৩ মে ২০২৪ / ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ২:৪১/ শুক্রবার
মে ৩, ২০২৪ ২:৪১ পূর্বাহ্ণ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী

     

আবছার উদ্দিন অলি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ১৭ মার্চ। এইদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এই দিনকে আরো বর্ণাঢ্য ও আনন্দময় করতে শিশু দিবস ঘোষণা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এখন থেকে প্রতিবছর ১৭ মার্চ সরকারিভাবে জাতীয় শিশুদিবস পালিত হচ্ছে। ১৯২০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দীর্ঘ এই সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন আমাদের এগিয়ে চলার পথকে নতুন করে উজ্জীবিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম এদেশকে স্বার্থক করেছে। আমরা গর্বিত, আনন্দিত এবং উৎসাহিত এমন একজন মহান ব্যক্তির জন্ম এই বাংলার মাটিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ছোটদের ভালবাসতেন। তাঁর কাছে শিশুরা ছিল আদরের। শিশুদের নিয়ে তাঁর মহৎ চিন্তা-চেতনা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতো সব শিশুদের। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে হয়তো আমরা লাল সবুজের এই প্রিয় দেশ পেতাম না। বঙ্গবন্ধুর সাফল্যময় বর্ণাঢ্য জীবন, আমাদের চলার পথের অনুপ্রেরণা সাহস এবং ভালবাসা।

কাকচক্ষুর মতো স্বচ্ছ জল টলমলে ছোট্ট এক নদী। নাম তার বাইগার। এই নদী গিয়ে পড়েছে উত্তাল মধুমতিতে। কী স্বচ্ছ, হিম হিম তার জল। বাইগার দিনমান মুখরিত থাকে পালতোলা নৌকার চলাচল আর নদীতে নাইতে আসা পল¬ীবাসীর কোলাহলে। এক দূরন্ত কিশোরও স্বচ্ছ জল ঘোলা করে ডুবসাঁতার কাটতে থাকে অবিরাম। এই চঞ্চল উচ্ছ্বল কিশোর মাঝে মধ্যে থমকে যায়, উদাস হয় মাঝির ভাটিয়ালির করুণ গানে। নদীর স্রোতধারা তাকে যেমন টানে, তেমনি তাকে আপ¬ুত করে ভাটিয়ালীর উদাসী সুর। হারিয়ে যায় নিজের অজ্ঞান্তে নিজের মনে। সেই দূরন্ত গ্রাম বালকের নাম মুজিব। পুরো নাম শেখ মুজিবুর রহমান। যে গ্রাম দিনমান তার দূরন্তপনার মুখর থাকতো সেই গ্রামের নাম টুঙ্গিপাড়া। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গ্রাম তাঁর জন্ম। তৎকালীন জেলা ফরিদপুর। আর তার মহকুমা গোপালগঞ্জ। থানা টুঙ্গিপাড়া। বর্তমান জেলা গোপালগঞ্জ। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম সায়রা খাতুন।

শেখ মুজিবুর রহমান নামটি রেখেছিলেন নানা শেখ আবদুল মজিদ। তিনি নাম রেখে মেয়েকে বলেছিলেন, ‘মা’ সায়রা তোর ছেলে একদিন জগৎজোড়া বিখ্যাত একজন হবে।’ নানার এই ভবিষ্যবাণী শতভাগ সত্যি হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখন বিশ্বখ্যাত একটি সম্মানিত নাম। একজন সেরা বাঙালি। বাঙালি জাতির পিতা। আজ থেকে প্রায় দুশো বছর পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ব পুরুষেরা ইরাক থেকে এই নদী বিধৌত ছায়াঘেরা নির্জন গ্রামে এসে বসতি গড়েন। তাঁরা গ্রামে বন জঙ্গলময় অনাবাদী জমি চাষবাসের উপযোগী করে তোলেন এবং সবাইকে নিয়ে একটি আত্মনির্ভরশীল গ্রাম গড়ে তোলেন। আর অর্থ, সমাজ ও প্রতিপত্তিতে স্বয়ং সম্পর্ণতা অর্জন করেন।

শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব ও কৈশোর বেলা কেটেছে গ্রাম থেকে গ্রামে, বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে। তিনি ছিলেন খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। কোথাও স্থির থাকতেন না। বর্ষায় বাইগার দু কুল জল ছাপিয়ে থাকে টইটম্বুর। স্থির বুঝতেই পারে না। তারপর অনেকক্ষণ খবর নেই। আবার ঝুপ করে ভেসে ওঠেন অনেক দূরে গিয়ে। নদীর তীরে দাঁড়ানো সমবয়সি বালকেরা তখন হাততালি দেয়, তার সাহস দেখে বাহ্বা দেয়। তাকে দেখে অনেকে মুগ্ধ হয়। এ-ঘর থেকে ও-ঘর, পাড়াময়, গ্রামময় এখান থেকে সেখানে ঘুরে বেড়ান তিনি। সারাদিন ছেলের কোনো খবর নেই। মা অস্থির হয়ে গেছেন, বাবা অস্থির হয়ে গেছেন। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, কোথায় সে? কোনো খোঁজ নেই। তারপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। হঠাৎ অনেক দূরে দেখা যায় ধুলোমাটি মাখা মুজিব মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে আসছে। দেখে মায়ের মন শান্ত হয়, আবার বিচলিতও। এই দূরন্ত ছেলেকে কীভাবে সামাল দেবেন তিনি! কীভাবে মানুষ করবেন! কোনো কুল কিনারা করতে পারেন না। সারাক্ষণ শত ভাবনা ঘিরে থাকে মনের মাঝে।

‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ জনপ্রিয় কন্ঠ শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া এই গানটি গানে গানে সুরে সুরে জাতির জনকের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা সম্মান আর ভালোবাসার নিরন্তর উপহার। শুভ জন্মদিন। এ দেশের অসংখ্য বরেণ্য গীতিকার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন গান, সুরকাররা করেছেন সুর, আর শিল্পীর কন্ঠে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। এভাবেই কথা, সুর, সংগীতে বঙ্গবন্ধুর গান আজ সারা বিশ্ববাসী শুনছেন। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে তৃতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। তাই এবারের জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি পালিত হবে বর্ণাঢ্য আয়োজনে। এই আনন্দ আয়োজনের জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রতিবছর ১৭ মার্চ সরকারিভাবে জাতীয় শিশুদিবস পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু জন্ম এদেশকে স্বার্থক করেছে।

বাংলার রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগমন না হলে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আজো অর্জিত হতো না। কেননা ১৭৫৭ সালে পলাশির আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। বৃটিশদের শাসনের ১৯০ বছরেও তা আর ফিরে পাওয়া যায় নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর রাজনৈতিক সংকট ও জাতিতাত্ত্বিক ধারণা প্রভাব বিস্তার করলেও বাঙালির প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো একজন বজ্র কঠোর নেতার। ঠিক তখনই বাঙালির রাজনীতির ভাগ্যাকাশে ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে আগমন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর জন্ম না হলে বাঙালি জাতি বিশ্ব দরাবরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতো না। আমরা গর্বিত, আনন্দিত এবং উৎসাহিত এমন একজন মহান ব্যক্তির জন্ম এই বাংলার মাটিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছোটদের ভালবাসতেন। তাঁর কাছে শিশুরা ছিল আদরের। শিশুদের নিয়ে তাঁর মহৎ চিন্তা-চেতনা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতো সব শিশুদের। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে হয়তো আমরা লাল সবুজের এই প্রিয় দেশ পেতাম না। বঙ্গবন্ধুর সাফল্যময় বর্ণাঢ্য জীবন, আমাদের চলার পথের অনুপ্রেরণা সাহস এবং ভালবাসা। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাঁর নাম চিরকাল অম্ল¬ান, অক্ষয় ও অমর হয়ে থাকবে। স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তাঁর কীর্তি গাথা, তাঁর কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবনালেখ্য। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শততম জন্মবার্ষিকীতে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply