২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৭:৪৯/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের এক টুকরো রত্ন

     

সেপ্টেম্বরের প্রথম দিনের মিষ্টি রোদেলা সকাল। ২০১১ সাল। সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রচণ্ড ব্যস্ততা। ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দম ফেলার সুযোগ নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দুই দিনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সকালেই ফোন এলো ভারতীয় দূতাবাস থেকে। প্রধানমন্ত্রী চান এক ঘণ্টা সময় একান্তে তাঁর পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে কাটাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি চমকে উঠলেন। প্রোগ্রাম চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সিকিউরিটি সহ সব জায়গায় অনুষ্ঠান সূচি বিতরণও সারা। এর মধ্যে এক ঘণ্টা সময় বের করা তো দু:সাধ্য। ‘আমি দেখছি’ বলে ফোন রেখে দিয়েই ডাকলেন পররাষ্ট্র সচিবকে। দুজন একসঙ্গে বসে অনেক কসরত করে ৬ তারিখেই রাতে এক ঘণ্টা সময় বের করলেন। ভারতীয় দূতাবাসকে জানানো হলো। যদিও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পরে না, তবুও ডা. দীপুমনি জিজ্ঞেস করলেন ‘জানতে পারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুটা কে’? ওপাশ থেকে উত্তর এলো ‘ড. গওহর রিজভী’।

ড. সিং এর পুরো সফরেই সবাই আড় চোখে দেখলেন ড. রিজভীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের রসায়ন। আলাপচারিতায় দুজনই স্মৃতি তাড়ানিয়া হয়ে যাচ্ছিলেন, আবার হাসছিলেন।

ড. গওহর রিজভী। ২০০৯ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী ড. গওহর রিজভীকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন তখন খুব কম মানুষই চিনতো তাঁকে। এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও জানতেন না কে এই গওহর রিজভী। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। ক্ষমতা নিয়েই শেখ হাসিনার প্রথম চমক ছিল মন্ত্রিসভা। পুরোনোদের বাদ দিয়ে একদম আনকোরা নতুনদের নিয়ে তিনি এই মন্ত্রিসভা গঠন করেন।

শেখ হাসিনার দ্বিতীয় চমক ছিল শক্তিশালী একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন। উপদেষ্টা পরিষদ ছিল ওয়ান-ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার শুভার্থীদের নিয়ে। যাঁরা সে সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, তাঁরাই ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। এইচ টি ইমাম, ড. আলাউদ্দিন, সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ড. মশিউর রহমান, জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, ড. তৌফিক ইলাহীর মতো ব্যক্তিত্বরা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ফলে দৃশ্যত উপদেষ্টা পরিষদ অনেক বেশি ক্ষমতাবান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠক করতেন। এরকম এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আমার দু:সময়ে আমাকে সবচেয়ে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাদের একজন গওহর রিজভী’। এর ক’দিন পরই ড. গওহর রিজভীকে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তিনি তখন ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার প্রভোস্ট। ড. রিজভী একজন বিশ্ব শিক্ষক। অক্সফোর্ড এবং হাভার্ডে শিক্ষকতা করেছেন।

গওহর রিজভী বাংলাদেশে যত না অপরিচিত, বিশ্বে সুধী সমাজে ততটাই আলোকিত। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন, গওহর রিজভীর উপদেষ্টা হওয়ায় উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেছিলেন ‘বাংলাদেশ একজন বিশ্বমানের জ্ঞানীকে মূল্যায়ন করতে শিখেছে। ভারত শেখেনি। ’ড. রিজভী শুধু মনমোহন সিংয়ের বন্ধু ছিলেন না, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল-গোর ছিল তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধু। তিনি কারও শিক্ষক, কারও সহপাঠী।

একদিন আলাপচারিতায় তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সংবাদকর্মীকে বলছিলেন, পৃথিবীর অন্তত ৩০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর ঘনিষ্ঠ। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তাঁর দারুণ সখ্যতা। এটা হয়েছিল মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী তখন। হাভার্ড থেকে ড. রিজভী ভারতে এসেছিলেন সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে। সে সময় বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে দুজনের। নরেন্দ্র মোদি গওহর রিজভীকে বলেন ‘স্যার, হাউ আর ইউ’?

অথচ তিনি এসব জাহির করতে খুবই অপছন্দ করেন। লোকজনকে এসব বলতেও লজ্জাবোধ করেন। সাদাসিধে জীবন। উপদেষ্টা হিসেবে কোনো বেতন-ভাতা নেন না। তাঁর কাজ সম্পর্কে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউই কিছু জানে না। যেমন কেউ জানে না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কীভাবে ড. ফখরুদ্দিন সরকারের ওপর থেকে আস্থা ফিরিয়ে নিলো। কীভাবে ২০০৮ এর নির্বাচন হলো। কীভাবে ২০১৪ এর নির্বাচন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলো?

শেখ হাসিনার একান্ত দূত হিসেবেই কাজ করতে চান। সব কৃতিত্বের ঝুড়ি তুলে দেন শেখ হাসিনার হাতে। সব সময় বলেন ‘তিনিই আমার নেতা’। এখানেই ড. গহর রিজভীর সঙ্গে বাংলাদেশের মতলববাজ সুশীলদের পার্থক্য। বাংলাদেশে দু-একজন আইনজীবী আছেন যাঁরা জীবনে একবার ওপেকের প্যানেল অ্যাডভোকেট, আর একবার জাতিসংঘের জুরি হয়েই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীর তকমা লাগিয়ে জাতিকে জ্ঞান দেন। এমন অনেক অর্থনীতিবিদ আছেন যাঁরা এই দেশকে মনে-প্রাণে ঘেন্না করেন। এজন্য শহীদ মিনার বা স্মৃতি সৌধেও যান না। এদের থেকে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম গওহর রিজভী।

অনেকেই আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলে, আওয়ামী লীগে শিক্ষিত মানুষের কদর নেই। তার জন্য উত্তর হলো  গওহর রিজভী। ড. গওহর রিজভী, আওয়ামী লীগের এক টুকরো রত্ন। যা আগলে রেখেছেন শেখ হাসিনা। পরম যত্নে। বাংলা ইনসাইডার থেকে

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply