২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১০:২১/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত চরম দুর্ভোগে বানবাসীরা ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী ৪ দিনে ১২ জনের মৃত্যু

     

 

সাইফুর রহমান শামীম
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি ধীর গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। সরকারী তথ্যানুযায়ী জেলার ৯ উপজেলায় ৬০ ইউনিয়নের ৮শ ২০টি গ্রামের ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বানভাসী মানুষেরা গত ৫ দিন ধরে ঘর-বাড়ী ছেড়ে গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়েছে পাকা সড়ক, উচু বাঁধ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দেওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে বানভাসীদের।
গত চার দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ১১ জন ও সাপের কামড়ে ১ জনসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই শিশু।
কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে ৪টি পয়েন্টে ধ্বসে যাওয়ার এখনো বন্ধ রয়েছে সোনাহাট স্থল বন্দরসহ নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
৪শ ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে থাকায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন সবজি ক্ষেত।
জেলা মৎস সম্পদ কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে ভেসে গেছে জেলার ৮ হাজার পুকুরের প্রায় ১২ কোটি টাকার মাছ।
বিজিবি’র পক্ষ থেকে গত ৪দিন ধরে কুড়িগ্রামের ৪৫ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আউয়াল উদ্দিন আহমেদ বন্যার্তদের মাঝে প্যাকেজ ত্রান বিতরন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। কুড়িগ্রাম পৌরসভার পক্ষ থেকে মেয়র আব্দুল জলিল পৌরসভা এলাকার প্রায় ৫ হাজার বানভাসীর মাঝে খেচুরির প্যাকেট বিতরন করেছে। ত্রান বিতরন করছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মোঃ জাফর আলী। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মোটর মালিক সমিতির সভাপতি শিল্পপতি পনির উদ্দিন আহমেদসহ ব্যাক্তিগত ভাবে অনেকেই ত্রান তৎপরতা শুরু করছেন। কুড়িগ্রাম জেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমের ব্যক্তিগত ১১গ বানভাসী ১১’শ বাড়িতে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন।
সরকারী বে-সরকারীভাবে সামান্য ত্রান তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চরাঞ্চলের দুর্গম এলাকা গুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এসব এলাকায় ত্রান নিয়ে যাচ্ছেন না কেউ। ফলে ত্রান সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার মানুষের।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের শাহ কামালের স্ত্রী জমিরন জানান, শুনি অন্য জায়গার মানুষ ত্রান পায় কিন্তু আমরা পাই না। কেউ এতো দুরে আসে না। ৫ দিন ধরে পানিবন্দি আছি কেউ কিছু দেয় নাই।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যার্তদের জন্য ৪শ ৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২৫ হাজার ১৪টি পরিবার। বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, ৬শ ৫১ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী মজুদ রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী বিতরন করা হবে।
এদিকে রৌমারী উপজেলায় বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রান বিতরন কার্যক্রম পরিদর্শন ও ত্রান বিতরন করেছে ত্রান মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতিকুল রহমান। এসময় বন্যা দুর্গত বেশির ভাগ মানুষের ত্রান না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কাছে পর্যপ্ত ত্রান মজুদ রয়েছে। স্থানীয় প্রাশনের চাহিদা অনুযায়ী ত্রান দেয়া হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply