১১ মে ২০২৪ / ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১১:৪৭/ শনিবার
মে ১১, ২০২৪ ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নগরায়ন-শিল্পায়নের প্রভাবে পুকুর, জলাশয় ও দিঘী ভরাটে আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে প্রকৃতির নীরব পাখি ডাহুক

     

নাছির উদ্দিন সীতাকুণ্ড

জলাভূমিতে মনোরম পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী প্রকৃতির নীরব পাখি ডাহুক। আবাসস্থল ধংসের কারণেই মূলত দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত চতুর ও সর্তক প্রকৃতির এ পাখি। গ্রাম-বাংলার জলাভূমিতে আগের মতো চোখে পড়ে না প্রকৃতির এ পরিচিত পাখিটি। ভোরে উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুরস্থ মাদী পুুকুর পাড়ে চৈত্রের বৃষ্টি ভেঁজা ঘাসে খাবার সংগ্রহ করছে জোড়া ডাহুক। লোকালয়ে খাবার সংগ্রহে আসা ডাহুকের মনোরম দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করার প্রস্তুতি দেখে সর্তক পাখিটি মুহুর্তেই ফাঁকি দিয়ে চলে যায় বনের আড়ালে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য খাল-বিল, পুকুর, ডোবা ও হাওরময় জলাভূমিতে পরিবেশের জন্য অত্যান্ত উপকারী প্রাণীদের বসবাস।

সীতাকুণ্ড হেল্থ এন্ড এডুকেশন ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, পরিবেশ বান্ধব নীরব পাখিদের অন্যতম ডাহুক। প্রাকৃতিক জলাভূমি তথা পুকুর, খাল-বিল, নদীর বাঁকে এদের প্রধান আশ্রয়স্থল। শাপলা, পদ্মার ফাঁকে ফাঁকে দিব্বি দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বুঝে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত পাখিটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে মুলত ধারণ করে। ভাসমান শাপলা পাতা কিংবা কচুরি-পানার উপর দৌড়ঝাঁপ দিয়ে সহজেই খাবার আয়ত্বে আনতে সক্ষম পাখিটি। বর্ষাকালে সম্প্রসারিত হলেও শীতের শুরুতেই হ্রাস পায় পাখিটির আশ্রয়স্থল। হালকা প্রকৃতির পাখিটির দৈর্ঘ্য ৩২ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ১৮০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাথা থেকে গলা পর্যন্ত সামনের দিকে সাদা রঙ এবং পেছনের দিকে কালো রঙের দৃশ্যমান ছাপ রয়েছে। আর পুরুষ কিংবা স্ত্রী ডাহুক দেখতে প্রায় একই রকম। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্য পাখিদের মতো ডাহুকের বাচ্চাদের মা-বাবা মুখে খাবার খাইয়ে দেয় না। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথেই প্রকৃতির নিয়মেই ১৫-২০ ফুট উচু থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে নামতে পারে। মাটিতে নেমেই বাচ্চাগুলো মা-বাবার অনুস্মরণে পেছনে-পেছনে হেঁটে-হেঁটে খুঁজে-খুঁজে খাবার খায়। পাখিটির ছানাগুলো তুল তুলে নরম ও কালো রঙের। বন-বাদাড়ে বা জলাভূমিতে ঘুরে বেড়ানো গ্রামীণ এ পরিচিত পাখিটিকে নিয়ে লোকসাহিত্যে রয়েছে নানান রচনা। পল্লী কবি জসীম উদ্দিন এবং রূপসী বাংলার জীবনানন্দ দাশ প্রমূক কবিরা তাদের লিখনীতে গ্রামীণ এ পাখিটির জীবন চরিত্র রচনা করেছেন। পূর্ব সৈয়দপুরের বাসিন্দা কাজী আলী আকবর জাসেদ জানান, এক সময় বাড়ীর পাশ্ববর্তী মাদী পুকুরে অসংখ্য ডাহুকের বিচরণ দেখা গেলেও বর্তমানে তা শুধুই স্মৃতি। প্রতিনিয়ত আবাসস্থল হারিয়ে ডাহুক আজ খাদ্য সংগ্রহে নামছে লোকালয়।

একই সুরে কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আকতার হোসেন এলিট। সীতাকুন্ড কিন্ডারগার্ডেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার ডাঃ সজল কুমার শীল জানান, নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাবে পুকুর জলাশয় কিংবা দিঘী ভরাট হওয়ায় আবাসস্থল হারিয়ে প্রকৃতির এ নীরব পাখিটি আজ বড় অসহায়। এক সময় মীরের দীঘি সহ গ্রামের পুকুরগুলোতে ভাসমান শাপলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে ডাহুকের বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো। গ্রামীণ এ পুকুরগুলো আজ মাছ চাষীদের দখলে। পুকুরে শাপলা গাছ নিধন ও মৎস্য চাষীদের কঠোর নজরদারীতে আবাসস্থল হারিয়ে নীরব পাখিটি আজ হারিয়ে যাচ্ছে।

 

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply