২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৭:২৪/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির উপস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফে ইয়াবা কারবারীদের আত্মসমর্পণ শনিবার

     

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন
আগামী শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপির উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন দেশের শীর্ষ ইয়াবা কারবারিদের একটি অংশ। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী টেকনাফ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আত্মসমর্পণ উপলক্ষে প্রশাসন প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে কক্সবাজারের ইয়াবার বুক খ্যাত টেকনাফের ১২০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করবেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারী রয়েছেন, ১১৫১ জন। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ  করতে যাচ্ছে মাত্র ১২০ থেকে দেড়শ জন।
তবে আরো বড় বড় তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারীরা প্রশাসনের সাথে অনেকটা চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরছেন। এখানে বেশির ভাগ রয়েছেন জনপ্রতিনিধি । তাদের গ্রেফতার দাবী করেছেন সচেতন মহল।
এদিকে, শনিবার আত্মসমর্পণ করছেন এমন কয়েকজন ইয়াবা কারবারীদের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ভাই আব্দুর শুক্কুর শফিকুল ইসলাম শফিক, আমিনুর রহমান ওরফে আব্দুল আমিন, ফয়সাল রহমান, বদির ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু, আরেক ভাগিনা টেকনাফ পৌর কাউন্সিলার নূরল বশর ওরফে নূরশাদ, বদির খালাতো ভাই মং সিং থেইন ওরফে মমসি, ফুপাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল, মারুফ বিন খলিল বাবু, বদির বেআই সাহেদ কামাল।
টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমের ছেলে দিদার মিয়া, টেকনাফের হ্নীলার নুরুল হুদা মেম্বার, টেকনাফ সদর ইউপি মেম্বার এনামুল হক এনাম মেম্বার, সাবরাং এর মোয়াজ্জেম হোসেন দানু মেম্বার, হ্নীলার জামাল মেম্বার, শাহাপরীর দ্বীপের রেজাউল করিম রেজু মেম্বার, উত্তর আলী খালির শাহ আজম ও সাবারং নয়াপাড়ার আলমগির ফয়সাল লিটন।
ইয়াবা ডন হাজী সাইফুল করিমের দুই শ্যালক জিয়াউর রহমান ও আব্দুর রহমান। এছাড়াও টেকনাফের পশ্চিম লেদার নুরুল কবির, হ্নীলা সিকদার পাড়ার সৈয়দ আহম্মদ সৈয়দ, বন্দুকযুদ্ধে নিহত নাজির পাড়ার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানের ভাই আব্দুর রহমান, নাজির পাড়ার সৈয়দ হোসেন, নাইটং পাড়ার ইউনুস, ডেইল পাড়ার জাফর আলম, জাহাজপুরার নুরুল আলম, হ্নীলার রশিদ আহম্মদ ওরফে রশিদ খুলু, সদরের ডেইল পাড়ার আব্দুল আমিন ও নুরুল আমিন।টেকনাফ সদরের উত্তর লম্বরি এলাকার করিম মাঝি, হ্নীলা ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, শামলাপুর জুম পাড়ার শফিউল্লাহ, একই এলাকার সৈয়দ আলম, রাজাছড়ার আব্দুর কুদ্দুছ, মধ্যম জালিয়া পাড়ার মোজাম্মেল হক, জাহেলিয়া পাড়ার মোহাম্মদ সিরাজ, কচুবনিয়ার আব্দুল হামিদ, নাজিন পাড়ার মোহাম্মদ রফিক, পল্লান পাড়ার মোহাম্মদ সেলিম, নাইটং পাড়ার রহিমউল্লাহ, নাজিরপাড়ার মোহাম্মদ হেলাল, চৌধুরী পাড়ার মোহাম্মদ আলম, সদর ইউনিয়নের মৌলভি পাড়ার একরাম হোসেন।
এছাড়াও আরো যারা আছেন, হ্নীলার পূর্ব পানখালির নজরুল ইসলাম, সদর ইউনিয়নের তুলাতলি এলাকার নুরুল বশর, হাতির ঘোনার দিল মোহাম্মদ, একই এলাকার হাসান, সাবরাং নয়া পাড়ার নুর মোহাম্মদ, কচুবনিয়ার বদিউর রহমান ওরফে বদুরান, জালিয়া পাড়ার জুবায়ের হোসেন, হ্নীলার পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে মোট ৮টি থানার মধ্যে টেকনাফে ৯১২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন। এছাড়া কক্সবাজার সদর থানায় ৪৩ জন, রামুতে ৩৪ জন, কুতুবদিয়ায় ৪৮ জন, উখিয়ায় ৭ জন, মহেশখালীতে ৩০ জন এবং পেকুয়ায় ২২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছেন। মূলত টেকনাফে পরিবারকেন্দ্রিকভাবে ইয়াবা ব্যবসা চলছে। মা-বাবা, স্ত্রীসহ অনেক পরিবারের প্রায় সবাই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। এদিকে মাদক ব্যবসায় জড়িত অধিকাংশের নামে ১০/১৫টি মামলা রয়েছে। কিন্তু ৬৫ ভাগ আসামি জামিনে থেকে দেদারসে ইয়াবা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। বাকিদের মধ্যে কেউ পলাতক আবার কেউ গ্রেফতার হননি। উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রফিক উদ্দিন ও তার ভাই বাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজ উদ্দিন, টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া প্রমুখ। এদের মধ্যে মাওলানা আজিজ উদ্দিন ও তার ভাই রফিক উদ্দিন এবং শাহজাহান মিয়া নৌপথ নিয়ন্ত্রণ করেন। বড় চালান আসে সাগর পথে।
সরকার প্রধান থেকে শুরু করে দেশের সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইয়াবা প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করলেও অধিকাংশ গডফাদার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় দিন দিন ইয়াবা সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কক্সবাজারের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবি এসব চালানের সাথে যাদের গ্রেফতার করছে তারা বহনকারী। কিন্তু নেপথ্যেই থেকে যাচ্ছে ইয়াবা নামক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এই গডফাদাররা। এসব গডফাদাররা দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বরাবরই গডফাদাররা রক্ষা পাওয়ায় দেশে ইয়াবা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বড় বড় তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারীরা প্রশাসনের সাথে অনেকটা চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরছেন। এখানে বেশির ভাগ রয়েছেন জন প্রতিনিধি । তাদের গ্রেফতার দাবী করেছেন সচেতন মহল।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply