অভিন্ন নীতিমালা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভুল সমীকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী : বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরাম
বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকে ঢালাওভাবে বৈষম্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে ইউজিসি যে অভিন্ন নীতিমালা প্রনয়ণ করেছে তা বৈচিত্র্যপূর্ণ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের ভুল সমীকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী বলে মনে করেন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরাম।
আজ বৃহস্পতিবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন-বিরোধী অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম।
মানববন্ধনে অংশ নেয় যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় -ঢাকা,মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি, নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষকদের মান ও সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পদে শিক্ষক নিয়োগের শর্ত ঠিক করবে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদের, আবার একি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রমোশন নীতি ভিন্ন হতে পারে। অভিন্ন নীতিমালা না করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারেন । তারা আরো বলেন, যে কোন ধাপের শিক্ষা উন্নয়নের মতো উচ্চশিক্ষারও রয়েছে দুটি দিক- শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার আকার সম্প্রসারণ। স্বায়ত্তশাসনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই নিজের মান নির্ধারণ করবে, আর ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয় চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আকার নির্ধারণ করবে । আর এ লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু গত ২৫ আগষ্ট ২০১৯ শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসি যে অভিন্ন নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। আমরা অতি শিঘ্রই এই নীতিমালা বাতিলের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের প্রধানসমন্বয়ক কামরুল হাসান মামুন বলেন, যার বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিন্ন করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। অভিন্ন শব্দটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যায় না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সার্বজনীন বৈশিষ্ট রয়েছে। আর অভিন্ন নীতিমালায় শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটা নির্দিষ্ট রেজাল্ট দেয়া হয়েছে কিন্তু বাস্তবে এক এক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট এক এক রকম হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে শিথিল করতে চাই না, আরো কঠিন করতে চাই। কারন কোন একজন অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের ফলে পরবর্তী প্রায় কয়েকটি প্রজন্মকে এর ফল বহন করতে হয়। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের যে নীল নকশা আমরা দেখতে পাচ্ছি তা আমাদের ঠেকাতে হবে। প্রসঙ্গত , জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা,রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি যুগান্তকারী শুভসূচনা করেন। বাংলাদেশ কৃষি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মতন করে স্বায়ত্তশাসন গ্রহণ করেন। এ অনুসারে পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়।
উল্লেখ, গত ২৫ আগষ্ট ২০১৯মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে ইউজিসি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে বৈষম্য বিরাজ করছে তা এবং ‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫’প্রণয়নের পর শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর করতে এই অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেন ।