এম.আলী হোসেন ও মাহমুদুল হক আনচারী
চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানি ঘোষনা করা হলেও এখনো চট্টগ্রামবাসি বাণিজ্যিক রাজধানির সুফল পাচ্ছেনা। চট্টগ্রামকে গুনগত বাণিজ্যিক রাজধানি করার সুবিধাগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব ধরণের ব্যবসায়িক প্রশাসনিক সুবিধা চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বিদ্যুত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প কারখানার আমদানি রপ্তানির প্রশাসনিক কার্যক্রম চট্টগ্রামেই রাখতে হবে। বাণিজ্যিক রাজধানির ব্যবসায়িক প্রশাসনিক ফাইল এখানেই যেনো কাজের অনুমতি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়। সমস্ত উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। চট্টগ্রামের বন্দরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ইনকাম দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক সচল করা হয়। সেই তুলনায় বাণিজ্যিক রাজধানীর সার্বিক উন্নয়ন জাতীয় সরকারকে চিন্তায় রেখে চট্টগ্রামকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরি করতে হবে।
বানিজ্জিক রাজধানী চট্রগ্রাম। ঢাকার পর চট্রগ্রাম কে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব আয়ের অন্যতম অঞ্চল হিসেবে দেখা হয়। এখানে বাংলাদেশের প্রধান বন্দর রয়েছে। প্রতিদিন শত শত মালবাহী গাড়ী বন্দর থেকে পন্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে পাড়ি জমান, চট্রগ্রামের উৎপাদিত নানা পন্য সামগ্রী দেশ বিদেশে রপ্তানী হয়। দুনিয়ার নানা প্রান্ত হতে চট্রগ্রাম বন্দরে হাজার ধরনের পন্য আসা যাওয়া হয়। চট্রগ্রামের রাস্তাাঘাট সর্বদা ব্যস্ত থাকে। পন্যবাহী গাড়ীতে রোড ঘাট ব্যস্ত সময় পার করে। সব ধরনের ব্যবসার অসংখ্য অফিস চট্রগ্রামে রয়েছে। বাংলাদেশের সব জেলার মানুষ এবং বিদেশী নাগরিকদের ও এখানে অবস্থান আছে। বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতীর অংশীদার চট্রগ্রাম। ইপিজেড, কেপিজেড সহ চট্রগ্রাম জুড়েই আছে নানা ধরনের শত শত শিল্প কারখানা । অর্থনীতির অন্যতম উৎপাদন ঘাঁটি চট্রগ্রাম ।
চট্রগ্রাম যেভাবে দেশের জাতীয় অর্থনীতির জন্য অবদান রাখছে , তার তুলনায় চট্রগ্রামের জনগন নানা ভাবে রাষ্ট্রীয় সেবা থেকে বঞ্চিত । অনেক সেবা প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে হস্তান্তর করা হয়েছে। চট্রগ্রাম অঞ্চলের জনগনের জন্য গড়ে তোলা পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্পটি এখনো পর্যন্ত বন্ধ। সেখানে মাদক সেবীদের আড্ডার আসর বসে । অবৈধ বসবাসকারীদের দখলে ক্যাম্পটি পড়ে আছে । এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারী নানাভাবে ফায়দা গ্রহণ করছে। হাজী ক্যাম্প নিয়ে ইতিপূর্বেও অনেক লেখকই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে লিখেছেন। আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের ওই বিষয়ের উপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত জানা যায়নি । স্থানীয় মান্যগন্য ধর্ম পরায়ন জনগন আমার জানা মতে চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী পর্যন্ত আবেদন নিবেদন করেছেন। তবুও কোনো সু সংবাদ বলার মত নেই বলা চলে। চট্রগ্রাম নামে বানিজ্যিক রাজধানী হলেও বাস্তবিক ভাবে চট্রগ্রামের জনগন নানাদিকে নানাভাবে সেবা পেতে ভোগান্তির শেষ নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়র পলাতক। তিন নভেম্বর নতুন মেয়র হিসেবে সাবেক বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন শপথ গ্রহন করেছে। তিনি ৫ নভেম্বর মেয়র হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বভার গ্রহন করার কথা রয়েছে। আশা করছি তিনি সিটি এলাকার জনগনের দুঃখ দুর্দশা লাগবে রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্দ্ধে উঠে কাজ করবেন।
চট্রগ্রাম সিটি এলাকায় প্রায় আশি লাখের অধিক জনগনের বসবাস। অসংখ্য রাস্তাঘাট রয়েছে। সাথে বিপুল সংখ্যক নালা নর্দমা আছে । মুরাদপুর , বহদ্দার হাট ইপিজেট একেখান সিটি গেইট বড়পোল আশপাশের বিভিন্ন নালা নর্দমা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। সেই নালার ময়লাগুলো রাস্তার ওপরে জমাট করে রাখতে দেখা যাচ্ছে। সেই নালার ময়লা পুনরায় বৃষ্টি ও ধুলাবালির সাথে মিশিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। রাস্তার ওপর বাজার হকার মার্কেট তাদের ময়লাগুলো রাস্তার যত্রতত্র ফেলছে। রাস্তার মধ্যে দোকান বাজার মনে হয় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রশাসন কেউ দেখেও দেখছেনা। অপরিস্কার অপরিচ্ছন্নভাবে নগরীর উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম ৪১টি ওয়ার্ডের সবখানে ময়লা আবর্জনা অপরিস্কার অপরিচ্ছন্নতায় ভরপুর। বাসাবাড়ির সমস্ত ময়লা আবর্জনা উচ্ছিষ্ট নালা ও রাস্তার মধ্যে নিত্যদিন ফেলছি। এইসব ময়লা নালা জ্যাম করছে। আর পলিথিন উচ্ছিষ্ট পানির বোতল নানা জাতের প্লাস্টিক সামগ্রিক কর্ণফূলী নদীতে পড়ছে। নদীর নাব্যতা পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে।
ফলে এইসব অপরাধকে কঠোরভাবে পরিবেশ আইন সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম মতে নিয়ন্ত্রণ করা চাই। বর্ষার পূর্বে নালার ময়লা আবর্জনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে পানি চলাচলের জন্য এখন থেকে নালাগুলো তৈরি করা হোক। ফুটপাত ও রাস্তা থেকে হকার বাজার সরিয়ে ফেলা হোক। তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার উপযোগী জায়গা তৈরি করা হোক। আরও বেশ কিছু এলাকার নালা সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। নগরীর অসংখ্য নালা ময়লা ভর্তি দেখতে পাওয়া যায় । শহারের বাসা বাড়ীর ময়লা আবর্জনার ভাগাড় রাস্তার মোরে মোরে ও নানা ড্রেনের পাশে পড়ে থাকতে চোখে পড়ে । অলংকার, সাগরিকা মোড় , আগ্রাবাদ চোট পুল , বহদ্দার হাট পানি উন্নয়ন বোর্ড, নতুন চান্দঁগাও থানা । নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে দিনের পর দিন বাসা বাড়ীর উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে থাকতে দেখা যায়। দিনের বেলায় ময়লার গাড়ীর খোলা ট্রাকের দুর্গন্ধে রাস্তায় জনচলাচল মারাত্মক ভাবে হুমকিতে পড়ে । মানুষ নাকে মূখে রুমাল দিয়ে ও দূর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয় না । বলা যায়, পুরো শহরেই যত্র তত্র ময়লার স্তুপ দিনের পর দিন জমে থাকে ।
বাসা বাড়ি দোকান, অফিস পাড়ার ময়লা আবর্জনার সরাসরি নালা ড্রেইনে ফেলছে । রাস্তা পরিষ্কার করে সেই আবর্জনা পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নালায় ফেলতে মোটেও চিন্তা করে না । চট্রগ্রাম শহরের বহদ্দার হাট , মুরাদ পুর , ষোলশহর ২ নং গেইটে উত্তর পাশের নালার সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ অনেকদিন থেকেই দেখছি। কাজের কর্মসূচি চলমান আছে। ধীর গতিতে কাজের কারণে ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতি ও ভোগান্তি হচ্ছে। মুরাদপুর হতে বহদ্দার হাট পর্যন্ত বিশ্ব রোডের দক্ষিণ পার্শ্বের অনেক গুলো কাঠের দোকানের ব্যবসা। এন মোহাম্মদ অফিস থেকে রাস্তার দক্ষিণ পাশে সারি সারি কাঠের দোকান । তারা দীর্ঘদিন থেকে এখানকার কাঠ ব্যবসায়ী । তাদের বড় বড় কাটা গাছ , সাইজ করা কাট দোকান থেকে ফুতপাত দখল করে রাস্তা পর্যন্ত এসে গেছে। ওই দিকের বড় বড় ড্রেনের উপর কোনো ড্রেন রাখা হয়নি। নালা আছে, কিন্তু নালার উপর জন চলাচলের ব্যবস্থা নেই। সেই ব্যবসায়ীরা তাদের কাঠ দিয়ে নালার উপর দোকান বসিয়ে কাঠ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বহদ্দার হাট পুলিশ বিট পর্যন্ত কাঠ ব্যবসায়ীদের দখলে নালা ও ফুটপাত দেখা যায়। প্রতিদিন স্থানীয় এবং চট্রগ্রামের নানা অঞ্চলের যাতায়াত কারী জনগন ঝুকিঁ নিয়ে চলাচল করে । দেখা যায়, এসব ব্যবসায়ীরা কাঠের সমস্ত উচ্ছিষ্ট প্রতিনিয়ত নালাতেই ফেলছে। এটি তাদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ফলে বর্ষার সময় সে এলাকায় বৃষ্টির পানি নালায় ধারন করা সম্ভব হয় না । নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় না । অসংখ্য ময়লা আবর্জনায় ওই অঞ্চলের ড্রেন ভরপুর। স্থানীয় এলাকার কমিশনার নিশ্চয় এই বিষয়টি অবগত আছেন । কিন্তু তবুও তার কোনো প্রতিকার বা সংশোধন জনগন দেখছেনা। এসব কারণে মুরাদপুর বহদ্দার হাট এলাকায় বৃষ্টির সময় জনভোগান্তির কথা জনগন বলছে। অভিযোগ শুনা যায় স্থানীয় কমিশনার দেখেও না দেখার মত করে চলছে। ফলে এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার প্রভাব থেকে জনগণ মুক্তি পাচ্ছেনা। সচেতন স্থানীয় নাগরিক সিটি কর্পোরেশনকে এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে নালাকে অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা সিটি মেয়র উপরোক্ত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে চট্টগ্রামের নালা ড্রেনগুলো দখলমুক্ত করবে এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রেখে বর্ষা মৌসুমে নালার পানি চলাচলে জনভোগান্তি লাঘবে সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। নালার ওপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। উন্মুক্ত নালাগুলোকে জন চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করতে হবে।
নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডেই প্রায় ফুটপাত হকারের দখল। ইতিমধ্যে শহরের কিছু কিছু স্পটে হকারদের উচ্ছেদ করলেও পুনরায় তারা ফুটপাত দখল করছে। তাদের জন্য নির্দিষ্টভাবে বসার জায়গা করা যেতে পারে। রুজি রোজগারের জন্য চিন্তা করা দরকার। অন্যথায় বিশৃংখল পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে। নগরবাসী জীবন জীবিকার জন্য ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছেনা। অনেক সময় জনগণ হকারদের তোপের মুখে পড়ে। প্রতিবাদ করলেই ঝগড়া লেগে যায়। কোনো কোনো হকার স্থানীয় কমিশনার এবং রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে তাদেরকে চাঁদা দেয়ার কথা বলে। বিভিন্ন সময় সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ মেজিস্ট্রার্ড অভিযানে ফুটপাত থেকে হকারদের সরাতে দেখা যায়। কিন্তু পরক্ষণেই আবার একই চিত্র শুরু হয়। হকাররা ফুটপাত দখল করে তাদের ব্যবসা চালাচ্ছে। তাদের ব্যবসার জন্য মোটেও নগরবাসীর কোনো অভিযোগ নেই। তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করুক সেখানে জনগণের কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি হলো জনচলাচলের ফুটপাত যেনো সবসময় উন্মুক্ত থাকে। সে দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনকে জনস্বার্থে পালন করতে হবে। নালার ওপর সবধরনের ব্যবসায়ীক দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করতে হবে। নালাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নগরবাসীকে সর্বদা আপনাপন ভাবে সচেতন করার প্রয়োজনীয় কর্মসূচী পরিচালনা করতে হবে।