২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১০:১০/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ১০:১০ অপরাহ্ণ

হাসিনা-মোদি বৈঠক :কি পেল বাংলাদেশ!

     

মো.ফরিদ উদ্দিন
শান্তিনিকেতনে‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন এবং হাসিনা-মোদি বৈঠক,কি পেল বাংলাদেশ! বাংলাদেশ-ভারত একেই মায়ের দু’ ভুমি সন্তান’ সংসারের আয়-ব্যয় হিসাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা পৃথক হলেও মনের বিভক্ত এক সুতায় গাথা। তাই তো বিপদে আপদে ভারতকে আমাদের পাশে পাই।একেই বলে বন্ধুত্ব,দু’দেশের সু-সর্ম্পক দীর্ঘায়ু হলে বিশ্বায়নে এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ ও ভারত।আমরা যদি বাংলাদেশ একটি ডিমের সাথে তুলনা করি, তাহলে উপর নিরাপত্তা আবরণ হলো ভারত।বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসাবে আত্ব:প্রকাশ করতে হলে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত কে বেশি প্রয়োজন বলে সুশীল সমাজ মনে করেন।শেখ সাদী (র:)একটি উক্তি পাঠকদের পুনরায় মনে করিযে দেই।একদিন শেখ সাদী(র:),মাটি কে প্রশ্ন করল’হে মাটি তোমার গায়ে এত খুসব কেন!তখন জবাবে মাটি বললো” আমি ছিলাম আতরের বহুকালধরে তাই এত….।”একটি রাষ্ট্র যখন তার পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র সাথে দীর্ঘদিন সু-সম্পর্ক বজায় রাখলে সুফল বয়ে আনবে অচিরেই। আমরা যদি পুরানো দিনের দিকে নজর দেই, তাহলে বিষয়টি সহজ ভাবে উপলদ্ধি করতে পারি।ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক ভিত রচিত হয়েছিল মূলত ১৯৭১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সরকার এবং সেদেশের জনগণের সার্বিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত পর দুই দেশের সরকার বদল এবং বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের উত্থান পতন হয়েছে কিছুটা। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের কল্যাণে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েই বেশি হয়েছে।
১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে বিএনপির কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে ভারতের সাথে ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি করতে ব্যর্থ হলেও ৯৬ এ ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার সেই চুক্তি বাস্তবায়ন করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সীমান্তে সংঘর্ষের জের ধরে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের আবারো অবনতি হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক আবারো পুনঃস্থাপিত হয়। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক সব থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। সুসম্পর্কের জের ধরে দুই দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধান এবং দুই দেশের উন্নয়নে অনেকগুলো চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে যা বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বড় ধরণের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষকরা। দুই দেশের মধ্যে স্থল ও সমুদ্র-সীমা নির্ধারণ, ছিটমহল বিনিময়, প্রতিরক্ষা চুক্তি ইত্যাদি বিষযয়ে অগ্রগতি একটি বড় অর্জন।
সম্প্রতি ভারতের শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন এবং সেখানে ‘বাংলাদেশ ভবন’ এর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরসূচীতে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার কোনো কথা না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রত্যাশার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাঁর বক্তৃতায় এবং মোদির সাথে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।
দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার নতুন অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে বিশ্বের জন্য মডেল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামীতেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ভারতের পার্লামেন্টে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল, ভারতের প্রত্যেকটা দলের সংসদ সদস্যরা সকলে মিলে, দল-মত নির্বিশেষে সকলে মিলে এক হয়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিলটি পাস করে দিল। অনেক দেশে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে যুদ্ধ বেঁধে আছে। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে, ভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে, আনন্দঘন পরিবেশে আমরা ছিটমহল বিনিময় করেছি।”
বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনকে বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রগতি, সমৃদ্ধি, শান্তি ও ঐক্যের জন্য দরকার ভারত এবং বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা। শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন, তা অর্জনে ভারতের ‘পূর্ণ সমর্থন’ থাকবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মোদী।
তিনি বলেন “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশেকে ২০৪১ সালের মধ্যে শিক্ষিত রাষ্ট্র করে তোলার যে লক্ষ্য নিয়েছেন, এ তার দূরদৃষ্টি। এই লক্ষ্য অর্জনে ভারতের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।”সামাজিক খাতে বাংলাদেশ যে উন্নতি দেখিয়েছে, তা অনুকরণীয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তিনি বলেন,“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য যেমন গর্বের ভারতের জন্যও গর্বের বাংলাদেশ ভবন নিয়ে উচ্ছ্বসিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার খুব ভালো লেগেছে, এটা দারুণ হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ছে বার বার। কারণ ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের সম্পর্ক সেই ১৯৭১ সাল থেকে।”ভারতে কবি নজরুল ইসলামের নামে বিমানবন্দর, একাডেমি, তীর্থ প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে তুলে ধরে মমতা বলেন,“আমরা বঙ্গবন্ধুর নামেও একটি বঙ্গবন্ধু ভবন করতে চাইৃ যখনই আমাদের সুযোগ দেবেন, আমরা করব।”
বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন শেষে শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গীদের সূত্রে জানা গেছে উক্ত বৈঠকে তিস্তা সমস্যা সমাধান সহ বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দুই প্রধানমন্ত্রীর মাঝে। মোদি অচিরেই তিস্তা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলাপকালে শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদিকে মিয়ানমারের উপর চাপ বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন।এছাড়া বৈঠকে ভারতের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সফরের দ্বিতীয় দিন আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে এটি গর্বের বিষয়।
জল,স্থল এবং অন্তরীক্ষে আজ সমানভাবে নিজেদের পদচারণা রেখে যাচ্ছে অদম্য বাংলাদেশ। জল, স্থল ও অন্তরীক্ষে স্বমহিমায় নিজের নামাঙ্কিত করছে দুর্বার উন্নয়নের ধাবিত এই দেশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৭ হাজার ১৬০ একর জমি বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই অর্জনের মাধ্যমে ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের অধীনে চলে আসে। নতুন জীবন, নিজের দেশের নাগরিকত্ব পান ছিটমহলে বসবাসকারী ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন মানুষ। মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু -১’ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ৫৭ তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য বাংলাদেশ। ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা চুক্তিতে আজ বিশাল সমুদ্র সীমার মালিক এই দেশ। আজ দেশে এবং দেশের বাহিরের প্রতিটি কোণায় বাংলাদেশের জয়ো-গান।
ভারতের সঙ্গে সমুদ্র জয়ে বিরোধপূর্ণ ২৫,৬০২ বর্গকিলোমিটার এলাকার ভিতরে বাংলাদেশের ১৯,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এবং ভারতের ৬,১৩৫ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা রয়েছে ২০০ নটিক্যাল মাইল। ভারত এবং মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র জয়ের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সামুদ্রিক এলাকার মালিক বাংলাদেশ এবং প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ সম্পদের ও মালিক। সমুদ্র বিজয়ের এই বিপুল সম্ভাবনা বাংলদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো গতিশীল করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও সমুদ্রের নিচে অনেক সামুদ্রিক প্রাণী যেমন: মাছ,শৈবাল ইত্যাদি। সামুদ্রিক মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানীকরণের প্রক্রিয়া সচল হলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
বিশ্বে অনেক দেশে সামুদ্রিক শৈবালের চাহিদা ব্যাপক। জাপান, চীন, কোরিয়া, ফিলিপাইন বিভিন্ন দেশে শৈবাল এক অনন্য অর্থকরী সবজি। আমাদের দেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠী শৈবাল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। নানারকম পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, খনিজ ও আয়োডিনের বিশাল আধার এই সামুদ্রিক শৈবাল। টোকিও সর্বপ্রথম ১৬৭০ সালে শৈবাল চাষ শুরু করে এবং ধীরে ধীরে তা অর্থকরী সবজি হিসেবে রূপান্তরিত হয়।
আমাদের দেশের সমুদ্র সীমায় রয়েছে এরকম অনেক শৈবাল এবং মাছ যার মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। দেশে পূরণ হবে পুষ্টির চাহিদা। গড়ে উঠতে পারে চাষকৃত একটি শৈবাল শিল্প।অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিপুল পরিমানের গ্যাস ক্ষেত্র।
নীল অর্থনীতিকে ঘিরে গড়ে উঠছে বিভিন্ন অবকাঠামো যেমন: জাহাজ নির্মাণ শিল্প, কোস্টাল শিপিং, পরিবেশবান্ধব জাহাজভাঙ্গা শিল্প, সামুদ্রিক জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার, সামুদ্রিক লবন উৎপাদন, সামুদ্রিক নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, সামুদ্রিক পর্যটনের বিভিন্ন খাত, সমুদ্র অর্থনীতিকেন্দ্রিক মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং পরিকল্পনা প্রণয়নসহ বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়, দূরদর্শী নেতৃত্বর ফলে দেশ আগাচ্ছে অদম্য এক সাফল্যের দিকে। দেশ আজ সকল স্তরে উন্নত হয়েছে, লাভ করেছে সফলতা। বিশ্ব এক সময় যে দেশকে দরিদ্র ও ক্ষুধায় জর্জরিত দেশ হিসেবে চিনত, সেই দেশ আজ নিজ অর্থায়নে করছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। দেশের দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সহ আজ পুরো দেশের মানুষ আনন্দিত ,গর্বিত। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রেখে সরকার দেশকে নিয়ে যাবে অভাবনীয় এক সাফল্যের দিকে এই প্রত্যাশা দেশের সকল মানুষের। এদিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের গবেষণা সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন বলেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য কারো ক্ষমতায় আসার বিষয় টিকে ভারত উদ্বেগের চোখে দেখে।ভারত সরকারের অনেকেই দুই দেশের মঙ্গলের জন্য আওয়ামীলীগ সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায় বলেও বিভিন্ন সংস্থার বরাত দিয়ে জানা গেছে।-সাংবাদিক,কলাম লেখক

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply