২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৯:১০/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৯:১০ পূর্বাহ্ণ

একরামুল হত্যা নিয়ে আবেগ ও বাস্তবতা:মাদক অভিযান কে সাধুবাদ জনগনের

     

মো.ফরিদ উদ্দিন
সম্প্রতি দেশ থেকে মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশে মাদক বিরোধী অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।এই অভিযানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্ধুকযুদ্ধে এবং নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে মাদক ব্যবসায়ী নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। সারাদেশে প্রায় দশ হাজার সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাত দিয়ে জানা গেছে।
এই অভিযানকে দেশের আপামর জনসাধারণ সাধুবাদ জানালেও এই অভিযানকে শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। মাদক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন মাদকের সাথে জড়িত যে দলেরই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সম্প্রতি মাদক বিরোধী অভিযানে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কমিশনার একরামুল হক। একরাম নিহত হবে পর পরই একটি মহল মাদক বিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একরামকে নির্দোষ দাবি করে আসতেছে।একরাম নিহত হওয়ার পর অনুসন্ধানে একরামের মাদক সংশি¬ষ্টতা সম্পর্কে ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত দেশের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় প্রথম দিকে ছিল একরামের নাম। একরাম মূলত দেশের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাহেদুর রহমান নিপু, আব্দুর রহমান, এবং মোঃ ফয়সালের সাথে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ফয়সাল স্থানীয় সংসদ সদস্য বদির ভাই এবং নিপু বদির ভাগ্নে।
একরাম ইয়াবা ব্যবসায় যুক্ত হন ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের দিকে উল্লে¬খিত ইয়াবা গডফাদারদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠার সুবাধে তাদের সাথে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়ে। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হওয়ার পর পরই একসময়ের চালচুলোহীন একরাম গড়ে তুলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে নিহত হওয়ার আগে একরাম টেকনাফে দুইটি বিলাস বহুল বাড়ির মালিক ছিল যার মধ্যে একটি বাড়ি নির্মাণাধীন। এছাড়া ইয়াবা ব্যবসার সুবাধে চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় একটি করে বিলাস বহুল ফ্ল্যাটেরও মালিক বনে যান তিনি। বাড়ি ছাড়াও একরামের দুইটি দামী গাড়ি ছিল। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি মোটরবাইকের প্রতি দুর্বলতা ছিল একরামের। সেজন্য কিছু দিন পর পরই নতুন নতুন মোটরবাইক ব্যবহার করতে দেখা যেত।
ইয়াবা পাচারের সুবিধার লক্ষ্যে টেকনাফের বিভিন্ন ট্রাক মালিক এবং পরিবহন ব্যবসায়ীদের সাথেও সখ্যতা ছিল একরামের। এদের মধ্যে উলে¬খযোগ্য হল মোঃ ইসমাইল, জসিম উদ্দিন, মোঃ শফিক, মোঃ সাব্বির আহমেদ সাবু, মোঃ শওকত সহ আরো অনেক পরিবহন ব্যবসায়ী।
অনুসন্ধানে জানা যায় এদের মধ্যে জসিম উদ্দিন একসময় ট্রাকের হেলপার ছিল এবং পরবর্তীতে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হয়ে ৩/৪ টা ট্রাকের মালিক হয়ে যায়।
একরাম মূলত বাংলাদেশের সাথে শীর্ষ ইয়াবা ডিলারদের সাথে মাঠ পর্যায়ের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করত। একরামুলের নেতৃত্বেই মূলত উল্লে¬খিত ইয়াবা ডিলারদের ইয়াবা মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ঢাকা চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত।
মাঠ পর্যায়ে যারা ইয়াবা ব্যবসা করত তাদের বিভিন্ন আইনি ঝামেলায় আশ্রয় দিতো একরাম। একরাম তার নিজের এবং তার নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্য ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য নিয়মিত ইয়াবা গডফাদারদের সাথে যোগাযোগ করত। মাঠ পর্যায়ের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার সাহেদুর রহমান নিপুর কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও পালন করত একরাম।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত একরামুল হককে মাদক ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমগুলো। পূর্বে এমন সংবাদ প্রকাশ করলেও এখন বলা হচ্ছে, একরামুল মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। ফলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশে¬ষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় দিন দিন সাংবাদিকতার ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
২৬ মে দিবাগত রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক র‌্যাব-৭ বন্দুকের গুলিতে নিহত হন। একরামুলের স্ত্রী আয়েশা বেগমের দাবি, একরামুলকে ডেকে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। ঘটনার আগমুহূর্তে স্ত্রী ও মেয়েদের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথনের চারটি অডিও রেকর্ড (অযাচাইকৃত) প্রকাশ হলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। অবশ্য র‌্যাব দাবি করছে, একরামুলকে নিয়ে অভিযানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীদের গুলির মুখে পাল্টা গুলি চালানো হয়। পরে ঘটনাস্থলে একরামুলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। একরামুল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বলেও দাবি করে র‌্যাব।
তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, একরামুলের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নিহত কমিশনার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না। এই তথ্য গত কয়েক দিনে দেশের সব পত্রিকা, অনলাইন ও টেলিভিশনে এসেছে। অথচ বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশন এর আগে একরামুল হককে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম তাকে ‘ইয়াবার গডফাদার’ বলেও চিহ্নিত করেছে। আর এতে গণমাধ্যমের ভূমিকা, বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
২০১০ সালে কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গোয়েন্দা বাহিনীর এক কর্মকর্তার সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় ওই তালিকায় একরামুলের নাম ওঠে বলে দাবি করেন তার স্ত্রী আয়েশা বেগম। পরবর্তী সময়ে পুলিশের তদন্তে একরামুলের ইয়াবা ব্যবসার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং হালনাগাদ তালিকা থেকে তার নাম বাদ পড়ে বলে জানান টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিৎ বড়ুয়া।ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে থানায় কোনো রেকর্ড নেই বলেও জানান তিনি। অথচ ২০১২ সালের পর থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে কাউন্সিলর একরামুল ইয়াবা ব্যবসায়ী। বিশে¬ষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি সংবাদই প্রকাশিত হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা ধরে। এমনকি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দাবি করা হলেও তাতে তালিকার বাইরের কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি সংবাদমাধ্যমগুলো।
২০১২ সালের আগস্টে ইয়াবা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করে ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ‘তালাশ’। ওই প্রতিবেদনে ‘ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে ছয়জনের নাম, ছবি ও সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়। তাদের মধ্যে ছয় নম্বরে ছিল একরামুল হকের নাম ও ছবি। তাতে দাবি করা হয়, একরামুলের দুটি গাড়ি, টেকনাফে দুটি বাড়ি, চট্টগ্রামে একটি বাড়ি ও ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। কিন্তু এই সম্পদের তালিকার সূত্র দেওয়া হয়নি। দুই বছর পর ইয়াবা নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয় যমুনা টেলিভিশনের ‘৩৬০ ডিগ্রি’ অনুষ্ঠানে। তাতেও একরামুলকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বলে দাবি করা হয়।
একরামুল হক নিহত হওয়ার পর সংবাদ দুটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। অনুসন্ধানী ওই প্রতিবেদনে কী অনুসন্ধান করা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। একরামুল হক যে বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন, সেটি দোতলা এবং তার অর্ধেকের কাজও শেষ হয়নি। টাকার কারণেই কাজ শেষ করতে পারেননি বলে দাবি করেন তার ভাই এহতেশামুল হক। তিনি জানান, তার ভাই কষ্টে জীবনযাপন করেছেন। বাড়ির এখনো বেশির ভাগ কাজই শেষ করতে পারেননি। টাকা থাকলে এসব এভাবে পড়ে থাকত না।
কক্সবাজারের সদর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘একরামুল হক খুবই সাধারণ জীবনযাপন করত। তার ১০ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখলে, তার বাড়িঘর দেখলে সব পরিষ্কার হবে। ইয়াবা ব্যবসায়ী হলে জীবনযাপনে পরিবর্তন দেখা যায়। কিন্তু একরামের ১০ বছরে এমন কোনো পরিবর্তন ছিল না।স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, একরামের গাড়ি তারা কোনোদিন দেখেননি। তার একটা মোটরসাইকেল ছিল, তা দিয়েই যাতায়াত করতেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা হয় ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ‘তালাশ’-এর প্রধান ও উপস্থাপক মনজুরুল করিমের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, ইয়াবাকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা ধরে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে এবং তালাশ টিম যাচাই করেছে।