মামুদুল হক আনসারী
বিজয় দিবসের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি অনেক। বিজয় অর্থ আনন্দ, উল্লাশ। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সনে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করেছে। বিজয়ের পর থেকে জাতি প্রতিবছর দিবসটি রাষ্ট্রিয়ভাবে পালন করে আসছে। সরকার, জনগন, রাজনৈতিক দল , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ গভীরভাবে আনন্দ উদ্দিপনার মাধ্যমে দেশব্যাপি পালন করে এদিন। রাষ্ট্রিয় ভাবে দিবসটি পালনের নানা প্রকারের কর্মসূচি পালন করে আসছে। সরকারি ভাবে জাতীয় ভাবে ও জেলা পর্যায়ে দিনটি পালন করা হয়। কুচক্ওায়াজ , প্যারেড় , খেলাধুলার মাধ্যমে অনুষ্ঠান পালন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন কারী মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। বিজয় স্তম্ভকে এই দিবসে রাষ্ট্রিয়ভাবে সম্মান জানিয়ে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় প্রশাসন আলোচনা সভা সেমিনার সিম্পোজিয়ার এবং র‌্যালীর মতো কর্মসূচী পালিত হয়। শহিদ মিনারে রাজনৈতিক সামাজিক ও রাষ্ট্রিয়ভাবে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
মসজিদ , মন্দির, গীর্জা অন্যান্য উপাসনালয়ে মহান শহিদদের জন্য দোয়া করা হয়। এতিমখানা, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশের বিজয় অর্জনকে সুসংহত ও যাবতীয় দেশি বিদেশি চক্রান্তের হাত থেকে মুক্ত রাখতে আলোচনা পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসূচি পালন করা হয়। জাতীয় নতুন প্রজন্মকে বিজয় দিবসের তাৎপর্যের উপর ভুমিকা তুলে ধরা হয়। একটি জাতির বিজয় যেনো তেনো কথা নয়। বাংলাদেশের জনগন একসাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জন করেছে শোষনের বিরুদ্ধে। সাম্য ভ্রাতৃত্ব বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল বিজয়ের মূল উদ্দেশ্য। এদেশের জনগন শোষন ও বৈষম্যের শিকার ছিল। নানা ভাবে একটি গোষ্ঠি ধারা চরম ভাবে নির্যাতিত নিষ্পেশিত ছিল। ফলে একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে এই জাতি আলাদাভাবে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এই জন্য লাখ লাখ পবিত্র জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। রক্তের স্রোতের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় জাতির জন্য বিরল প্রাপ্তি ও অহংকার। অহংকার গর্ভ এই জন্য যে, পৃথিবীতে এতো অল্প সময়ে বিজয় অর্জন করতে পেরেছে সেই রকম দেশ জাতি খুবই কম। বাংলাদেশের জনগনের ঐকান্তিক ইচ্ছা শক্তি ও আত্মদানের মাধ্যমে বিজয় হয়েছে দেশ।
আমাদের বিজয় আমাদের অহংকার ৫৩ বছরের এই বিজয় গর্ভ ও অহংকারের বার্তা দিয়ে প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর জাতিকে জানান দেয়। বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধা, দেশপ্রেমিক, ছাত্রজনতা, কৃষক-শ্রমিক সকল ধর্ম গোত্রের সকলকে কাধে কাধ রেখে সম্মিলিত ভাবে বিজয়ের পক্ষে থাকতে হবে। সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত দেশিবিদেশি সব ধরণের চোখরাঙ্গানোকে প্রতিহত করে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে থাকতে হবে। বাংলাদেশের বিজয় কোনো ধর্ম গোত্র কারো জন্য নির্দিষ্ট নয়। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের আনন্দ বিজয় এই দিবসে থাকা চায়। আমরা সকলেই এই দেশের নাগরিক। খাল বিল , নদী নালা, পাহাড় পর্বত পুরো মানচিত্র এই দেশের সব মানুষের সমান অধিকার। এখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। ধর্মের কারণে বিভাজন হবে না। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার থাকবে। সাম্প্রদায়িকতার কোনো ধরনের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র এই দেশে সফল হবে না। নাগরিক হিসেবে। রাষ্ট্রপতি থেকে কৃষক পর্যন্ত সকলের সাংবিধানিক অধিকার হবে সমান সমান। রাষ্ট্রিয় অধিকার নাগরিক অধিকার সাংবিধানিক মর্যাদা সব মানুষের জন্য সমান ভাবে প্রাপ্তি নিশ্চিত করে রাষ্ট্র চালাতে হবে। কোনো দেশের কোনো জনগনকে ধর্মীয় কারনে হয়রানি করা যাবে না। চাকরি প্ওায়া থেকে রাষ্ট্রের সব সুযোগ সুবিধা সবার জন্য সমান ভাবে পাওয়ার অধিকার থাকবে। বৈষম্যহীন সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।
বিজয়ের দাবি হলো জনগনের মৌলিক অধিকার প্রাপ্তিকে সুশংহত করা, নাগরিক জীবনকে ভোগান্তি মুক্ত রাখা, মৌলিক অধিকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করা। বিজয়কে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রিয় সকল কাজের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাংলাদেশের মানচিত্রকে সবধরণের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বিজয়ের মহান উদ্দেশ্য কর্মসূচী বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা জন নিরাপত্তা সবকিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। আমাদের অহংকার বিজয়কে কোনে ভাবেই শংকার দিকে ঠেলে দেয়া যাবে না। রাজনৈতিক সামাজিক মানবাধিকার সংগঠন সহ দেশপ্রেমিক সকল গোষ্ঠিকে বাংলাদেশের মানচিত্র ও বিজয়কে সমুন্নত রাখতে সর্বদা ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আজকের মহান বিজয় দিবসে সকল দেশপ্রেমিক শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভির ভাবে সমবেদনা ও আত্মার শান্তি কামনা করছি। বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নতি অগ্রগতি সাফল্য প্রতিষ্ঠায় বিজয় দিবস সাফল্য মন্ডিত হোক।

শেয়ার করুনঃ