২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৩০/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ২:৩০ অপরাহ্ণ

নবাব সিরাজউদ্দৌলার দেশপ্রেমের ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহবান

     

 

চট্টগ্রামে ২ জুলাই রবিবার বিকেল ৪ টায় চকবাজারস্থ মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজ অডিটরিয়ামে বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার ২৬০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, আজ থেকে ২৬০ বছর আগে ২ জুলাই ১৭৫৭ সালে দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিহত হন। ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীন শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ঘাতকের হাতে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য। ফলে প্রায় ২০০ বছরের জন্য বাংলা স্বাধীনতা হারায়। পরাজয়ের পর নবাবের বেদনাদায়ক মৃত্যু হলেও উপমহাদেশের মানুষ নবাবকে আজও শ্রদ্ধা ও সম্মানের সহিত স্মরণ করে। বক্তারা আরো বলেছেন, বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব আলিবর্দী খাঁ মৃত্যুর আগে দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাকে নবাবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী করে যান। নবাব আলিবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ সালের এপ্রিল মাসে সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে বসেন। নবাবের আপন খালা ঘাতক ঘষেটি বেগম ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলান। সেনাপতি মীর জাফর আলি খান, ধনকুবের জগৎ শেঠ, রাজা রায় দুর্লভ, উমিচাঁদ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। ধূর্ত ইংরেজরা সন্ধির চুক্তি ভঙ্গ করে চন্দননগরের ফরাসীদের দুর্গ দখল করে নেয়। এরপর ১৭৫৭ সালের ১৭ জুন ক্লাইভ কাটোয়ায় অবস্থান নেয়। নবাব ২২ জুন ইংরেজদের আগেই পলাশী পৌঁছে শিবির স্থাপন করেন। ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন সকাল ৮টায় যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু প্রধান সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবের পরাজয় ঘটে। সেই সঙ্গে বাংলা স্বাধীন সূর্য অস্তমিত হয়। বক্তারা আরো বলেন, পলাশীর ষড়যন্ত্রে যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার শোচনীয় পরাজয় ঘটলেও ইংরেজরা ক্ষান্ত হয়নি সেদিন। এরপর তারা নবাবের চরিত্রে নানাভাবে কলঙ্কলেপন করতে থাকে, অন্ধকূপ হত্যা, লাম্পট্য ইত্যাদি। সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করে কলকাতায় একটা মনুমেন্ট তৈরি হয়েছিল। তার নাম ছিল হলওয়েল মনুমেন্ট। পরবর্তিতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে, ৩রা জুলাই, ১৯৪০ এ হলওয়ের মনুমেন্ট অপসারণের জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দিলেন। বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানেরা এক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে ইংরেজদের বাধ্য করে ঐ হলওয়ের মনুমেন্ট তুলে নিতে। পরবর্তিতে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর উদ্যোগে ২৩ শে জুন প্রথম পলাশী দিবস উদযাপিত হয়েছিল কলকাতায়। সাথে ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং মওলানা আকরম খাঁ। এ ব্যাপারে কবি নজরুলের একটি বিবৃতি প্রকাশ পেয়েছিল ‘দৈনিক আজাদ’ এবং ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় ১৯৩৯ সালের জুনে। বিবৃতিতে নজরুলের আহবান ছিল, ‘মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর নেতৃত্বে কলিকাতায় সিরাজউদ্দৌলা স্মৃতি কমিটি উক্ত অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করিবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছেন। কলিকাতা কমিটিকে সর্বপ্রকার সাহায্য প্রদান করিয়া আমাদের জাতীয় বীরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিবার জন্য আমি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের নিকট আবেদন জানাইতেছি। বিদেশীর বন্ধন-শৃঙ্খল হইতে মুক্তি লাভের জন্য আজ আমরা সংগ্রামে রত। সিরাজের জীবনস্মৃতি হইতে যেন আমরা অনুপ্রাণিত হই। ইহাই আমার প্রার্থনা।’ এই প্রার্থনা বিফলে যায়নি। পলাশী দিবস প্রতি বছরই আসে। কখনো সরবে, কখনো নীরবে। জাতীয় বীর সিরাজউদ্দৌলাকে স্মরণ করে অনুপ্রাণিত হয়, ব্যথিত হয়। একথা সত্য, নবাব সিরাজ ইতিহাসের এক ভাগ্যাহত বীর, দেশপ্রেমিক। বক্তারা আরো বলেছেন, আজ ২০-৩০ বছর আগেও নবাব সিরাজউদ্দৌলার ইতিহাস চর্চা ও সিরাজকে নিয়ে নাটক-সিনেমা বাংলার ঘরে ঘরে প্রচলিত ছিল। আমাদের ঐতিহ্য সাহিত্য সাংস্কৃতি ও রাজনীতিকে আমরা নিজেরাই কবর রচনা করছি। আজ-কাল দেশপ্রেমিক সিরাজউদ্দৌলার ইতিহাস চর্চা ও নাটক-সিনেমা নেই বললেই চলে। আমাদের উচিত সিরাজউদ্দৌলার প্রকৃত ইতিহাস ও দেশপ্রেমের ঘটনা গুলো জাতির সম্মুখে তুলে ধরা। সিরাজের ইতিহাসের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হবে। ইন্টারন্যাশনাল হিস্ট্রি রিসার্চ এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে ২ জুলাই রবিবার নবাব সিরাজউদ্দৌলার ২৬০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ এবিএম ফয়েজ উল্লাহ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। ইন্টারন্যাশনাল হিস্ট্রি রিসার্চ এসোসিয়েশন এর বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইতিহাস গবেষক সোহেল মুহাম্মদ ফখরুদ-দীনের সঞ্চালনায় এতে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রবীন রাজনীতিবিদ ও প্রাবন্ধিক সিদ্দিকুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দৈনিক আমাদের বাংলার সম্পাদক মিজানুর রহমান, একেএম আবু ইউসুফ, অধ্যক্ষ ইউনুচ কুতুবী, অধ্যক্ষ সিহাব উদ্দিন চৌধুরী, সৈয়দ শিবলী ছাদিক কপিল, মোঃ শাহ আলম, কবি সিহাব ইকবাল, আলী মোকারিম মুনীরুল হক খোরাশানী, মোঃ শামীম আলী, ডাঃ মোঃ জহির, ডাঃ শওকত আলী জাহান প্রমূখ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply