৪ মে ২০২৪ / ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৪:৩০/ শনিবার
মে ৪, ২০২৪ ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

বজ্রপাত ও জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয়

     

মাহমুদুল হক আনসারী
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে দুর্যোগের ঘটনা।বাড়ছে ক্ষতিকর নানামুখী জনদুর্ভোগ। যখন তখন আঘাত হানছে ঝড়, তুফান ও সমুদ্রের নিম্নচাপ। বজ্রপাতের সাথে ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। বজ্রপাত এড়াতে কতিপয় পরামর্শ সরকারি দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় অনেকটাই বিপর্য্স্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এপ্রিল মাস ব্যাপী সকাল থেকে প্রচন্ড রোদে জ্বলছিল প্রাণ ও প্রকৃতি। সকাল ১১টার পরেই হঠাৎই শুরু হওয়া ধমকা হাওয়া আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বাতাসের তীব্রতা কিছুক্ষণ স্থায়ী হওয়ার পরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ে। কয়েক ঘন্টা বিরামহীন বৃষ্টিতে পথ-ঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। মূহুর্তেই বজ্রপাত শুরু হয়। আর তাতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভারী বর্ষণে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তখন দুর্ভোগ বেড়ে যায় খেটে খাওয়া মানুষের। বাতাস আরম্ভ হলেই বিদুৎ চলে যাওয়ায় মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করতে হয় অফিস পাড়ায়। বজ্রপাত এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কতিপয় পরামর্শ বলা হয়েছে,(ক)ঘনঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোন দালানের নিচে আশ্রয় নিতে পারলে ভাল হয়। এসময় কোন অবস্থায় খোলা বা উচু জায়গায় থাকা উচিত নয়।(খ)ফাঁকা জায়গায় যাত্রী ছাউনি, উচু গাছপালা, বিদুৎতের খুটি ইত্যাদিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশী থাকে। বজ্রপাতের সময় এসব জিনিস থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা দরকার। (গ)বজ্রপাতের সময় বাসা-বাড়িতে থাকলে জানালা থেকে দূরে থাকার চেষ্ট করা। (ঘ)বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিড়ির র‌্যালি, পাইপ ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। এমনকি ল্যান্ড লাইন, টেলিফোন ও স্পর্শ না করা। এগুলোর সংস্পর্শেও আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (ঙ)বজ্রপাতের সময় বৈদুৎতিক সংযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। বজ্রপাতের আভাস দেখা দিলেই টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ রাখুন। বৈদুৎতিক বোর্ড থেকে অব্যবহারকৃত যন্ত্রপাতি ফ্লাগ খোলে রাখুন। (চ)বজ্রপাতের সময় গাড়িতে থাকলে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে কোন বারান্দা বা পাকা ছাউনির নিচে অবস্থান করা দরকার। এসময় গাড়ির কাচেঁ হাত দেওয়া বিপজ্জনক। (ছ)বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতো বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। বের হতে হলে পা ঢাকা জুতো পরিধান করে বের হওয়া উত্তম। (জ)বজ্রপাতের সময় রাস্তায় চলাচলে আশপাশ খেয়াল রেখে চলতে হবে। কেউ আহত হলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে বজ্রপাতে এ পর্য্ন্ত প্রায় ৭০ জনের অধিক নিহতের সংবাদ জানা গেছে। গত ৮ বছরে বজ্রপাতে বাংলাদেশে মারা গেছে ১৮০০ মানুষ। যুক্ত রাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ডঃ টমাস ডব্লিউ এর গবেষণায় বলে প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাস পর্য্ন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিঃ মিঃ ৪০টি বজ্রপাত হয়। এ মৃত্যুর হার বাংলাদেশে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হারের চেয়ে বেশী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বছরের এ সময়ে বৃষ্টিপাতের সাথে বজ্রপাতও ব্যাপক হারে হয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিঞ্জান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাওহিদা রশীদ বলেন, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। বিঞ্জানীর অনেকে মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এমনটি হচ্ছে। তবে এ মতের সাথে অনেক বিঞ্জানী দ্বিমত পোষণ করেন। বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেড়েছে জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে এটারও প্রভাব দেশে পড়েছে। বাংলাদেশে দশমিক ৭৪ শতাংশ তাপমাত্রা বেড়েছে।বিকেলে বজ্রপাত হওয়ার হার বেশী। এ বিষয়ে আবহওয়া বিঞ্জানী তাওহিদা রশীদের মতে, বজ্রপাতের ধরনই এমন। সকালের দিকে প্রচন্ড তাপমাত্রা হয় আর এতে করে অনেক জলীয় বাষ্প তৈরী হয়। এ জলীয় বাষ্পই বজ্র ঝড় ও বজ্রপাতের প্রধান শক্তি। তাপমাত্রা যত বাড়বে তখন জলীয় বাষ্প বা এ ধরনের শক্তিও তত বাড়বে। এ বিঞ্জানী বলেন, জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া মানে হল ঝড়ের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া। বছরে ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ১ শতাংশ বজ্রঝড় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছ, এটি কোন কোন বিঞ্জানী প্রমাণ করেছেন। কোন নির্দিষ্ট এলাকায় বজ্রপাত বেশী হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে এ বিঞ্জানী আরো বলেন, অঞ্চল ভেদে এটি কমবেশী হচ্ছে। বজ্রঝড় ও বজ্রপাত এপ্রিল  ও মে মাসের কিছু সময় ধরে প্রতিবছরই হয়। এ বছর কিছুটা বেশী মনে হচ্ছে। তবে ওই অধ্যাপকের মতে, বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেশী। কারণ ওখানে হাওড়ের কারণে জলীয় বাষ্প বেশী হয়। সে কারণে সিলেটের ওই অঞ্চলটিতে বজ্রপাতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। ওই প্রফেসর বলেন, বজ্রপাত প্রকৃতির একটি বিষয় এবং এটি হবেই। তবে এতে প্রাণহানি কমানোর সুযোগ আছে। বজ্রপাত যখন শুরু হয় এর তিনটি ধাপ আছে। প্রথম ধাপে বিদুৎ চমকানি বা বজ্রপাত শুরু হয় না। প্রথমে মেঘটা তৈরী হতে থাকে এবং সেসময় আকাশের অবস্থা ঘন কালো হয় না। একটু কালো মেঘের মতো তৈরী হয়। সামান্য বৃষ্টি ও হালকা বিদুৎ চমকায় তখন। তখনি এ সময় মানুষকে সচেতন হতে হয়। প্রতিটি দুর্যোগে একটি নির্দিষ্ট সময় আছে এবং সেসময় সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের সচেতন হওয়া উচিত। বাইরে থাকলে যখন দেখা যাবে আকাশ কালো হয়ে আসছে তখনি নিরাপদ জায়গায় যেতে হবে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তখন অন্তত ৩০ মিনিট পাওয়া যায়। বজ্রপাত প্রকৃতির একটা ধারাবাহিক খেলা। প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ বজ্রপাতের অন্যতম কারণ। সমাজ ও রাষ্ট্রের উচিত হবে প্রকৃতির যথাযথ সংরক্ষণ লালন ও পালনের ব্যবস্থা করা। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে কখনো সমাজ ও পরিবেশ টিকে থাকতে পারে না। তাই এ সময়ে আমাদেরকে বেশি করে প্রকৃতি বান্ধব পরিবেশ তৈরীতে গুরুত্ব দিতে হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply