২ মে ২০২৪ / ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১১:৪৯/ বৃহস্পতিবার
মে ২, ২০২৪ ১১:৪৯ অপরাহ্ণ

মনোনয়ন ফরম সংশোধনের নামে মোটা অংকের চাঁদা

     

টাকা দিতে অস্বীকার করলে বাছাইয়ে ফরম বাতিলের হুমকি!
বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনার তালতলী উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরমের ভুল সংশোধনের নামে নির্বাচন অফিসার মোঃ আলিমুদ্দিন ও ডাটা এন্টি অপারেটর গোলাম কিবরিয়া মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘূষের টাকা দিতে অস্বীকার করলে বাছাইকালে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম বাতিলের হুমকি দিচ্ছেন নির্বাচন অফিসার। প্রার্থীরা নির্বাচন অফিসার আলিমুদ্দিনকে ঘূষ দেয়ার কথা মুঠোফোনে স্বীকার করেছেন। ফরম বাতিলসহ নির্বাচনে ক্ষতির আশঙ্কায় এ সকল প্রার্থীরা নাম প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছে না। বরগুনা জেলা নির্বাচন অফিসার মো. দুলাল তালুকদার লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। জানাগেছে, তালতলী উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম দাখিল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৪ ও সাধারণ সদস্য পদে ২৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন। ৫ মার্চ (সোমবার) এ মনোনয়ন ফরম বাছাই হবে। মনোনয়ন ফরম বাছাইয়ের পূর্বে নির্বাচন অফিসার আলিমুদ্দিন ও ডাটা এন্টি অপারেটর গোলাম কিবরিয়া ফরম সংশোধনের নামে ঘূষ বানিজ্য করছেন বলে অভিযোগ করেছে প্রার্থীরা। মনোনয়ন ফরমের ভুল সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসার ও ডাটা এন্টি অপারেটর প্রার্থীদের মুঠোফোনে ডেকে নেন। প্রার্থীরা নির্বাচন অফিসার আলিমুদ্দিন মিয়ার সাথে দেখা করলে ফরমে ভুল হয়েছে মর্মে সংশোধনের জন্য মোটা অংকের উৎকোচ দাবী করেন। শনিবার সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৮ ও সাধারণ সদস্য ১৫ জনকে ডেকে নিয়ে নির্বাচন অফিসার ফরম সংশোধনের নামে মোটা অংকের ঘূষ টাকা গ্রহন করেছেন বলে অভিযোগ তাদের। ঘুষ টাকা দিতে অস্বীকার করলে নির্বাচন অফিসার বাছাইকালে মনোনয়ন ফরম বাতিলের হুমকি দিয়েছেন বলে জানান প্রার্থীরা। উপায় না পেয়ে প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম বৈধতার জন্য নির্বাচন অফিসারের সাথে দেনদরবার করে ঘুষ টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। মনোনয়নপত্র বাতিলের ভয়ে এ সকল প্রার্থীরা নির্বাচন অফিসারের এহেন কর্মকান্ড নিরবে সহ্য করেন বলে জানান প্রার্থীরা। শনিবার শারিকখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের এক সাধারণ সদস্যের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা, ২ নং ওয়ার্ডের এক সাধারণ সদস্যের কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা, ৩নং ওয়ার্ডের এক সাধারণ সদস্যের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ৪ নং ওয়ার্ডের দুই প্রার্থীর কাছ থেকে ১১ হাজার ও ৩ হাজার টাকা, ৫ নং ওয়ার্ডের এক প্রার্থীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, ৭ নং ওয়ার্ডের এক প্রার্থীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ও ৯ নং ওয়ার্ডের এক সদস্য প্রার্থীর কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা ঘূষ নিয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত তিন মহিলা সদস্য কাছ থেকে যথাক্রমে ৩ হাজার, ৫ হাজার ও ৮ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করেছেন। রবিবার ৫ জন ইউপি সদস্যকে মনোনয়ন ফরম ভুল সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসে ডেকে নিয়েছেন। অপরদিকে মনোনয়ন ফরম পূরণের নামে নির্বাচন অফিসের লোকজন ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘূষ গ্রহন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচন অফিসার আলিমুদ্দিনকে ঘূষ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু ফরম বাতিলসহ নির্বাচনে ক্ষতির আশঙ্কায় নাম প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, যারা নির্বাচন অফিসারের লোকজনের মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম পূরণ করেনি তাদেরকে ডেকে নিয়ে ফরমের ভূল সংশোধনের নামে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘূষ নিয়েছেন। যারা ঘূষ টাকা দিতে অস্বীকার করেছে তাদের মনোনয়ন ফরম বাতিলের হুমকি দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে মনোনয়ন ফরম বৈধতার জন্য নির্বাচন অফিসার আলিমুদ্দিন ও ডাটা এন্টি অপারেটর গোলাম কিবরিয়াকে ঘূষ দিতে হচ্ছে। তারা আরো বলেন, তাদের এহেন কর্মকান্ডের জন্য কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী সিদ্দিক আকন বলেন, এক সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীর স্বামী ১০ হাজার টাকা, দুই ইউপি সদস্য প্রার্থী ১১ হাজার টাকা ও ৫ হাজার টাকা নির্বাচন অফিসারকে ঘূষ দিয়েছেন বলে আমার কাছে স্বীকার করেছে।ডাটা এন্টি অপারেটর গোলাম কিবরিয়া মুঠোফোনে বলেন, মনোনয়ন ফরম সংশোধনের নামে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমি জানিনা, আমার অফিসার জানেন। তালতলী উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আলীমুদ্দিন ভূল সংশোধনে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রার্থীদের ডেকে এনে নিয়ম শৃংখলা মত প্রচারনা চালানোর জন্য বলেছি। তিনি আরও বলেন,আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. ফারজানা আক্তার বলেন, এমন কোন অভিযোগ পাইনি। এ বিষয়ে এখনই খোঁজ খবর নিচ্ছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বরগুনা জেলা নির্বাচন অফিসার দুলাল তালুকদার বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন প্রার্থী লিখিত অভিযোগ দেয়ার সাহস আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারী অফিসে লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply