১৪ মে ২০২৪ / ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৫৬/ মঙ্গলবার
মে ১৪, ২০২৪ ২:৫৬ অপরাহ্ণ

সুনামগঞ্জে মামলার জামিন নিতে রুই মাছ সহকারে আসা মেম্বার আঙ্গুর মিয়ার ৩ সহযোগী শেষ পর্যন্ত জেলহাজতে

     

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
কুশিয়ারা নদীর ২টি বড় রুই মাছ নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরে মামলার তদবীর করেও শেষ রক্ষা হলনা ইউপি সদস্য আঙ্গুর মিয়া ও তার সহযোগীদের। সে জেলার দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর সুরিয়ারপাড় গ্রামের মৃত আব্দুল অদুদের পুত্র ও স্থানীয় কুলঞ্জ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য। অবশেষে তার ৩ সহযোগীকে যেতে হল জেলহাজতে। রোববার দুপুরে আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে দাখিলকৃত অভিযোগপত্র গ্রহনের পাশাপাশি তার সহযোগীদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এরা হচ্ছেন,আঙ্গুর মিয়ার ভাই রুহেল,জাহাঙ্গীর ও একই গ্রামের মৃত রহমান উল্লাহর পুত্র আমির উদ্দিন। আমল গ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দিরাই কোর্টে বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ১৪৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/১১৪/৫০৬/৩৪ ধারায় বিচারাধীন জিআর ১৩৩/২০১৬ নং মামলায় তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। গত ১৮/৮/২০১৬ইং তারিখে তাদের বিরুদ্ধে ৭নং মামলা দায়ের করেন সাবেক ইউপি সদস্য কবি আবুবক্কর সাগরের পুত্র হাফেজ বদরুল ইসলাম হামজা। সরজমিন তদন্তে তদন্ত কর্মকর্তা দিরাই থানার এসআই মেহেদী হাসান (বিপি নং৮৮১৫১৭০৪৭০) বিজ্ঞ আদালতে উক্ত আঙ্গুর মিয়া ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গত ৩১/৭/২০১৭ইং তারিখে ১০৬ নং অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আঙ্গুর মিয়া একই আদালতে বিচারাধীন জিআর ৮৯/২০১৬,জিআর ৮৩/২০১৬,জগন্নাথপুর কোর্টে বিচারাধীন জিআর ২১১/২০১৫ নং মামলার আসামী বলেও পুলিশের চার্জসীটে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও জগন্নাথপুর থানার মহিষাকোনা (খাগাউড়া) গ্রামের মোশাহিদ মিয়া বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে যে মামলাটি দায়ের করেছেন সেটিও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। দিরাই থানার সুরিয়ারপাড় নিবাসী ইলিয়াছ মিয়ার দায়েরকৃত দিরাই থানার মামলা নং ১২ (জিআর ১১৯/২০১০) তাং ১৭/১১/২০১০ ইংসহ বিভিন্ন বিচারাধীন মামলার পলাতক আসামী উক্ত আঙ্গুর মিয়া। শুধু পুত্র আঙ্গুর মিয়াই নয় তার পিতা আব্দুল অদুদ একই গ্রামের নুরুল হক হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ছিলেন। জানা যায়,গত ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় স্থানীয় আকিলশাহ বাজার থেকে বাড়ী ফেরার পথে আওয়ামীলীগ নেতা আবুবক্কর সাগর কে খুন করার লক্ষ্যে বন্দুকের গুলি ও রামদায়ের কোপে গুরুতর আহত করে উক্ত আঙ্গুর মিয়া ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় সরিয়ারপাড় গ্রামের সাহেব আলীর পুত্র আব্দুল মালিক প্রকাশিত ডাকাত মালেক,আব্দুল অদুদ এর অপর ২পুত্র রুহেল ও জাহাঙ্গীর,মৃত রহমান উল্লাহর পুত্র আমির উদ্দিনগংদেরকে আসামী করে আবুবক্করের ছেলে হাফেজ বদরুল ইসলাম হামজা দিরাই থানায় মামলা নং ৭ (জিআর ১৩৩/২০১৬) তাং ১৮/৮/২০১৬ইং দায়ের করে। আঙ্গুরের ভাই রুহেল ও জাহাঙ্গীরও এসব মামলার আসামী। আঙ্গুর মিয়ার প্রধান সহযোগী আব্দুল মালেক ওরফে ডাকাত মালেক একই আদালতে বিচারাধীন জিআর ৮৯/১৬,জিআর ৮৩/২০১৬,জিআর ১৭৭/২০১৫,জিআর ১৩১/২০১২,জিআর ৭৩/২০১১,জিআর ১১৯/২০১০,জিআর ৭১/২০১০,জিআর ৮০/২০০৯,জিআর ৫৮/২০০৮ ও জিআর ১৭/২০০৭ সহ একাধিক মামলার আসামী। এছাড়াও ডাকাত মালেক বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩৯৫/৩৯৭ ধারায় বিচারাধীন দায়রা ৩৮৪/২০১৬ (জিআর ১৫৩/২০১২) নং মামলার অন্যতম আসামী বলেও জানা যায়। আঙ্গুরের অপর সহযোগী আমির উদ্দিন জিআর ৮৯/২০১৬, জিআর ৮৩/২০১৬ ও জিআর ৬৫/২০০৬ নং মামলার আসামী। বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন একাধিক মামলার আসামী হিসেবে জামিনে থাকলেও রোববার আঙ্গুর মিয়া ও তার ঘনিষ্ট সহযোগী মালেক ডাকাতের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি গৃহিত হওয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয়েছে। উল্লেখ্য নিজের বিরুদ্ধে পুলিশের দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি যাতে গৃহীত নাহয় সে লক্ষে তদবীরে মেতে উঠেছিল আঙ্গুর মিয়া। তদবীরের অংশ হিসেবে শহরের হাজীপাড়ায় একজন সাংবাদিক নামধারী দালালের বাসায় উঠে ঐ দালাল মাধ্যমে রুই মাছ ও নগদ টাকা ঘুষ হিসেবে বিভিন্ন মহলে পৌছে দেয় বলে একজন প্রত্যেক্ষদর্শী জানান। ২৭ ডিসেম্বর বুধবার দুপুর ১২টায় আঙ্গুর মিয়াকে ২টি বড় রুইমাছ সহকারে পশ্চিম হাজীপাড়ার বাসভবনে যেতে দেখেন তার মামলার ১জন সাক্ষী।
আরো জানা যায়,২০১৬-২০১৭ইং অর্থ বৎসরে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় জেলার দিরাই উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা ও মেরামত কাজে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৫৪ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছে এই দুর্নীতিবাজ মেম্বার আঙ্গুর মিয়া। দুদকে দাখিলকৃত এক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,হাওর যখন পানিতে ডুবে যায়,তখন পিআইসির সভাপতি আঙ্গুর মিয়া সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা নিয়ে জুয়া খেলায় লিপ্ত থাকে। এদিকে সুরিয়ারপাড় গ্রামবাসী জানান,৩ সহযোগীদের জামিন বাতিল হওয়ায় পলাতক আসামী আঙ্গুর মিয়া ও ডাকাত মালেক বাদীপক্ষের বাড়ীঘরে হামলা ও নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গ্রামে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র জমা করে মহড়া প্রদর্শন করে যাচ্ছে। এলাকাবাসী বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। দিরাই থানা পুলিশ যতক্ষণ না ডাকাত মালেক ও আঙ্গুরকে আটক করতে সক্ষম না হন ততক্ষন পর্যন্ত এই গ্রামে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবেনা বলে এলাকাবাসী জানান।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply