২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১:৫৩/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ১:৫৩ অপরাহ্ণ

সুনামগঞ্জ জুবিলী ও সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থী বাউল কামাল পাশার অবদানের ব্যাপক গবেষণা দরকার

     

হোসেন তওফিক চৌধুরী
মরমী সাহিত্যে সুনামগঞ্জের অবদান সর্বজনস্বীকৃত এবং সর্বজনবিদিত। সুনামগঞ্জের রাধারমন,দেওয়ান হাছনরাজা,শাহ আব্দুল করিম ও দূর্ব্বীণ শাহ তাঁদের অবদানের জন্য কালজয়ী হয়েছেন। তাঁরা দেশ বিদেশে সমাদৃত স্মরণীয় ও বরনীয়। সুনামগঞ্জে আরো অসংখ্য মরমী সাধক জন্ম নিয়েছেন এবং জীবনভর মরমী সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশে অবদান রেখেছেন। তাঁদের রচিত মরমী সঙ্গীতও গীত হয়। গত ৬ই ডিসেম্বর সুনামগঞ্জে একজন মরমী সাধকের ১১৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। এই সাধকের নাম কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন)। ১৯০১ ইংরেজী সনের ৬ই ডিসেম্বর তিনি দিরাই থানার ভাটিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন এবং ১৯৮৫ইং সনের ৬ই মে মৃত্যুবরন করেন। তার পিতার নাম আজিম উদ্দিন টিয়ার বাপ,মায়ের নাম আমেনা খাতুন ঠান্ডার মা। তাঁর পিতা আজিম উদ্দিনও ছিলেন একজন মরমী কবি। যিনি ১৯৩৭ সনে আসাম পার্লামেন্টের এমসিএ খান বাহাদুর গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে বিলেত ভ্রমণ করেন। মরমী কবির সুযোগ্য পুত্র বাউল কামাল পাশা সুনামগঞ্জের সরকারী জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। সিলেট মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজ থেকে তিনি ¯œাতক ডিগ্রী নিয়েছেন। কামাল পাশা মরমী সাধনা ছাড়াও দেশের চলমান রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও অংশ নিয়েছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি নানকার আন্দোলন,সিলেটের গণভোট আন্দোলন,ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর রচিত “কামালগীতি” সর্বমহলে সমাদৃত হয়েছে। ইতোমধ্যেই “কামাল পাশা গীতিসমগ্র” এবং “বাউল কামালের গান” নামক বই বেড়িয়েছে। সিলেট বিভাগের পাঁচশ মরমী কবি এবং মরমী গানে সুনামগঞ্জ পুস্তিকায় তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সৃষ্টিকে ¯্রষ্টায় সমর্পণের মধ্যে দিয়ে তিনি বাউল গানের মূল বার্তা প্রচার করেন। এছাড়া রোমান্টিক কথায় ভিন্নমাত্রায় বিষয়বস্তুকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের বৈচিত্র্যময় পান্ডিত্য তাঁর গানেই পাওয়া যায়। কলকাতা গ্রামোফোন কোম্পানীর তালিকাভূক্ত শিল্পী ছিলেন তিনি। তার রচিত সৃষ্টিতত্ত্ব গান “দ্বীন দুনিয়ার মালিক তুমি তোমার দ্বীলকি দয়া হয়না” ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রকে করেছে সমৃদ্ধ। ওস্তাদ কামাল পাশা রচিত “তোর কিরুপও দেখাইয়া কি যাদু করিয়া/পাগল হইয়া বন্ধু পাগল বানাইলে”এবং “পান খাইয়া যাও ও মাঝি ভাই /ঐ ঘাটে ভিড়াইয়া তোমার নাও” শীর্ষক ভাটিয়ালী গান সর্বপ্রথম কলকাতা গ্রামোফোন রেকর্ডে পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেন উপমহাদেশের বিখ্যাত ভাটিয়ালী গানের শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী। অনুরুপভাবে ভাটিয়ালী গানের বিখ্যাত শিল্পী আব্দুল আলিম পরিবেশিত “প্রেমের মরা জলে ডুবেনা ও প্রেম করতে দুদিন ভাংতে একদিন এমন প্রেম আর কইরোনা দরদী” গানটির গীতিকারও বাউল কামাল পাশা। ১৯২৮ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সিলেট শুভাগমন উপলক্ষ্যে শ্রীহট্র মুসলিম ছাত্র সম্মেলনে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেন। একুশে পদকে ভূষিত নিজ উপজেলার প্রখ্যাত মরমী সাধক বাউল শাহ আব্দুল করিম ও ওস্তাদ রামকানাই দাসের অগ্রজ মরমী কবি ছিলেন তিনি। মরহুম কামাল পাশা দেশের স্বাধীনতা স্বায়ত্বশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণসঙ্গীত রচনা ও পরিবেশন করে আজীবন শুধু ত্যাগ ও সাধনাই করে গেছেন। কিন্তু কামাল পাশার যতটুকু মূল্যায়ন হওয়ার প্রয়োজন ততটুকু মূল্যায়ন হয়নি। ফলে কামাল পাশা উপেক্ষিতই রয়ে গেছেন। কামাল পাশার অবদান নিয়ে আরো ব্যাপক আলোচনা দরকার। কামাল পাশা সম্পর্কে যদি কোন গবেষক গবেষনা করেন তাহলে আমাদের মরমী সাহিত্যের ভান্ডার আরো সুসমৃদ্ধ হওয়ার উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। পরিশেষে বলা যায়,কামাল পাশা মরমী সংস্কৃতির এক উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন। তাঁর সৃজনশীল অবদান তাকে যুগ যুগান্তর স্মরণীয় বরণীয় করে রাখবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply