মাহমুদুল হক আনসারী
আবার অশান্ত পাহাড়। সতেরো সেপ্টেম্বর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি জেলাতে বাঙ্গালি এবং পাহড়িদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাংচুর হচ্ছে। শত শত দোকান ঘরবাড়ি জালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিশ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার জনের মৃত্যু সংবাদ কয়েক শত আহত হ্ওয়ার সংবাদ জানা যায় বিভিন্ন গনমাধ্যমের সূত্র থেকে। হঠাৎ করে পাহাড় অশান্ত। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মুসল্লি মুসল্লি মারামারি ব্যাপকভাবে মসজিদে হামলা, মাজার এবং মন্দির ভাংচুর, কারা করছে এইসব অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত সবকিছু মিলে দেশে এইসব কি হচ্ছে?। চলমান এই সরকারের এই কম সময়ে দেশ সংস্কারের যেখানে কথা হচ্ছিল, সেখানে এইসব সন্ত্রাসি কর্মকান্ড কারা পরিচালনা করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কোথায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলো কী করছে। তারা আগেভাগে এইসব সন্ত্রাসি কর্মকান্ডের পরিকল্পনা জানেনা কেন। রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা কোথায়। সব কিছু মিলে ভিক্ষুক থেকে রাজা পর্যন্ত মনে হয় এখন রাষ্ট্রের কাছে কেউই নিরাপদ নয়। এই আশঙ্কা মোটেও কারো কাম্য হতে পারে না।
পাহাড় হোক অথবা সমতল হোক সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবন, রাঙামাটি, কক্সবাজার পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা জনমনের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। গহীন জঙ্গলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আস্তানা গড়ে তুলেছে। তাদের সশস্ত্র ট্রেনিং ফুটেজ ভাইরাল হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী সশস্ত্র কর্মকান্ড উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পাহাড়ে ব্যাপকভাবে উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন হয়েছে। রাঙামাটি থেকে বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনপদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং হ”েছ। পাহাড়ি জনগণের কর্মক্ষমতা বেড়েছে। কৃষি পণ্য বিপনন বাজারজাত উৎপাদন যোগাযোগ ব্যবস্থার  কারণে বিরাট সফলতা পেয়েছে। এক সময় শান্তি বাহিনীর অপতৎপরতায়  স্থানীয় জনগণ আতঙ্কে ছিল।
বিগত সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচী ও পাহাড়ি জনগণের নাগরিক অধিকার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের ফলে ধারাবাহিক উন্নয়ন হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হলেও আশঙ্কাজনক ভাবে পাহাড়ি সন্ত্রাসী সশস্ত্র বাহিনীর তৎপরতায় উদ্বেগ শঙ্কা বাড়ছে। কেএনএফ নামে জঙ্গি সংগঠন পুরো পাহাড়ি অঞ্চলকে অস্থি রকরে তুলছে। ব্যাংক ডাকাতি, জানমালের অপহরণ আইনশৃংখলা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। এতো অস্ত্র-ট্রেনিং অর্থ আসে কোথা থেকে ? কারা দিচ্ছে? প্রতিবেশি দেশের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ব্যবহারকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ তাদের হাতে আসছে বলে সংবাদ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। সেই অঞ্চলে পাহাড়ি বাঙালি জনগণ সম্প্রীতির সাথে বাস করছে। সরকার তাদের যাবতীয় প্রশাসনিক দপ্তরগুলো সেখানে রেখেছে। সেনবাহিনী, বর্ডার গার্ড, বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী সব ধরণের আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ও নজরদারী রয়েছে। এতো সব তৎপরতার মধ্যেও পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থান জনগণকে ভাবিয়ে তুলছে।
তাদের মদদদাতা গোলাবারুদ এবং প্রশিক্ষণ দাতা কারা, নিশ্চয় স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনীর জানার কথা। কিভাবে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসমূহ দিন দিন তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। সেই বিষয়টি উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলকে নিরাপদ  স্থিতিশীল এবং জনগণের শান্তিপূর্ণ ভাবে বাসযোগ্য রাখার সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে দেশ ও জাতি চলতে বাধ্য।
সংবিধান পরিপন্থি রাষ্ট্রীয় আইন শৃংখলা অমান্যকারী ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এতোগুলো সেবা সংস্থার চোঁখ ফাকি দিয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন কি করে অব্যাহত ভাবে সেই অঞ্চলে তাদের তৎপরতা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি করছে সেটিই এখন চিন্তার বিষয়। নানা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায় পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক প্রায় ২ শতাধিক এনজিও কাজ করছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ এনজিও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলাদেশ বিরোধী চিন্তা চেতনা তৈরি করছে। ওই এলাকায় পাহাড়ি ভিন্ন-ভিন্ন ভাষার গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে বাচাইকৃত একটি শ্রেণীকে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে আলাদা করে ফেলার চিন্তা চেতনা ও কর্মসূচী দিয়ে এগিয়ে নিতে তৎপরতার সাথে জড়িত। এই ধরণের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্য ও মানচিত্র বিরোধী কর্মকান্ড লম্বা সময় থেকে চলমান আছে।
পরিস্কার করে বলতে গেলে বলতে হয় ইহুদি-খ্রীস্টান, মিশনারী তৎপরতা আশঙ্কাজনকভাবে ওই এলাকায় দৃষ্টিগোচর হ”েছ। তারা ধর্মীয় সম্প্রদায় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে উঠে পড়ে আছে। তারা সেই অন্চলে ধর্মীয় সংঘাত, হানাহানি, সৃষ্টি করে অস্থির করতে চায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে। এভাবে হয়তো একদিন তাদের চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। যদি তাই সত্যি হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে আলাদা হয়ে যা”েছ। পাহাড়ে এত উন্নয়ন , পাহাড়ি বিভিন্ন শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে নানা সুবিধায় সরকারি বড় বড় পদে নিয়োগ চাকরি সার্বিকভাবে তাদের পুনর্বাসন এই সব উপকারের কি ভবিষ্যত? পার্বত্য কোটায় চাকরি-বাকরি, শিক্ষা-দিক্ষা নিয়োগে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পাহাড়ি জনগণ রাষ্ট্রীয় সুবিধা বেশি ভোগ করছে। কিš‘ ফলাফল জাতীয়ভাবে শূণ্যের কোটায় ধারণা করছে নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ। যদি পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণে না আনা হয় দেশের স্বাধিণতা সার্বভৌমত্য হুমকির সম্মুখীন হবে। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসি গোষ্টির কিছু অংশ ।
পাহাড়কে শান্ত  স্থিতিশীল জানমালের নিরাপত্তা   স্থানীয় সমস্ত নাগরিকের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। কোনোভাবেই সন্ত্রাসী, দেশ-বিরোধী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করতে হবে। যে বা যারা তাদের মদদে আছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। জনগণ সন্ত্রাসী বাহিনীর যাবতীয় তৎপরতা ধ্বংস করে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বাস্তবায়ন চায়।

শেয়ার করুনঃ