২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৬:৩৬/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ৬:৩৬ অপরাহ্ণ

বর্ণিল ফুলে-ফুলে সজ্জিত ডিসিপার্কে ফুলপ্রেমিদের মিলনমেলা

Exif_JPEG_420

     

 

অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন
সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়ক সংলগ্ন ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসবের শুভ উদ্বোধন করলেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় বর্ণিল অনষ্ঠানের মাধ্যমে মাসব্যাপী এ ফুল উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন তিনি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম রফিকুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আলা উদ্দিন।

সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়ক সংলগ্ন বিশাল খাস জায়গা দখলমুক্ত করে সরকারি অর্থায়নে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে মনোরম এ ফুলের রাজ্য। গত বছরের ধারাবাহিকতায় ডিসি ফ্লাওয়ার পার্কে ২৫ জানুয়ারি হতে ২৩ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত চলবে এ মাসব্যাপী ফুল উৎসব। গত বছর এ উৎসবের স্থায়িত্ব ১০দিনের হলেও এবার তার পরিধি বাড়িয়ে এক মাস করা হয়। এক সময় অবৈধ দখলদাররা সেখানে হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসার নামে গড়ে তুলেছিল মাদক আসক্তদের নিরাপদ আড্ডাখানাা। ১৯৪ একরের বিশাল সরকারি খাস জায়গা দখল করে সেখানে গড়ে উঠেছিল শুকতারা নামের একটি অবৈধ হোটেল। যেখানে রাতে বসতো মাদকের রমরমা আড্ডা আর দিনে চলতো স্কুল-কলেজ পালানো শিক্ষার্থীদের অবাধ মেলামেশা। সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত রঙিন ফুলের এ রাজ্যে এখন শোভা পাচ্ছে বর্ণিল ১২৭ প্রজাতির ফুলে সাজানো দৃষ্টিনন্দন এক ফ্লাওয়ার পার্ক।

Exif_JPEG_420

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ের মিরাকেল গার্ডেনের ডিজাইনে গড়ে উঠা ডিসি ফ্লাওয়ার পার্কে ২য় বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহত্তম ফ্লাওয়ার ফেস্টিভেল বা ফুল উৎসব। সরকারি খাস জমির ওপর গড়ে উঠা জায়গায় ইতোমধ্যে রোপণ করা হয়েছে ১২৭ প্রজাতির হাজার হাজার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফুলগাছ। এক সময়ের অবৈধ স্থাপনা আর মাদক সেবীদের নিরাপদ আড্ডাখানার অভিসপ্ত জায়গায় এখন মুক্ত বাতাসে দোল খাচ্ছে বর্ণিল ফুলের রঙিন খোকা। পাখিদের কল-কাকলিতে মুখর সাগর তীরবর্তী পার্কটির মুক্ত বাতাসে দোল খাওয়া রঙিন ফুলের শোভা দেখে নজর কাড়ছে আগত ভ্রমণপ্রেমিদের। এ ফ্লাওয়ার পার্কে বিকেলে এখন ভিড় করছে ভ্রমণপিপাসু হাজারো বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রঙিন ফুলে সাজানো পার্কটিতে রয়েছে দেশি ফুলের পাশাপাশি অসংখ্য বিদেশি জাতের ফুলও। এ যেন ১২৭ প্রজাতির রঙিন ফুলের সুবাস ছড়ানো এক মনোরম রাজ্য। এদিকে টিউলিপ, বার্হকালার, সালভিয়া, ফ্লক্স, এস্টার ও লিলিয়াম জাতের ফুলগুলো বিশেষ আকর্ষণ ছড়িয়েছে বলে জানান, পরিবার‘সহ পার্কে ভ্রমণে আসা দর্শনার্থী রাশেদা আকতার (রাসু) ও রুমা আকতার (রুমি)। তারা জানান, প্রথম বারের মতো ডিসি পার্কে এসে মনটা বদলে গেল, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশেও দক্ষিণা হালকা বাতাসে দুর থেকেও দৃষ্টিনন্দন গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে যেন বেরিয়েছে রঙিন ফুলের ঝর্ণা। সকালের কুয়াশা ভেজা হালকা রোদ কিংবা রোদেলা দুপুরে পার্কে ফুলের সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুণ। কেউবা আবার পড়ন্ত বিকেলে একটু বিশ্রাম কিংবা মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে চলে যান ফুলের এ রাজ্যে। ফুল ছাড়াও পার্কটিতে রয়েছে শিশুদের জন্য কিডস জোন, চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, ভায়োলিন-শো, ঘুড়ি উৎসব ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সু-ব্যবস্থা। পার্কটির সমগ্র এলাকা শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ‘সহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে বর্ণিল আয়োজনে সাজানো হয়েছে। প্রথম বার পার্ক ভ্রমণে দারূণ আনন্দ পাওয়ার বিষয়টি জানান, এরিক, ইরফান, ইহসান ও আরহান এর মতো শিশু-কিশোর ফুলপ্রেমীরা। জেলা প্রশাসক‘সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, গত ১০ বছরের অধিক সময় ধরে ফৌজদারহাটের এ বিশাল সরকারি খাস জায়গার পুরো এলাকা অবেধ ভাবে দখল করে রেখেছিল একটি চক্র। এখানে প্রতিনিয়ত মাদকের আসর‘সহ অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ করে আসছিলো স্থানীয়রা। শেষ পর্যন্ত গত বছরের জানুয়ারি মাসে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে সরকারি খাস জায়গাটি দখলক্তুক্ত ঘোষনা করে জেলা প্রশাসন। এরপর শুরু হয় দখলমুক্ত জায়গায় রঙিন ফুলের বাগান সাজানোর বৃহত্তম সরকারি পরিকল্পনা। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ‘ফুল উৎসবের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন শিক্ষার পাশাপাশি ক্রিড়া, সংস্কৃতি ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের মেধা ও মননের বিকাশ ঘটাতে পারে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ পার্কের সমগ্র এলাকা জুড়েই রয়েছে ফুলের বাগান‘সহ ফুলকেন্দ্রিক নানান দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। আর পাশ্ববর্তী জোড়াদীঘিতেও রয়েছে নৌকা ভ্রমণ‘সহ বিনোদনের নানা আয়োজন। আয়োজক‘রা আরো জানান, দৃষ্টিনন্দন হাজারো রঙিন ফুলে সাজানো পার্কটি এখন সাজ সাজ রব। এবারের ফুল উৎসব দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে। গতবার আসা ফুলপ্রেমীরা এবারের আয়োজনের পার্থক্য অবশ্যই লক্ষ্য করবে।

এবারের ফুল উৎসবের সফলতায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি নিরলস ভাবে কাজ করেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে. এম রফিকুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আলা উদ্দিন। পার্ক এলাকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষা‘সহ সার্বিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন পিপিএম।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply