২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:২৫/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ২:২৫ অপরাহ্ণ

বরগুনায় ভূয়া চিকিৎসক দিয়ে অস্ত্রপাচারে প্রসুতি গৃহবধুর মৃত্যু ফেসবুকে ভাইরাল- অবশেষে থানায় মামলা

     

কে.এম.রিয়াজুল ইসলাম

বরগুনার জেলার বামনা উপজেলার কলেজ রোডস্থ বামনা মাতৃসদন ক্লিনিকে গত রবিবার বিকেলে ভূয়া চিকিৎসক দিয়ে  অস্ত্রপাচার করায় মোসা. মাকসুদা (৩০) নামে এক প্রসুতি গৃহবধু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ক্লিনিকে কর্মরত ভূয়া চিকিৎসক ও  ক্লিনিকের মালিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঝড় উঠে। পরে গত সোমবার  রাতে বামনা মাতৃসদন ক্লিনিকের চিকিৎসক, নার্স ও পরিচালকসহ ৭ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে নিহত  প্রসূতির স্বামী মো. মহারাজ পন্চায়েত। মামলায় আসামীরা হলেন, ভূয়া চিকিৎসক মো.নুর নবী(৪৫), ডা.শহীদ(৪৬), ক্লিনিক ম্যানেজার  আজাদ মাহমুদ আকাশ(৩৮), সেবিকা সালমা বেগম(২৬), সেবিকা মোসা. নূরুন্নাহা(২৫), ক্লিনিক পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা(৪০) ও ফয়সাল সরদার(৪৫)।
জানা গেছে, বরগুনার বামনায় গত রবিবার বিকেলে বেসরকারী একটি ক্লিনিকে হাতুরে চিকিৎসক কর্তৃক ভুল অস্ত্রপাচারে এক প্রসুতি গৃহবধু মারা যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।। এঘটনায় উপজেলার কলেজ রোডস্থ্য বামনা মাতৃসদন ক্লিনিকটি তাৎক্ষনিক সিলগালা করেছে উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন বাচ্চু। নিহত ওই প্রসুতির নাম মোসাঃ মাকসুদা বেগম(৩০)। তিনি উপজেলার নিজআমতলী গ্রামের মহারাজ পঞ্চায়তের স্ত্রী।
এদিকে গত সোমবার বিকালে নিহত প্রসুতির লাশ ময়না তদন্ত শেষে নিজআমতলী গ্রামে স্বামীর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গত রবিবার সকাল ৯ টায় সন্তান প্রসব করানোর জন্য প্রসুতি মাকসুদার পরিবার তাকে বামনা মাতৃসদন ক্লিনিকে ভর্তি করায়। সন্ধ্যায় তাকে ওটি নিয়ে যাওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায় এই ক্লিনিকে রবিবার কোন এ্যানেস্থিশিয়া সার্জন ছিলো না। ক্লিনিকের ম্যানেজার আজাদ মাহমুদ আকাশ রোগীকে এ্যানেস্থিশিয়া করে। এতে ওই প্রসুতি গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পরে। এক পার্যয়ে সে মারা যায়। রোগী মারা যাওয়ার পরে ডাঃ মো. নুর নবী নামে একজন ভূয়া চিকিৎসক ওই প্রসুতির পেটে অস্ত্রপাচার করে অথচ পেটের ভিতরে থাকা নবজাতককে বাইরে বের না করে পুনরায় কাটা অংশ সেলাই করে তিনি ও ম্যানেজার দুজনে গা ঢাকা দেয়।
আরো জানাগেছে, ওই প্রসুতির ক্লিনিকে মৃত্যু হওয়ার পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কৌশলে গুরুতর অসুস্থ্যের নাটক সাজিয়ে তাকে বরিশালে পাঠানোর  চেষ্টা চালায়। নিহত প্রসুতির পরিবার ও স্থাণীয় লোকের চাপের মুখে তাকে বামনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা রোগীর ইসিজি করে তাকে মৃত্যু ঘোষনা করেণ।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, বামনা মাতৃসদন ক্লিনিকের চিকিৎসক নুরুন নবী আসলে কোন ডিগ্রীধারী চিকিৎসক নয়। তিনি বামনা, মঠবাড়িয়া, আমুয়া, ভান্ডারিয়ারসহ  বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রসুতিদের অস্ত্রপাচার করে থাকেন।
এ ঘটনায় বামনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন বাচ্চু তাৎক্ষনিক বামনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন এবং অভিযুক্ত ওই ক্লিনিকটির বৈধ কাগজপত্র না পেয়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সিলগালা করে দেয়।
নিহত প্রসুতি গৃহবধূর স্বামী মহারাজ প ায়েত জানান, তার স্ত্রীকে ঘটনারদিন সকালে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে মাতৃসদন ক্লিনিকে ভর্তি করান। বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে তাকে ওটিতে নেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা সংকটপন্ন বলে তাকে জানায়। রোগীকে তরিঘরি করে বরিশালে পাঠানোর সকল প্রক্রিয়া কর্তৃপক্ষ গ্রহন করলে তাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তখন রোগীকে বরিশালে পাঠানোর পূর্বে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার দাবী তোলে নিহতের স্বজনরা। পরিবার ও স্থানীয়দের চাপে রোগীকে বামনা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হাচান জামান ইসিজি করে রোগীর মৃত্যু ঘটেছে নিশ্চিত করেন।
বামনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. হাচান জামান জানান, অতিরিক্ত এ্যানেস্থিসিয়া দেওয়ার ফলে অপারেশন টেবিলে রোগী মারা যায়।
এব্যাপারে বামনা থানার অফিসার ইন চার্জ মোঃ শাহাবুদ্দিন জানান, নিহত প্রসুতির স্বামী মো. মহারাজ পন্চায়েত বাদী হয়ে গত সোমবার রাতে ৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে।   আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যহত আছে।
বামনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বাচ্চু বলেন,  প্রসুতি মৃত্যুর ঘটনাটি  তাৎক্ষনিক বামনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রোগীর পরিবারের সাথে কথা বলি পরে রাতেই বামনা মাতৃসদন ক্লিনিকে ভ্রাম্যমান আদালত বসালে ক্লিনিক পরিচালনার কোন বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ায় সিলগালা করি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply