার পরে কলেজের সামনে যেসব ইভটিজার থাকে তারা আর থাকবে না। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, আপনার সন্তান কোথায় যায় একটু দেখেন। সে কি সারাক্ষণ বাসায় থাকবে? সে কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, তাকে সঙ্গ কারা দেয়, সেগুলো যদি পরিবারের পক্ষ থেকে একটু নজরে রাখা হয়, তাহলে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমে যাবে। সে কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কিনা, একটু দেখেন। আমি তাকে থানায় নিয়ে গেলে তো তার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে।

ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ছিনতাই ঘটলে অবশ্যই মামলা নিতে হবে। আমি চাই মামলা বাড়ুক, মামলা পাঁচশ হলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। মামলা হলে রেকর্ড থাকে। তাহলে কাজের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মাদক ধরা পড়ছে। এটা আশার কথা নয়। এর অর্থ হলো মাদকসেবীও আছে, মাদক স্পটও আছে।

সিএমপি কার্যালয়ে সাধারণের প্রবেশাধিকার কার্যত ‘নিষিদ্ধ’ করে রাখা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, পুলিশের কাছ থেকে সাংবাদিকদের তথ্য প্রাপ্তির জটিলতা প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার বলেন, কেউ কোনো তথ্য প্রকাশ না করলে আমাকে সরাসরি ফোন করবেন। আমি আপনাদের তথ্য জানাব।

সভায় এক সাংবাদিক কমিউনিটি পুলিশ কমিটিতে থাকাদের অনেকেই বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত এবং কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করেন। এর জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, আমি কমিউনিটি ও বিট পুলিশের সাথে যারা সম্পৃক্ত, তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। কমিটির সদস্য কারা আছেন সেটা যাচাই বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছি। বিতর্কিত কেউ এখানে থাকবে না। আমি ভালো মানুষদের কমিটিতে নিয়ে আসতে চাই।

পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে পুলিশের যোগসাজশ থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির দায় সংস্থা নেবে না। এসবের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করব।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মাসুদ আহাম্মদসহ সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুনঃ