গারাংগিয়া ত্বরিকত সম্মেলন ২০১৭ সম্পন্ন
শরিয়ত, ত্বরিকত ও হাকিকত-এই তিনটি সংজ্ঞার অর্থ এবং এগুলোর প্রয়োগ এমনই এক বিষয় যা নিয়ে কিছু বিতর্ক দেখা যায়। এই শব্দগুলোর প্রথমটি শরীয়ত আমাদের প্রায় সবার কাছেই সম্পূর্ণভাবে পরিচিত। আমরা যখন শরীয়ত সম্পর্কে কথা বলি, তখন মুসলমান সর্বসাধারণ বুঝতে পারেন যে আমরা হয় সার্বিকভাবে দ্বীন সম্পর্কে বলছি, নয়তো বিশেষ করে ইসলাম ধর্মশাস্ত্রের আইনি দিকগুলো বা ‘ফেকাহ’ সম্পর্কে বলছি। মহানবী (দ:)-এর কাছে উম্মোচিত সকল ঐশী আইন-কানুন, নৈতিকতা ও আকীদা-বিশ্বাসের সমষ্টিকে শরীয়ত বলে। তওহীদ, ফেকাহ ও তাসাউফ-এর উলেমাবৃন্দ শরীয়তের দু’টো উৎস আল-কুরআন ও সুন্নাহ থেকে আইন-কানুন বের করার ও শরীয়তের সংকলনের গুরুদায়িত্ব কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে সুচারুভাবে পালন করেন। কোনো সুযোগ্য মোরশেদ ও শিক্ষকের অধীনে শরীয়তের অনুশীলন। অনুশীলনের এই বিশেষ দিকটি হলো, বাহ্যিক ও আত্মিকভাবে হারাম তথা নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর বর্জন এবং সাধ্যানুযায়ী শরীয়তের আদেশগুলো পালন। এটিকেই ত্বরিকত বলা হয়। ত্বরিকাহ শব্দটি, যার অর্থ ’পথ’ বা ‘পদ্ধতি’, তা হচ্ছে শরীয়তের অনুশীলন। ইমাম মালেক (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি হাকিকত ছাড়া শরীয়ত অনুশীলন করে, সে ফাসেক; আর যে ব্যক্তি শরিয়ত বাদ দিয়ে হাকিকতের দাবি করে, সে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি উভয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছেন, তিনি ইসলামের মর্মবাণী উপলব্ধি করতে পেরেছেন। গারাংগিয়া ত্বরিকত সম্মেলনে বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। দরবারে আলিয়া গারাংগিয়া এর কর্ণধার কুতবে আলম হযরত শাহসুফী মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মজিদ (রাহ.) (প্রকাশ গারাংগিয়ার বড় হুজুর কেবলা) এর ৪০তম বার্ষিক ওফাত দিবস উপলক্ষে দরবারে আলিয়া গারাংগিয়া শরীফে হযরত বড় হুজুর কেবলা (রাহ.) এর প্রতিষ্ঠিত গারাংগিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা ময়দানে বাদে মাগরিব হতে সারারাতব্যাপী গারাংগিয়া ত্বরিকত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে হযরত আলহাজ্ব শাহসুফি শাহজাদা মাওলানা আনওয়ারুল হক সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। হযরত আলহাজ্ব শাহসুফি শাহজাদা মাওলানা হাফেজ মাহমুদুল হাসান হামেদী সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী অধিবেশনে হযরত আলহাজ্ব শাহসুফি শাহজাদা মাওলানা মাহমুদুল হক মজিদীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এম এ মোতালেব সিআইপি। অনুষ্ঠানে মাহফিল এন্তেজামিয়া কমিটির পক্ষে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ। আমন্ত্রিত কোলাফায়েকেরামের মধ্যে ছিলেন আলহাজ্ব শাহসুফি হাফেজ আব্দুল হাই, আলহাজ্ব শাহসুফি মাওলানা এনামুল হক চিশতী, আলহাজ্ব শাহসুফি মাওলানা আব্দুস সালাম, আলহাজ্ব শাহসুফি মাওলানা কামাল উদ্দিন মজিদী, আলহাজ্ব শাহসুফি মাওলানা মসউদ আহমদ, আলহাজ্ব শাহসুফি অধ্যক্ষ মাওলানা নূর মোহাম্মদ, আলহাজ্ব শাহসুফি মাওলানা ক্বারী আব্দুস সবুর, আলহাজ্ব শাহসুফি মাওলানা শাব্বির হোসাইন আমিরী, আলহাজ্ব শাহসুফি মাওলানা আবদুল হালিম ফকির, আলহাজ্ব শাহসুফি আবদুস সালাম ফকির। ত্বরিকত সম্মেলনে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল শাহ মজিদিয়া ইসলামী কমপ্লেক্স ট্রাস্ট বাংলাদেশ। অধিবেশন শেষে গারাংগিয়ার পীর সাহেব দেশ-বিদেশের মুসলিম উম্মা ও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়া করেন।