জসিম উদ্দিন আনোয়ারা থেকে
বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৯ নং পরৈকোড়া ইউনিয়নের ওষখাইন গ্রামে বিগত ২০১৭ সালে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ক্লিনিকটির নাম ‘আরফা-আলম কমিউনিটি ক্লিনিক’। এ ক্লিনিকের অধীনে ওষখাইন- মামুরখাইন দুই গ্রাম মিলে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে প্রায় পাঁচ হাজার । উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতি ছয় হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক অনুমোদন দেয় সরকার। একই ইউনিয়নের তাতুয়া, শিলালিয়া ও তিশরী এ তিন গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওষখাইন ও মামুরখাইন গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক সচল থাকলেও ওষখাইন মৌজায় পাঁচশো মিটারের মধ্যে প্রায় চব্বিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ‘ সুরুত আলী চৌধুরী কমিউনিটি ক্লিনিক’ নামে আরেকটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হয়েছে।
জানা গেছে, এ ক্লিনিকের জমি দাতা ওষখাইন গ্রামের বাসিন্দা প্রকৌশলী নুরুল আবছার চৌধুরীর স্ত্রী হামিদা বানু চৌধুরী। প্রকল্পটির কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে । ৮ নং ইউপি সদস্য নিউটন দাশ অভিযোগ করেন, তাতুয়া, তিশরী ও শিলালিয়া এ তিন গ্রাম নিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত । এই ওয়ার্ডে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজার পাঁচশো । তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ১৯ শে ডিসেম্বর ২০১৯ সালে তাতুয়া গ্রামের নামে ক্লিনিকটি টেন্ডার হলেও এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তা বাতিল হয়ে অনুমোদিত ক্লিনিকটি বর্তমানে ওষখাইন গ্রামেই নির্মিত হয়েছে । অথচ ওষখাইন গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক সচল আছে । তা ছাড়া ক্লিনিকটি যে স্থানে নির্মাণ হয়েছে সেই গ্রামটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের শ্বশুর বাড়ি । এই কারনে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও গুঞ্জন সৃস্টি হয়।
নিউটন বলেন, কৃষক, হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেতে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এ তিন গ্রামের জন্যে অতীব জরুরী । গত ৯ আগষ্ট দু’টি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) ডা. আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের প্রাপ্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগ (H E D) চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে গত ১৯ শে ডিসেম্বর ২০১৯ সালে সাবেক ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন তাতুয়া গ্রামের নামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক টেন্ডার হয় । তবে আবেদনকারীর ডকুমেন্টসএ কিছু কিছু বিষয়ে অসংগতিও পাওয়া যায় ।
ইউনিয়ন পরিষদ সুত্রে জানা যায়, সাবেক ২ নম্বর ওয়ার্ড হলো বাতুয়াপাড়া, পূর্ব কৈন্যারা, মাহাতা, চেনামতি ও তালসাড়া । তাতুয়া গ্রামটি সাবেক ৩ নম্বর ওয়ার্ড । এ গ্রামটি বর্তমানে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত । সাবেক ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ওয়ার্ডগুলো হলো দেউতলা, পাঠানিকোটা, তাতুয়া, তিশরী, শিলালিয়া, ওষখাইন ও মামুরখাইন । তাতুয়া, শিলালিয়া ও তিশরী এ তিন গ্রাম নিয়ে বর্তমানে ৮ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত । মামুরখাইন ও ওসখাইন সাবেক ৩ নম্বর ওয়ার্ড । এ দুটি বর্তমানে ৯ নম্বর ওয়ার্ড ।
এ প্রসঙ্গে ডা. আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বলেন, আবেদনকারী কিছু কিছু বিষয়ে ভুল লিপিবদ্ধ করেছে । তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করে তা সংশোধন করেছেন । প্রকল্পটি টেন্ডার হয়েছে তাতুয়া গ্রামের নামে সেটির কাজ ওষখাইনেে কেন হচ্ছে ? এর জবাবে তিনি বলেন, ভিআইপিদের চাহিদার ভিত্তিতে সরকার কিছু কমিউনিটি ক্লিনিক বরাদ্দ দেয়। সে সুবাদে সুরুত আলী চৌধুরীর নামে হামিদা বানু চৌধুরী এটি পেয়েছে । কোন শ্রেণীর মানুষ ভিআইপি ? এর জবাবে তিনি বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে । এ প্রসঙ্গে পরৈকোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ চৌধুরী আশরাফ বলেন, শুনেছি কমিউনিটি ক্লিনিকটি তাতুয়া গ্রামের নামে টেন্ডার হয়েছে । তাতুয়ায় নির্মাণ না করে ক্লিনিকটি ওষখাইনে নির্মাণ করাটা কেবল অন্যায় নয়, এটি এক প্রকার দূর্নীতিও । এটি ভয়াবহ নির্লজ্জতা । তিনি বলেন, এসব দায়িত্বে যারা আছেন তারা স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম করেছেন । ক্লিনিকটি সরিয়ে তিন গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা ঠিক হয়নি ।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বিস্তারিত বলতে পারবেন । তাঁর থেকে জেনে নিন ।