১৩ মে ২০২৪ / ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১১:৪৩/ সোমবার
মে ১৩, ২০২৪ ১১:৪৩ অপরাহ্ণ

অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হাওর এলাকাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণাসহ ৪ দফা দাবি মৌলভীবাজার কৃষক সংগ্রাম সমিতির প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

     

 

সাম্প্রতিক পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃস্টিতে সৃষ্ঠ অকাল বন্যায় হাওর এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক জনগণের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ ও হাওড় এলাকার ৩২ টি উপজেলাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে মৌলভীবাজার কৃষক সংগ্রাম সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ১৮ এপ্রিল দুপুরে জেলা কৃষক সংগ্রাম সমিতির আহবায়ক অবনী শর্ম্মার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপিপি প্রদান করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহমেদ, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদমৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা ও কৃষকনেতা মোঃ জসিমউদ্দিন। স্মারকলিপির অনুলিপি কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ত্রাণ ও পুণর্বাসন মন্ত্রী, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জুড়ী/কুলাউড়া/বড়লেখা/কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পেশ করা। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ ও তার নিকট প্রতিবেশি ভারতের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের যে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ যথেচ্ছাচার ব্যবহারের কারণে প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। আসামের বনাঞ্চলে মূল্যবান কাঠ লুটপাটের যে ধারা সৃষ্টি করেছিল তা অব্যাহত থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বনাঞ্চলে উজাড় হয়ে গেছে। ফলে বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে ব্যাপকভাবে ভূ-ত্বকের মাটি বালি নেমে এসে নদ-নদী, উপনদী ও খালের তলদেশ ভরাট করে ফেলছে। বর্তমানে অধিকাংশ নদ-নদীর নাব্যতা নেই। আবার নগরায়নের ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত রাজপথ, রেলপথ এবং নদী-খালে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের কারণে নদী ও পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বিপুল জলরাশি হাওর এলাকার পানির মাত্রা ও উচ্চতা বৃদ্ধি করছে। ৬০-এর দশকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও অধিক ফসল ফলানোর বক্তব্যকে সামনে রেখে তৎকালিন সময়ে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের পরিকল্পনায় ওয়াপদা গঠিত হয়। হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার নামে সুদূর পাকিস্তান আমল থেকে অপরিকল্পিত বেড়ীবাঁধ দিয়ে আসছে। ফলে নদীর তলদেশ ভরাট, বিলের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর বৈজ্ঞানিক নিয়ম ও সমাধান না খুঁজে লুটপাটের জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে। সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে হাকালুকি হাওরের উঠতি ফসল বোরো ধান তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ত্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে থাকায় ধান পচে নষ্ট হচ্ছে। জুড়ী, ফানাই, কন্টিনালা ও সোনাই নদী দিয়ে হাকালুকি হাওরে হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজার জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর, কাউয়াদিঘি হাওরসহ ছোট বড় সবকটি হাওরের বোরো ফসল প্লাবিত হয়েছে। হেক্টরের পর হেক্টেও পাকা ও আধা পাকা বোরোধান পানিতে যাওয়ায় দিশেহারা হাওর পাড়ের কৃষক। অকাল বন্যায় ২৫ হাজার হেক্টও জমির বোরো ধানের পাশাপাশি হাওরের ছোটবড় ২৩৭ টি বিলও তলিয়ে গেছে। ধানের পাশাপাশি পানি দুষিত হয়ে ব্যাপকহারে মাছে মড়ক লেগেছে। হাকালুকি হাওর দেশের সর্ববৃহৎ মিঠাপানির মৎস প্রজনন কেন্দ্র। এই মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটিতে মৎস প্রজনন হুমকির মুখে পড়বে। সংকট সৃষ্টি হবে মাছেও। ধানের পাশাপাশি মাছও না থাকে তাহলে হাওর তীরের মানুষের জীবন জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

স্মারকরিপিতে আরও উল্লেখ করা হয় পাহাড়ী ঢলের কবল থেকে ফসল রক্ষার জন্য প্রয়োজন নদ-নদী সমুহ খনন করে পর্যাপ্ত গভীর করা। সকল নদীর শাখাসমুহ খনন করে গভীর ও প্রসস্ত করতে হবে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ভরাটকৃত অংশ সমুহ খনন করে মেঘনা নদী পর্যন্ত পানি প্রবাহের গতি বৃদ্ধি করতে হবে। আশু ব্যবস্থার জন্য সুষ্ঠুভাবে সময় মতো পরিকল্পিত বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বেড়ীবাঁধ নির্মাণে সকল প্রকার দূর্নীতি বন্ধ করতে হবে। চলতি বছর মৌলভীবাজারসহ হাওর অঞ্চলের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষক জনগণ দিশেহারা তাই এই কৃষক কুলকে রক্ষা করার জন্য ৪ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। ৪ দফা দাবি হলো ঃ (১) হাওর অঞ্চলের ৩২ টি উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ভূমিহীন-দরিদ্র কৃষকদের জন্য বিনা মূল্যে চাল বিতরণ, সারা বছর ব্যাপী রেশনের ব্যবস্থা করা, ১০/- টাকা কেজি চালের কার্ড সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। (২) অকাল বন্যার কবল থেকে ফসল রক্ষার স্থায়ী সমধানের জন্য হাওর অঞ্চলের নদ-নদী খনন করতে হবে। (৩)সকল কৃষি ঋণ, এনজিও ঋণ মওকুফ করতে হবে। বিনা সুদে কৃষকদের ঋণ প্রদান করতে হবে। (৪)পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply