২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৬:৩১/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ৬:৩১ অপরাহ্ণ

আনোয়ারায় রাজাকারের হাতে নির্যাতিত বাঁশখালীর সাধন মাস্টার বিচারের আশায় দিন গুনছে

     

১৯৭১ সালের ১৪ই আগষ্ট ওসখাইন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হই। আমার বাড়ি থেকে ২০০ফুট সামনে গেলে আমার স্কুলের একজন শিক্ষককে ৪/৫জন লোক লাঠি, লোহার রড ও কিরিচ দিয়ে এলোপাতারি মারধর করছে এবং কোপাচ্ছে। আমি হতবাকের মত তাকিয়ে রইলাম, ঐ শিক্ষক আমাদের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাস্টার সাধন চন্দ্র দাশ। স্যারের চিৎকারে আশে পাশের অনেক লোক জমায়েত হয়। সাহস করে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। পশ্চিম দিকে চেয়ারে হেলাম দিয়ে এক বৃদ্ধ লোক বসা ছিল। সে চিৎকার করে বলছে আমাদের মাস্টারকে তোমারা মারছো কেন? তোমারা ওকে ছেড়ে দাও। ওই লোকটির নাম হাজী আলি আকবর। যারা মাস্টারকে মারধর করছিল তারা স্থানীয় প্রভাবশালী রাজাকার। তাদের দাপটে পার্শ্ববর্তী ৪/৫ গ্রামের লোক মাথা তুলে কথা বলতে পারত না। পরে জানতে পারি ওই সাধন মাস্টার ওষখাইন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। এ কারণে তাকে স্কুল থেকে ধরে এনে রাজাকারেরা ইচ্ছামত মারধর করে তাকে রক্তাক্ত করে ফেলে।সাধন মাস্টার  ৭/৮ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আবার স্কুলে যোগদান করে।

১৯৭১সালের ২২শে আগষ্ট রাজাকারেরা দত্তের হাটে গিয়ে পরৈকোড়া পোস্ট অফিস থেকে বেতন নিয়ে আসার পথে সাধন মাস্টারের কাছ থেকে টাকাগুলো কেড়ে নিয়ে স্থানীয় কিছু মুক্তিযুদ্ধের লোকদের নাম দিয়ে জোর পূর্বক একটি জবানবন্দি লিখিয়ে নেয় এবং একটি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করে সাধন মাষ্টারকে কোর্টে চালান দেয়। মামলা নং: ৫৬৫ এসডিও কোর্ট, চট্টগ্রাম।

সাধন মাষ্টার র্দীঘ দিন জেল কেটে ছাড়া পাওয়ার পর তার কোন হদিস পাওয়া যায় নি। মাস্টার সাধন দাশকে অমানুষিক নির্যাতনের খবর পেয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর সুবেদার আবু ইসলামের নেতৃত্বে ওসখাইন গ্রামস্থ রাজাকার কমান্ডারের বাড়িতে অপারেশন চালায়। তিনশতেরও অধিক মুক্তিযুদ্ধদের একটি দল রাজাকার কমান্ডারের বাড়ীতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৩ জন রজাকারকে গুলি করে হত্যা করে। পরে রজাকার কমান্ডার পালিয়ে লুকিয়ে যায়। তখন মুক্তিযুদ্ধারা চর্তুদিকে ঘিরে ফেলে এবং রজাকার কমান্ডারকে ধরে গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত গুলি চালিয়ে তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৭১ সালে রজাকারের কমান্ডারের বাড়িটা ছিল ভয়ংকর এক টর্চার সেল ওই বাড়ির নাম শুনলে এখনো মানুষ আঁতকে ওঠে। ওইসব রাজাকারের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ওসখাইন, মামুরখাইন, তাতুয়া, শিলালিয়া, তিশরী, পরৈকোড়া সহ অনেক বাড়ীঘর লুটপাট করা হয়েছে, জ্বালিয়ে দিয়েছে, গোয়াল ঘরের গরু লুট করেছে এবং শিলালিয়া গ্রামের শুলাল দাশ (পুইক্কা)কে গুলি করে একটি চোখ অন্ধ করে দেয় অন্য একটি চোখ নিয়ে দীর্ঘদিন জীবিত থাকলেও কোন বিচার পায়নি।

আমি স্কুল-কলেজে পড়া কালীন সময় ছাত্রলীগের দায়িত্ব ছিলাম তখন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সাধন মাষ্টারের খবরা খবর নিয়ে বাঁশখালী থানার পাশে মহাজন পাড়ায় গিয়ে খোঁজ পায়। তাকে পায়ে ধরে সালাম করে বল্লাম আমি আপনার ছোট বেলার ওষখাইন স্কুলের ছাত্র ছিলাম। স্যারের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলার পর যে সমস্ত রাজাকারেরা স্যারকে মেরে রক্তাক্ত করেছে তাদের সবার নাম বলল। তাদের মধ্যে একজন তালিকাভুক্ত রাজাকার এখনো বেঁচে আছে। ওই রাজাকারের নামে ১৯৭১সালে একটি হত্যা মামলাও হয়েছিল। মামলার জিআর নং: ১৯৫/৭২, ঘটনার তারিখ: ১৯/১১/১৯৭১ স্থান: গহিরা। মামলা নং ও ধারা: আনোয়ারা পি.এস, কেস নং: ৪ তারিখ: ২১/০২/১৯৭২ ইউএস/৩০২/৪৩৬/৩৮০ বি.পি.সি, ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ: চুরি অগ্নিসংযোগ সহ হত্যা, বাদীর নাম: প্রভা পাল, স্বামী: নিরঞ্জন পাল, গহিরা, থানা: আনোয়ারা, চট্টগ্রাম। এই তথ্যটি প্রামাণ্য দলিলঃ মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বই থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্যটি প্রামাণ্য দলিলঃ মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বই থেকে সংগ্রহ করা হয়। যার লেখক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ডক্টর গাজী সালাউদ্দিন।লেখক ও কলামিস্ট: ছাবের আহমদ চৌধুরী

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply