আইএসডিই এর উদ্যোগে চট্টগ্রামে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার প্রশিক্ষন কর্মশালা সমাপ্ত
সন্তান জন্মদান নারীর মাতৃগর্ভে হলেও দেশে সন্তান ধারনে নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিপ্রফল হয় না। কন্যা সন্তান হলেও এখনও তার জন্য মা হিসাবে নারীকে দায়ী করা হয়। আর মা কতজন সন্তান নেবে, সে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন পুরুষরা। সে কারনে নারীর প্রতি যৌন ও পারিবারিক সহিংষতা ক্রমাগতই বাড়ছে। আর পত্রিকার পাতা বা টিভির পর্দা খুললেই প্রতিনিয়তই জোরপূর্বক ধর্ষণ বা খুনের সংবাদ ভেসে উঠে। কিছু বিকারগ্রস্থ মানুষের যৌন হিংসার বলি হয়ে অনেককে অকালে ঝরে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। তাই প্রতিটি নারী ও পুরুষের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার মানুষের মৌলিক মানবাধিকারে অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ঠ্র ও সমাজকে সমভাবে এগিয়ে না আসলে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য, সহিংষতা ও অপরাধ বন্ধ হবে না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মানুষের আচরনগত অভ্যাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তার সাথে সাধারন মানুষ পরিচিত না হলে পরিবর্তিত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হবে।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে অধ্যাপক ডঃ ইদ্রিস আলী বলেন বর্তমান সরকারের নানা মুখী কর্মকান্ডে নারীর সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারী কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় নারী ও শিশুরা প্রতিনিয়তই সহিংষতা শিকার।
বিশিষ্ঠ সাংবাদিক এম নাসিরুল হক বলেন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় তৃণমূলে সাধারন মানুষের বিবেককে জাগ্রত করা, নির্যাতনের শিকার ও নারীরা যেন যথাযথ আইনী প্রতিকার পান সে বিষয়ে সমাজের সকল স্তরের প্রতিবাদী মানুষগুলোকে সংগঠিত করা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার। গণমাধ্যমগুলিতেও নারীর প্রতি সহিংষতার প্রকৃত তথ্য আরও তুলে ধরা দরকার।
আইএসডিই বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রতিটি মানুষের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার ও সুরক্ষা পাবার কথা থাকলেও মানুষের অজ্ঞতার কারনে অধিকার ভুলন্টিত হচ্ছে। অনেকেরই ধারনা নারীর প্রধান কাজ সন্তান প্রসব ও প্রতিপালন করা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার কারনে কেউ নারী আবার কেউ পুরুষ হয়ে জন্ম নেন। আর পৃথিবীর অনেক কিছুই এখন পরিবর্তিত হয়ে গেছে। নারী আর পুরুষের বৈষম্য এখন আর সেভাবে নেই। তাই নারীকে শুধুমাত্র যৌন দাসী হিসাবে বিবেচনা করার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে মানুষ হিসাবে চিন্তা করতে হবে। স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হিসাবে আইএসডিই প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আইএসডিই নারীর জন্য মর্যদাপূর্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। আর এ জন্য সমাজে পরিবর্তনকামী মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিকদের সংগঠিত করে সমাজ পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
উল্লেখ্য নেদারল্যান্ডের দাতা সংস্থা সিমাভির আর্থিক সহায়তায় রয়েল ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট কেআইটির উদ্যোগে রেড অরেঞ্জ, এফপিএবি ও আইএসডিই বাংলাদেশ এর মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন “এসআরএইচআর সম্পর্কে জানার মাধ্যমে সহনশীলতা বৃদ্ধিও ক্ষমতায়ন-রাইজ” প্রকল্পের আওতায় আইএসডিই এর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ৬দিন ব্যাপী এই প্রশিক্ষন কোর্সের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই বিষয়ের তথ্যগুলি মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের কাছে অবহিত করবেন। কর্মশালায় আইএসডিই বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম ও ককসবাজার জেলার ২৫জন কর্মকর্তা ও কর্মী অংশগ্রহন করেন।