২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ভোর ৫:৩১/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় এশায়াত সম্মেলনে লাখো নবী প্রেমিকের ঢল

     

 

ইতিহাসের সকল শান্তি ও কল্যাণের উৎস তরুণেরাই হচ্ছে দেশ ও জাতির সেরা সম্পদ, মুসলিম উম্মাহর প্রাণ। তরুণেরা যদি তরিক্বত চর্চায় আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে কোরআন-সুন্নাহ্র আলোকে জীবন গঠন করে তাহলে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীটাই হবে শান্তির আবাসভূমি। অগনিত বিপথগামী তরুণদের হেদায়তের পথে এনে ভয়ংকর ও সন্ত্রাসের জনপদকে শান্তির কাননে পরিণত করার এক সফল আধ্যাত্মিক রূপরেখা দিয়ে গেছেন কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা হযরত গাউছুল আজম (রাঃ)।
আজ ২৭ জানুয়ারি শনিবার রাজধানী ঢাকার গুলিস্থানের কাজী বশির মিলনায়তন সম্মুখস্থ ময়দানে ঐতিহাসিক এশায়াত সম্মেলনে উপস্থিত লাখো মুসলমানের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মহান মোর্শেদ আওলাদে রাসূল হযরতুলহাজ্ব অধ্যক্ষ  শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ আহমদী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী এসব কথা বলেন।
তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, আল্লাহ ও নবীজীর প্রতি আনুগত্যতার অভাব, নবীজির সুন্নাত ও আদর্শ হতে বিচ্যূতি এবং সর্বোপরি কোরআন-সুন্নাহ্র আমল হতে দূরে যাওয়াতে মুসলমানরা আজ সর্বত্র লাঞ্চিত ও অপমানিত। ফিলিস্তিন, মিয়ানমার সহ বিশ্বব্যাপী দেশে দেশে মুসলমানরা চরমভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, চলছে মুসলিম নিধন। এ সংকট মোকাবেলায় মুসলিম বিশ্বকে একতাবদ্ধ হতে হবে, মুসলমানদের বিশেষত মুসলিম যুব সমাজকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা শরীয়ত ও তরিক্বতের অনুশীলন করতে হবে এবং কুরআন-সুন্নাহ্র পূর্ণ অনুসারী হতে হবে।
পবিত্র জশ্নে জলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) উদ্যাপন ও কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্ল¬াহ আওলাদে মোস্তফা খলিফায়ে রাসূল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রাঃ) স্মরণে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ তরিক্বতের এ সম্মেলনের আয়োজন করে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ।
প্রধান অতিথি কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম (রাঃ)’র বর্ণাঢ্য জীবন, কর্ম ও অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, এ মহামনীষী ইসলামের খেদমতে, সুন্নাতে মোস্তফার প্রচারে, ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারসহ সকল ক্ষেত্রেই রেখেছেন সমান অবদান। যিনি মুসলিম মিল্ল¬াতের কল্যাণে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ তরিক্বতের প্রবর্তন করেন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর এর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক  এ এম এম বাহাউদ্দিন, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর এ. কে. এম. ছায়েফ উল্যা, রাজশাহী মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসা অধ্যক্ষ হযরতুলহাজ¦ আল্লামা মোকাদ্দছুল ইসলাম, ভবানীপুর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা অধ্যক্ষ হযরতুলহাজ¦ মোহাম্মদ হাসান মাসুদ, মোমেন শাহী ডি. এস. কামিল এম. এ. মাদরাসা অধ্যক্ষ আল্লামা ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস খাঁন, মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ কানাডা শাখা সচিব আলহাজ্ব মীর মোহাম্মদ কায়কোবাদ, কানাডা আল-ফজল মুনিরী গাউছুল আজম জামে মসজিদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ।

আলহাজ্ব এ এম এম বাহা উদ্দীন বলেন, আধ্যাত্মিক কর্মবীর অধ্যক্ষ আল্ল¬ামা ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্ল¬াহ্ আহমদী শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও কুড়িয়েছেন অনেক খ্যাতি ও সম্মান। পথভ্রষ্টদেরকে তরিক্বতের মাধ্যমে শান্তির পথে ফিরিয়ে আনতে তিনি নিরলসভাবে আধ্যাত্মিক প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রফেসর ড. ছায়েফ উল্যা বলেন, কাগতিয়া দরবারের মোর্শেদে আজম অধ্যক্ষ  ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী নিজস্ব উদ্যোগে ও অর্থায়নে দেশে মাদ্রাসা নির্মাণ, অনেক হিফজুল কুরআন বিভাগ চালু ও পরিচালনার মাধ্যমে ইসলামের খেদমতে যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তা অন্যদেরকেও প্রেরণা যোগাবে।

অধ্যক্ষ হাসান মাসুদ বলেন, অধ্যক্ষ  ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী তরিক্বতের প্রচার-প্রসারের পাশাপাশি দেশে ইসলামী শিক্ষার প্রসারেও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। এ নিবেদিতপ্রাণ প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের মেধা, শ্রম ও প্রচেষ্টায় তাঁরই পরিচালিত কাগতিয়া কামিল এম.এ. মাদ্রাসা শুধু চট্টগ্রামে নয়, পুরো দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ও আধুনিক মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, হযরত গাউছুল আজম (রাঃ)’র যোগ্য উত্তরসূরী মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী একজন দূরদর্শী রূহানী দার্শনিক। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি তরিক্বত চর্চা করে তাহলে একাডেমিক ডিগ্রি অর্জনের সাথে সাথে তারা উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন আলোকিত মানুষের ডিগ্রিও অর্জন করতে পারবে।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, ড. শহীদুল্লাহ কলেজ প্রভাষক মুস্তাকিম আহমদ, অ্যাডভেন্ট স্টীল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল বাসেত।

সম্মেলনে দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, পীর-মাশায়েখ, জাতীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বহু আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান উপস্থিত ছিলেন। গত সপ্তাহজুড়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবী, শারজাহ ছাড়াও ওমান, বাহরাইন, কাতারসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়া থেকে কাগতিয়া দরবারের শত শত অনুসারী বাংলাদেশে আসতে থাকে। ঐদিন ভোর থেকেই দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা থেকে বাস, ট্রেনযোগে থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান সম্মেলনস্থল গুলিস্থানের কাজী বশির মিলনায়তন সম্মুখস্থ ময়দানে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মাগরিবের আগেই সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে এর আশপাশের এলাকা ও সড়ক লোকে লোকারন্য হয়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এদিকে এই এশায়াত সম্মেলনকে ঘিরে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রাজপথ ও দালানে আলোকসজ্জিত ও ফেস্টুন দ্বারা সাজানো হয়। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে এমনকি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরেও তোরণ উত্তোলন করা হয়। চারিদিকে যেন এক সাজ সাজ রব পড়ে।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন  মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম হানফি,  মুফতি আনোয়ারুল আলম সিদ্দিকী,  মোহাম্মদ আশেকুর রহমান,  এমদাদুল হক মুনিরী,  মোহাম্মদ সেকান্দর আলী ও  মুহাম্মদ ফোরকান।
মিলাদ-কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম (রাঃ)’র ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply