১৮০ কোটি টাকা বকেয়া, ক্ষোভে ফুসছে সরবরাহকারীরা
৩৮০ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ ২৫০ কোটি
৮ মাসে অর্থ ছেড়েছে মাত্র সাড়ে ৬২ কোটি টাকা
অর্থ সংকট নিরসনে কাজ চলছে, শীঘ্রই সমাধান : রেলপথ উপদেষ্টা
এস.এম.পিন্টু
অর্থ সংকটে স্থবিরতা বিরাজ করছে রেলের যন্ত্রাংশ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর পাহাড়তলী স্টোরস শাখায়। অর্থের অভাবে সরবরাহকারীদের বকেয়া প্রায় ১৮০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে একদিকে যেমন সরবরাহকারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে অন্যদিকে প্রয়োজনীয় মালামালের চাহিদা থাকলেও টেন্ডার করতে পারছেনা সংশ্লিষ্টরা। মাঝে মাঝে অতি জরুরী আইটেমের টেন্ডার করার অনুমোদন চাইলেও তা ফেরৎ পাঠাচ্ছে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ফলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে ঝুঁকিতে পড়তে পারে স্বাভাবিক রেল চলাচল। বড় কোন বিপদ থেকে বাঁচতে এখনি প্রযোজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও টাকা ছাড়ের ব্যবস্থা জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
মালামাল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ এর ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. আমির উদ্দীন বলেন, ’যন্ত্রাংশ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আমরা একের পর এক চাহিদাপত্র সিসিএস অফিসে পাঠাচ্ছি কিন্তু তারা মালামাল সরবরাহ করতে পারছে না। আগেও সরবরাহ সময় মতো হতো না তবে বিগত ৪ মাস যাবৎ পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এভাবে চলতে থাকলে নিয়মিত ট্রেন মেরামত করে চলাচল অব্যাহত রাখা খুব কঠিন হবে। তাছাড়া সামনে ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত কোচের চাহিদা রয়েছে এগুলো মেরামতের জন্য অতিরিক্ত মালামাল দরকার কিন্তু চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ না হলে বিপদ অনিবার্য। ’
জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের যন্ত্রাংশ সহ সরঞ্জাম শাখার যাবতীয় কেনাকাটার জন্য গত অর্থ বছরে ৩৮০ কোটি টাকার চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছিল। এর বিপরীতে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ৮ মাসে মন্ত্রণালয় অর্থ ছেড়েছে মাত্র ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থবছরের আর মাত্র ৪ মাস বাকি থাকলেও বরাদ্দকৃত ১৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড়ে গড়িমসি করছে মন্ত্রণালয়। ফলে পরিশোধ করা যাচ্ছে না সরবরাহকারীদের বকেয়া এবং নতুন করে টেন্ডার আহবান করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে ভোক্তা বা ব্যবহারকারীরা বারবার চাহিদাপত্র দিলেও মালামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এদিকে অতিজরুরী মালামাল সরবরাহের জন্য টেন্ডার আহবানের ফাইল ঢাকায় পাঠালেও তা অনুমোদন না করে ফেরৎ পাঠানো হচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে।
যথাসময়ে বিল না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন সরবরাহকারীরা। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে পরিমাণ মালামালের চাহিদা রয়েছে তা পরিপূর্ণ করতে সিসিএস দপ্তরের জন্য কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকার বাজেট দরকার। অথচ মন্ত্রণালয় ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সিওএস পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের জন্য দিতে হয় ৩০ কোটি টাকা আর সিসিএস এর জন্য থাকে মাত্র ২২০ কোটি টাকা। এরমধ্যে এর আগের অর্থবছরের বকেয়া আছে ১৮০ কোটি টাকা। ফলে বকেয়া পরিশোধ ও নতুন করে কেনাকাটায় বেগ পেতে হচ্ছে। ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ না হলে সংকট লেগেই থাকবে বলে মনে হয়। সুত্র জানায়, রেল চলাচলের জন্য লাইন ও স্থাপনার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও সরঞ্জাম কেনাকাটার বরাদ্দে গড়িমসি রেলসেবায় বিপর্যয় ডেকে আনতে পাওে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
অর্থ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) মো. বেলাল সরকার বলেন, ’মালামাল কেনার জন্য কনজ্যুমারদের প্রচুর চাহিদাপত্র জমা হয়েছে। অর্থ সংকটে টেন্ডার করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড়ের বিষয়ে ডিজির দপ্তর থেকে একটি চিঠি সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে পৌছেছে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়ে আবার রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে রেলের মহাপরিচালক (ডিজি) হয়ে এডিজি (অর্থ) তারপর প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) এবং অন্যান্য দপ্তরে যাবে। তবে এই প্রক্রিয়াটি শেষ করার জন্য যদি তদবীরের প্রয়োজন হয় তবে এই অর্থবছর শেষ হলেও অর্থ ছাড় হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকে যাবে। আর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফাইল ছেড়ে দেয়া হলে অর্থবছরের শেষ সময়ে হলেও অতি প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এব্যপারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ’অর্থ সংকটের বিষয়টি সুরাহা করার জন্য আলোচনা চলছে। আশা করছি খুব দ্রæতই সমাধান পাওয়া যাবে।’
অপর একটি সুত্র জানায়, অতিজরুরী মালামাল কেনার জন্য রেলভবনে ফাইল পাঠানো হলেও তা অনুমোদন না করে ফেরৎ পাঠানো হচ্ছে। তবে ২/১ টা ইজিপি টেন্ডার অনুমোদন পেলেও এলটিএম বা ওটিএম এর জন্য একেবারেই অনুমোদন মিলছেনা। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় ইজিপিতে যে কেউ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। অনেকেই সর্বনি¤œ দরদাতা হলেও পরে মালামাল সঠিক সময়ে সরবরাহ করতে পারেনা। ফলে সঠিক সময়ে কাজ করতে সমস্যা হয়ে থাকে। তাই কাজের সুবিধার্থে বিশেষ ক্ষেত্রে এলটিএম বা ওটিএম প্রক্রিয়ায় টেন্ডার আহবান করতে হয়।
এই ব্যাপারে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক/রোলিং স্টক (এডিজি/আরএস) আহমেদ মাহবুব চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।