সম্পদের পরিমাণের সূত্র কী, জানতে চাইলে মনজুরুল করিম দাবি করেন, সেটাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা থেকেই নেওয়া। তালিকার সঙ্গে আরও কিছু তথ্য থাকে, সেখান থেকে নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধান না করে কীভাবে একরামুল হককে ‘ইয়াবার গডফাদার’ হিসেবে প্রচার করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও বাংলা ট্রিবিউনের বার্তাপ্রধান হারুন উর রশীদ। তিনি বলেন, ‘তার (ইকরামুল) সম্পদের যে হিসাব তারা প্রচার করেছে, তা কি তদন্তকরে দেখেছে? তালিকা বা নিজস্ব সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই না করে কি প্রচার করা যায়?’ একরামুল হককে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তার স্ত্রী আয়েশা বেগম। যদি যাচাই-বাছাই ছাড়াই তা প্রচার হয়ে থাকে, তাহলে এই সাংবাদিকতা হুমকির মুখে জানিয়ে হারুন উর রশীদ বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা অন্য কেনো সূত্র থেকে এ রকম তালিকা ধরে হরহামেশাই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তার পরিণতি যে কত মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক হতে পারে একরামুলের নিহত হওয়া তার প্রমাণ।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই তালিকা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক তালিকার বরাত দিয়ে বিভিন্ন সময় একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, অনলাইন পোর্টাল রাইজিংবিডিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এসব প্রতিবেদনে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে একরামুল হকের নাম এসেছে এবং তালিকার বাইরে আলাদা কোনো তথ্য বা জোরালো কোনো নথি ছিল না।
আর কয়েক বছর পর এসে স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের বরাত দিয়ে এসব সংবাদমাধ্যমই বলছে, একরামুল হক মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। কেউ কেউ বলছে, তাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। কেউ বলছে, ভুল তথ্য দিয়ে একরামুলকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকতা করা হারুন উর-রশীদ বলেন, ‘সাংবাদিকের কাজ অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য তুলে ধরা। কাউকে তালিকার ভিত্তিতে মাদক ব্যবসায়ী বা অপরাধী বলে চিহ্নিত করে মিডিয়া ট্রায়াল করা নয়। আর তা যদি করা হয়, তাহলে সাংবাদিকতা আর সাংবাদিকতা থাকে না। তখন বলতে হবে কেউ করে বন্দুক দিয়ে, কেউ করে কলম বা মিডিয়া দিয়ে, কিন্তু যার কাজ তাকে করতে হবে।’
এসব তালিকা তৈরির সময় বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ থাকে বলে মন্তব্য করেন হারুন উর রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এসব তালিকা তৈরির পিছনে আছে নানা হিসাব। রাজনীতি, ঘুষ বাণিজ্য, প্রতিপক্ষকে ঘায়েলসহ নানা উদ্দেশ্য।’
দেশে সাংবাদিকতায় ন্যুূনতম বস্তুনিষ্ঠতা চর্চাও হচ্ছে না বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, ‘যখন কেউ ভিক্টিম হয় বা হত্যার শিকার হয়, তখন তার নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে একটা ধারণা কিন্তু পাওয়া সম্ভব। অথচ সেটা হচ্ছে না।’
যেকোনো তথ্যই সাংবাদিককে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করতে হবে জানিয়ে ফাহমিদুল বলেন,‘সাংবাদিককে কোয়েরি (জিজ্ঞাসা) করতে হবে, ক্রসচেক (পুনর্যাচাই) করতে হবে, অন্যান্য সূত্র ধরে ভেরিফাই (নিশ্চিত) করতে হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা ধরে একজনকে গডফাদার বা অপরাধী বলে চালিয়ে যাওয়া সাংবাদিকতা নয় বলে মন্তব্য করেন ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ধরনের রিপোর্টিং দীর্ঘদিন ধরেই দেখছি। এ রকম একপেশে সংবাদের কারণে পরিস্থিতিও ভিন্ন হচ্ছে।’
অন্যদিকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ শব্দটি লিখেই সাংবাদিকের দায়িত্ব শেষ নয় বলে জানান ফাহমিদুল হক। তিনি মনে করেন, এই ধরনের ঘটনার খবর আর কোনো সূত্র থেকে পাওয়া যায় না। তাই পুলিশ বা র‌্যাবের কথার ওপরও নির্ভর করা ঠিক নয়। এর বাইরে আরও কিছু করার রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভালো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা সম্ভব বলে মনে করছেন ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, ‘ঘটনা তো বাংলাদেশের ভেতরে ঘটছে। বিষয়টা নিয়ে ভালো সময় নিয়ে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট হওয়া দরকার। সাংবাদিকরা সেই জায়গায় কাজ করতে পারেনি। প্রত্যেকটা ঘটনা ভেরিফাই করা না পারলেও একটার সূত্র ধরে বাকিগুলোও ট্র্যাক করা সম্ভব। এগুলো তো সম্ভব, কিন্তু হচ্ছে না। না হলে সাংবাদিকতা কেন?’
ফাহমিদুল হক বলেন, ‘একদিকে যেমন সেন্সরশিপ আছে, তেমনই আরেকদিকে সাংবাদিকতারও ব্যর্থতা আছে। পরবর্তী সময়েও আমরা ইনভেস্টিগেটিভ করছি না। ফলে সাংবাদিকতা যে ব্যর্থ, তা বারবার প্রমাণিত হচ্ছে।’
ফাহমিদুল হক ও হারুন উর রশীদ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি করা বন্দুকযুদ্ধকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উলে¬খ করে ফাহমিদুল হক বলেন,‘অডিওর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, এটা কতটা ভয়াবহ একটা ব্যাপার। কেউ যদি অপরাধী হয়, তাকে এভাবে মারা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে, গ্রেফতার করতে হবে, দীর্ঘসূত্রিতা থাকলেও আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
র‌্যাব-৭ এর দাবি করেছে, একরামুল ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তবে ওই রাতের গুলি করার মুহূর্তের প্রকাশ হওয়া অডিওতে উপস্থিত লোকজনের কথাবার্তা ও কার্যকলাপে স্পষ্ট হয়েছে, সেখানে কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ অপরাধীর বিচার করা নয় বলে মনে করছেন বাংলা ট্রিবিউনের বার্তাপ্রধান হারুন উর রশীদও। তিনি বলেন,‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করা তালিকা দিয়ে তো কাউকে বিচার করা যাবে না। এই তালিকা দিয়ে তো বিচারিক আদালত বিচারের রায় দেবেন না। কেউ অপরাধী কি অপরাধী না, তা আদালতই নির্ধারণ করবে। তালিকা ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাতেই পারে। কিন্তু আটকের পর সুনির্দিষ্ট অভিযোগসহ আদালতে পাঠানোই তাদের কাজ। বিচার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়। সেটা করলে তাকে বলা যায় অবিচার।’
‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’র কাজে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছেন ফাহমিদুল হক। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘যে অন্যায়টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এখন একপাক্ষিকভাবে যদি রিপোর্ট হয়, তাহলে একই অন্যায় তারাও করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাচ্ছে যে, বিচারবহির্ভূত হত্যায় মিডিয়াকে ব্যবহার করা এবং মিডিয়াও ব্যবহৃত হচ্ছে। সে রকম একটা পরিস্থিতিও এখন চলছে। এসব ক্ষেত্রে মিডিয়াকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে-সুত্র, প্রিয়.কম.।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জোর দিয়ে সংবাদটি প্রচার করছে পাশাপাশি ফেসবুক কে ব্যাপক হারে লেখালেখি শুরু হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশ মাদক মুক্ত দেশ হিসাবে আত্ব:প্রকাশ করুণ। নির-অপরাধ মানুষ যেন হয়রানি না হয়।সঠিক তথ্য সঠিক সময়ে অভিযান পরিচলনা করার জন্য সংশ্লিষ্টরাদের নিকট আমাদের প্রত্যশা রহিল। বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ মাদক মুক্ত অভিযানে সাধারন মানুষ সাধু জানিয়েছেন সেটা যেন কেউ নসাৎ করতে না ,সে দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে এবং দেশপ্রেম সাজগ্র করে, সামনে দিকে এগিয়ে যেতে হবে আর আজ থেকে সবাই এক যোগে মাদক কে না বলুন। মাদক সন্ত্রাস নিপাত যাক, সেনার বাংলা মাদক থেকে মুক্তি পাক। সাংবাদিক,কলাম লেখক.

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply