২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৮:৪৮/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

 ইসলামী আইনে ধর্ষকদের শাস্তির বিধান

     

এম এ করিম ইবনে মছব্বির

করোনার পাশাপাশি মুখে মাস্ক লাগিয়ে ও করোনা ছোঁয়াচে রোগ জেনেও কিছু কিছু মানুষ সমাজে ধর্ষণের মত জঘন্যতম অপরাধ করছে। করোনার পাশাপাশি আমাদের গোটা মানব সমাজে যে সকল ভাইরাসের উদ্ভব ঘটেছে, যেমন ভায়োলেন্স ভাইরাস, ইকোনমিক ভাইরাস, হাঙ্গেরী  বা ভুখা ভাইরাস, হাউজ ওয়ার ভাইরাস, যেমন শার্ট ডাউনে অথবা চাকরী হারা হয়ে পারিবারিক কলহ শুরু। ইদানিং করোনা  ভাইরাসের মাঝে ও শুরু হয়ে গেছে ভায়োলেন্স ভাইরাস, যা গোটা দেশ ও জাতি কে করে তুলেছে অশান্তির দিকে। সমাজের চতুর্থদিকে শুরু হয়েছে অশান্তির বিরাজমান বাতাস। আর এই সকল অশান্তি থেকেই উৎপত্তি হয়েছে আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি খুন, ধর্ষণ, হানাহানি, মারামারি, চুরি, ডাকাতি, আত্মহত্যার মত জঘন্যতম পাপাচার। যা ইসলামী শরীয়তে ইহকালে এবং পরকালে রয়েছে বিপর্যয়। মানব হত্যার পরেই সবচেয়ে বড় গুনাহের কাজ হলো ধর্ষণ। আরবীতে ইগতিছাব অর্থাৎ বল প্রয়োগ বা জোর পুর্বক কোন চাহিদা আদায় করে নেওয়া।

আরবী জিনা বা আল জিবর এর বাংলা অর্থ হলো ধর্ষণ।Islamic jurice prodance and muslim law penal code দন্ড বিধি অনুযায়ী মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন যে, আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে ও যেও না, নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল এবং অতি জঘন্যতম পথ। সুরায়ে বণী ইসরাইল,আয়াত 32 ।আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনুল করিমে আরো ঘোষণা করেন যে, জিনা কারী মহিলা এবং জিনাকারী পুরুষ, তাদের উভয় কে একশত দোর্রা মারো অর্থাৎ বেত্রাঘাত করো একশত টা। আল্লাহর বিধান কার্যকর করার কারণে তাদের প্রতি যেনো তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। মুসলমানদের একটি দল যেনো তাদের শাস্তি দেখতে পারে, সুরায়ে নুর আয়াত 2 ।ধর্ষণের শাস্তি কেমন হবে?ধর্ষণের বেলায় শুধু মাএ একতরফা জিনা সংঘটিত হয়। আর ওপর পক্ষ হয় নির্যাতিতা অথবা ধর্ষিতা। অতএব নির্যাতিতার উপরে কোন শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না। শুধুমাত্র জালিম ধর্ষকেরই শাস্তি পেতে হবে। ধর্ষণের বেলায় দুটো বিষয় ইস্মরতব্ব থাকে যে প্রথমত জিনা বা অশ্লীল পাপাচার দ্বিতীয়ত বল প্রয়োগ, জোর প্রয়োগ বা ভয়ভীতি প্রদর্শন পুর্বক বা দল বল অস্ত্র দেখিয়ে একজন অবলা নারীর সম্ভ্রম হানি। প্রথম টি অর্থাৎ ধর্ষকের শাস্তি বা সাজা হতে ই হবে। দ্বিতীয়টির শাস্তি বা সাজা ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের মতে মুহারাবার শাস্তি পাবে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ রা হলেন, ইমাম আবু হানিফা র, ইমাম শাফি ই র, ইমাম মালিক র,ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র,।আমরা বাংলাদেশের সবাই অধিকাংশ ই ইমাম আবু হানিফার অনুসারী। আমরা বাংলাদেশী রা হলাম হানাফী মাজহাবের অনুগত। মুহারাবা শাস্তি বা সাজার বিষয়ে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন যে, যারা আল্লাহ পাক এবং রাছুল হযরত মোহাম্মদ সা ,এর এর সংগে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাংগামা বা সংঘাত সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি বা সাজা হচ্ছে তাদের কে হত্যা করা হবে অথবা শূলিতে চড়ানো হবে। অথবা তাদের হাত সমুহ বিপরীত দিক থেকে কর্তন করে দেয়া হবে, অথবা তাদের কে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে, অর্থাৎ নির্বাসনে পাঠানো হবে। এটি হলো তাদের জন্য পার্থিব লান্চনা। আর তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে কঠোর শাস্তি বা আজাব সূরা মাইদা আয়াত 33।ঊল্লেখ যে, মানব হত্যা করলে তার শাস্তি বা সাজা হবে হত্যার বদলে হত্যা, কারো সম্পদ চুরি বা ডাকাতি করলে তার শাস্তি বা সাজা হবে বিপরীত দিক থেকে হাত পা কেটে দেওয়া। চুরি বা ডাকাতির পর গৃহের মালিক কে হত্যা করলে তার সমোচিত শাস্তি বা সাজা হবে ডাকাত কে শূলিতে চড়িয়ে হত্যা করার তাফছীর করেছেন পৃথিবীর চার মাজহাবের চার ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্র বিদ যাদের অনুসারী সারা পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহ। যেমন ইমাম আবু হানিফা র ইমাম শাফিঈ র,ইমাম মালিক র,ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র, আবার এর চেয়ে লঘু অপরাধ হলে দেশান্তরের শাস্তি বা সাজা দেওয়ার কথা বলেছেন উপরোক্ত পৃথিবী বিখ্যাত এই চার ইমাম। সংক্ষেপের কারণে বিস্তারিত লিখে বা বলে সকল রেওয়ায়েত শেষ করা যাবে না। আমাদের দেশের আইনে ধর্ষণের সংগায় ঊল্লেখ রয়েছে যে, যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ছাড়া ষোল বছরের অধিক বয়সের কোন মহিলার সহিত তাহার সম্মতি ছাড়া অথবা ভয়ভীতি প্রদর্শন পুর্বক বা জোর পুর্বক অথবা প্রতারণা মুলক ভাবে উক্ত নারীর সম্মতি আদায় করেন, অথবা ষোল বছরের কম বয়সী কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি সহ অথবা সম্মতি ছাড়া যৌন সংগম করেন তাহা হলে তিনি উক্ত মহিলা কে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হবেন। আল কোরআন আল হাদীছ এবং ইসলামী ফিকাহের সংগার সাথে বাংলাদেশের ধর্ষণের বিচারের ম্যানেজমেন্ট সব সময় ই একমত পোষণ করে। ইসলাম বিবাহ বহির্ভূত নারী এবং পুরুষের সম্মতি বা অসম্মতি উভয় দিক থেকে অবৈধ ভাবে দৈহিক মিলন কে দন্ডণীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বিবাহ ছাড়া অবৈধ দৈহিক মিলন কে ইসলামী আইন এবং আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে উভয়ের চোখে অপরাধ। পক্ষান্তরে ইসলামে বিবাহিত কেউ ধর্ষণ বা জিনা করলে তার শাস্তি বা সাজা পাথর ছুঁড়ে মৃত্যু দন্ডের কথা আল কোরআন এবং হাদিসে বলা হয়েছে। রাছুল সা, বলেন যে, অবিবাহিত পুরুষ এবং নারীর উভয়ের জিনার শাস্তি বা সাজা হলো একশত দুররা মারা অর্থাৎ একশত বেত্রাঘাত মারতে হবে। এবং এক বছরের জন্য নির্বাসনে পাঠাতে হবে। আর যদি বিবাহিত নারী পুরুষ জিনা করে, তাহলে উভয়ের শাস্তি বা সাজা হলো একশত দুররা অর্থাৎ একশত বেত্রাঘাত এবং রজম অর্থাৎ পাথর ছুঁড়ে মৃত্যু দন্ড কার্য কর করা। মুসলিম শরীফ। এ বিষয়ে আমাদের মাজহাবের ইমাম আবু হানিফা র, এর মত অনুযায়ী হুদুদ অর্থাৎ ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি বা সাজা। আর ধর্ষক কে নির্বাসনে পাঠানোর বিষয় টি সম্পূর্ণ বিচারকেথ এখতিয়ারাধীন। ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণের প্রণিধানযোগ্য নীতি মালা হলো জিনা প্রমাণের জন্য দুই টা বিষয় অতীব জরুরী, এক, চারজন সাক্ষী। দুই, ধর্ষকে জবানবন্দি। তবে সাক্ষী পাওয়া না গেলে মডার্ন ডি এন এ টেস্ট ,সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ভিডিও রেকর্ড ধর্ষিতার বক্তব্য অনুযায়ী ধর্ষক কে গ্রেফতার করে জবানবন্দি অনুযায়ী তার উপর শাস্তি বা সাজা প্রয়োগ করা হবে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষকের যতটুকু শাস্তি প্রাপ্য রয়েছে, তা প্রয়োগে বিলম্ব আর রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ধর্ষণের উপযুক্ত বিচার হয় না। সবই ধামা চাপা হয়ে যায়। তবে আল্লাহর আদালত কিয়ামত দিবসে কেউ ধামা চাপা দিতে পারবে না। দুনিয়াতে ধর্ষিতার বিচার না হয়ে উপরন্তু অবলা লাজূক ধর্ষিতা সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়। ধর্ষিতা কে এক ঘরে করে রাখা হয়। এমন কি ধর্ষিতার পরিবার কে উল্টো হুমকী ও প্রধান করা হয়। ইসলাম এ সমস্ত কর্ম কান্ড কে পছন্দ করে না। যদি পাপাচার করে একজন তাহলে আল্লাহর আজাব এবং গজব গোটা সমাজের কাঁধের উপরে পড়ে যায়। এক ঘরে আগুন লাগলে যেমন একশত ঘর পুড়ে যায়। ঠিক একই ভাবে কিছু কিছু মহাপাপী দের কারণে গোটা সমাজে আল্লাহর আজাব এবং গজব শুরু হইতে থাকে। শিশু ও নারী নির্যাতনের জন্য রয়েছে one stop service কিন্তু ঐ গুলা আর কার্যকর ভুমিকা পালন করছেনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গূলা তে তারা যৌন শক্তি ধংশের ইনজেকশন দিয়ে অনেক দেশে ধর্ষক দের শাস্তি বা সাজা প্রদান করে থাকে। পরিশেষে মহান আল্লাহ পাক যেনো আমাদেরকে ইনছাফ ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করেন। আমীন

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply