৪ মে ২০২৪ / ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৩:২৮/ শনিবার
মে ৪, ২০২৪ ৩:২৮ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধুর সহচর ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক মিয়া

     

 জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর

ইসহাক মিয়ার জন্ম ১৯২৯ সালের ১লা মে। তিনি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ হাজীপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি আলী-তমিজা খাতুন দম্পতির ৪ সন্তানের মধ্যে ১ম সন্তান।

ইসহাক মিয়ার জীবনাবলী ও আমার কিছু স্মৃতি কথা

ছোট বেলা থেকে দুরন্তপনা, মেজাজি, সৎ সাহসী ও সুদর্শন ছিলেন ইসহাক মিয়া। ছাত্র জীবন থেকে উনি খুব প্রতিবাদী ছিলেন। ১৯৪৫ সালে একবার রাণী এলিজাবেথ এসেছিলেন চট্টগ্রাম সি আর বি তে। সেসময় তিনি সাইকেল চালিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন রাণীকে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন নেতা এম এ আজিজের হাত ধরে। এম এ আজিজ উনাকে বক্তব্য কিভাবে শিখতে হয় বলেছিলেন, ‌‘আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি বক্তব্য দিতে থাকো, মনে করবা তোমার সামনে অনেক শ্রোতা।’

ইসহাক মিয়া ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে জাতির পিতা চট্টগ্রামে আসলে এম এ আজিজ সাহেব উনার সাথে ইসহাক মিয়া, এন জি মাহমুদ কামাল (মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিস সাহেবের চাচা), রসুল নিজাম, তারেক গনি ও অন্যান্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। জাতির পিতার সংস্পর্শে আসার পর উনি রাজনীতিতে উজ্জীবিত হতে থাকেন। ১৯৫৪ সালে ইসহাক মিয়া বৃহত্তর আগ্রাবাদ এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম আসলে চট্টলা সার্দুল এম এ আজিজকে বললেন, ইসহাককে ডাকো ওর গাড়ি নিয়ে মাইজভান্ডার যাবো। ইসহাক মিয়া তার জীপ গাড়ি EVD 1684 নিজে চালিয়ে চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এন জি মাহমুদ কামাল (দেলোয়ার হোসেন মাইজভান্ডারীর মেয়ের জামাই) ও অন্যান্যদের সাথে নিয়ে মাইজভান্ডার সফর করেন। সেখানে ১ রাত অবস্থান করেন। দেলোয়ার হোসেন মাইজভান্ডারি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইংগিত দেন এবং প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। ইসহাক মিয়া বঙ্গবন্ধু, এম এ আজিজ ও জহুর আহমদ এর সান্নিধ্যে আন্দোলন, সংগ্রাম চালিয়ে যান।

১৯৬৬ সালে ঈদগা হালিশহর নিবাসী এয়াকুব আলী কন্ট্রাক্টর ইসহাক মিয়ার ভগ্নিপতি হন। উনার বড় মেয়ের জায়পর্দ অনুষ্ঠানে আলিম উল্লাহ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করলে তৎক্ষনাৎ ইসহাক মিয়া তীব্র প্রতিবাদ ও তর্ক-হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। মুসলিম লীগ নেতা আলীমউল্লাহ চৌধুরী উনাকে জেল বন্দী করেন। ১৯৬৬, ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে অংশগ্রহণ, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতির পিতা ইসহাক মিয়াকে বন্দর, পতেঙ্গা, পাহাড়তলী চট্টগ্রাম ৮ আসনে মনোনয়ন দেন। বাকী মনোনয়ন গুলো এম এ আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরিকে দায়িত্ব দেন। ইসহাক মিয়া ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। উনি বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে উনাকে জিজ্ঞেস করতেন তোর ভিয়েতনামের খবর কি। তৎকালিন বন্দর আসনটি ছিল ভিয়েতনামের মত জরাজীর্ণ। আমি নানুকে জিজ্ঞেস করতাম বঙ্গবন্ধু আপনাকে কেমন স্নেহ করতেন, নানু উত্তরে বলতেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলতেন, তোরা আমার কবুতর, তোরা সবসময় আমার চারপাশে ঘুরঘুর করবি। নানু ১৯৭০ সালে ৭টি গরু জবাই দিয়ে আগ্রাবাদ তার নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে দাওয়াত করে এনেছেন। উনার বড় ছেলে মো রেজওয়ান, মোঃ মহসিন, বড় মেয়ে আফরোজা বেগম এবং আমার মা ফরিদা ইয়াসমিন উনাকে ফুলের মালা পরিয়ে ছিলেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা হল। শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। ইসহাক মিয়া, আতাউর রহমান কায়সার মিয়ারা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাঁশখালী, চকরিয়ার দিকে চলে গেল। পাঞ্জাবীরা উনার আম মার্কা ওয়েল মিল, সাবান ফ্যাক্টরি, বাস জ্বালিয়ে দেয়। আমার নানি ৬ সন্তান নিয়ে এ বাড়ী ও বাড়ী আশ্রয় নেন আত্বীয় স্বজনদের বাসায়। যুদ্ধের সময়কালীন উনার ৭ম সন্তান জন্মগ্রহণ করেন এক কঠিন সময়ে। একদিন আমার মা পার্শ্ববর্তী নানারবাড়ীতে খাবার আনতে গিয়েছিলেন ৮ বছর বয়সী বড় মামা সহ। পথে কেউ পাঞ্জাবীদের বলে ‘ইয়্যে চেয়্যারম্যান কি লারকী’ আম্মু আর বড় মামা দৌড় দিয়ে পালালো। নানা, নানি আর আম্মার কাছে শুনেছিলাম যুদ্ধ চলাকালিন দুর্বিষহ জীবনের গল্প।

দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনের একদিন পর নানু বাসায় ফিরলেন, নানুকে জীবিত দেখে সবার সে কি আনন্দ। পরবর্তীতে নানু ১৯৭২ সালে গণপরিষদ সদস্য হন, বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নানুকে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন। উনি খুব সৎ মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া দায়িত্বকে তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি ৪০টি স্টিভিডার লাইসেন্স দেন যার মধ্যে নামে বেনামে একটি লাইসেন্সও তিনি নিজের কিংবা কোন আত্মীয়ের নামে দেননি। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালো রাত সব নি:শেষ করে দিল। ইসহাক মিয়া দল বদল করেন নি। বঙ্গবন্ধু ও উনার পরিবারের সাথে বেঈমানী করেন নি। জেল, জুলুম আন্দোলনের মাধ্যমে দিন, মাস, বছর পার করতে লাগলো।

আমার জন্ম ১৯৮৩ সালের ২৫ই জানুয়ারী। নানুভাই প্রতিদিন আমাকে আদর করার জন্য চলে আসতেন এলাকায় সবাই বলত এম পি সাহেব ‘আই গেইয়্যে নাতিরে আদর গরিবার লাই’। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি। ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইসহাক মিয়া স্পিকার ও তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী ব্যারিস্টার সুলতানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। জনপ্রিয়তা অর্জন করে সারা বাংলাদেশে আলোচিত হন। প্রেসিডেন্ট এরশাদ নানু ভাই আর আখতারুজ্জামান বাবু নানাকে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করার প্রস্তাব দেন। উনারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক কখনোই বেঈমানী করেন নি। ১৯৮৭ সালে আমি সেন্ট প্লাসিড স্কুলে ভর্তি হই। নানু আমাকে সপ্তাহে ২-৩ দিন স্কুলে আনতে যেতেন। আমি খুব আনন্দ পেতাম। আইসক্রিম, খেলনা কিনে দিতেন। ঢাকার সংসদ ভবনে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নানুর রুমের এক পাশে বাবু নানা থাকতেন, অন্য পাশে শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সাহেব থাকতেন। আমি একদিন ছিলাম নানুর সাথে। আন্দোলনের সময় সকল রাজনীতিবিদরা রাজবন্দী হন। আমি আম্মা, মামাদের সাথে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে যাই নানুর সাথে দেখা করতে ভিতরে গেলাম। দেখা করলাম উনি কপালে চুমু দিলো আদর করল, এখনো চোখে ভেসে উঠে নানুর সাথে অনেক স্মৃতি। নানু আমাকে শৈশবে ১৫ই আগস্ট এর বিভীষিকাময় রাতের বর্ণনা করেছিলেন। রাতে ঘুমানোর সময় কল্পনার মাধ্যমে চোখে ভেসে আসত কি করুণ চিত্র আমার মাথায় সবসময় ঘুরত শেখ রাসেলের ছবি। প্রতিবছর আমি এই দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। সকালে অংশগ্রহণ করতাম চিত্রাঙ্গন, কবিতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।

এরশাদ পিরিয়ডের শেষ দিকে একদিন মহিউদ্দিন চৌধুরী নানা রিক্সা নিয়ে নানুর বাসায় আসলেন আমি যখন বারান্দায় খেলছিলাম। উনি আমাকে খুব আদর করত আমাকে দেখলেই বলত ‘রাউজাইন্যা নাতি’। আমাদের গ্রামের বাড়ি রাউজান নোয়াজিষপুর। আমার নানুকে উনি বলতেন, ‘ওদা ওনর নাতি ওনর নান’। একদিন আমাকে ২ টাকা দিয়েছিলেন লাটিম কিনার জন্য।

ছুটির দিনে কোন অনুষ্ঠান বা বন্ধুদের ( আখতারুজ্জামান বাবু নানা, কায়সার নানা, মান্নান নানা, মোশারফ নানা, ইদ্রিস বিকম নানা) বাসায় নিয়ে যেতেন। ১৯৯১ সালে উনি যখন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে চট্টগ্রাম ৮ আসনে নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এ আসেন ট্রেনে করে তখন রাত ১০ টায় পুরনো স্টেশন থেকে নানুর সাথে হেটে চৌমুহনি হাজিপাড়ার বাসায় যাই। কি আনন্দ রাস্তায় মানুষ আর মানুষ। তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। নির্বাচনী প্রচারণার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম আসলেন। পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে অলংকার রাস্তায় মানুষ সব নেমে পড়ে। বিএনপি তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে। সারাদেশে আলোচিত নাম হয়ে উঠে ইসহাক মিয়া। কালো টাকা আর ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হয়। ১৯৯৬ সালের আন্দোলনে উনারা ঘরে থাকতে পারতেন না। প্রায় সময় আমাদের বাসায় নেতাকর্মীদের নিয়ে থাকতেন। আমাদের বাসা ছিল সদরঘাট কালীবাড়ী (নিউ মার্কেটের কাছে)। রাতে মান্নান নানা, মোসলেম নানা, ইদ্রিস বিকম নানা, আবু তালেব নানাসহ আরও অনেকে নানুর সাথে আমাদের বাসায় রাতে থাকতেন। আমি উনাদের সেবা করতাম। ১৯৯৬ সালে দল ক্ষমতায় এলো। স্কুল ছুটি হলে বৃহস্পতিবার বিকেলে নানু বাসায় যেতাম শুক্রবার নানুর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতাম। ১৯৯৯ সালে সরকারি মুসলিম হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করি। তারপর সরকারি সিটি কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দেয় তারেক সোলাইমান সেলিম ভাই। ১৯৯৯ সালে প্রথম নানুর সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়। নানুকে জেলা পরিষদ প্রশাসক করার জন্য। পরবর্তীতে তা বাস্তবায়িত হয়নি। নানু ছিলেন মাঠে ময়দানে। আমি ছিলাম তখন নানুর একান্ত সহকারী। নানুকে পাঞ্জাবি পড়ানো, মেডিসিন খাওয়ানো, রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, মিছিলে অংশগ্রহণ, সবসময় নানুর সাথে ছায়ার মতো ছিলাম। ২০০১ সালে আমি HSC পাশ করে সরকারি কমার্স কলেজ এ ভর্তি হলাম। নানুর বাসায় সবসময় মান্নান নানা, মহিউদ্দিন চৌধুরী, নুরুল ইসলাম বিএসসি, মোসলেম উদ্দিন, ইদ্রিস বিকম, নুরুল আলম চৌং, আবু তালেব চৌং, মাহতাব উদ্দিন, নইমুউদ্দিন, আ.জ.ম নাসির ভাই, সুজন মামা, আবসার মামা, বাচ্চু মামা সকলের আসা যাওয়া ছিল।

ওয়ান ইলেভেনের সামরিক সরকারের সময়ে নানু চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগকে দুর্যোগে সংঘটিত করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দল জয়ী হওয়ার জন্য নানু চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০১০ সালের মেয়র নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ইসহাক মিয়াকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য কাজ করার নির্দেশ দেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী নানু ইসহাক মিয়াকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নিয়োগ করলেন। উপদেষ্টা পরিষদের মিটিং হলে নানুকে নিয়ে গণভবনে নিয়ে যেতে হতো। ২০১৩ সালের মে মাসের শেষের দিকে অর্থমন্ত্রীর নৈশভোজের আমন্ত্রণে নানুর সাথে চীন মৈত্রি সম্মেলন কক্ষে গিয়েছিলাম। নানুর সাথে অনেক খুনসুটি হল উনার অতিরিক্ত টাকা ছিল না, যা ছিল চলার মতো সৎভাবে সচ্ছলতার সাথে জীবন যাপন করতেন। বর্তমানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজর রহমান ফিজার সাহেব এগিয়ে এসে নানুকে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেন। নানু উনাকে বললেন আপনি কষ্ট করছেন উনি বললো, ‘লিডার আপনি ১৯৭০ এর এম.পি আমি তখন ছাত্রলীগ করি’। আমার চোখে পানি আসলো, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরি, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল সাহেব সবাই একে একে হাত মিলিয়ে বললেন ইসহাক ভাই কেমন আছেন। কিছুক্ষণ পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসলেন সকলের সাথে কথা বললেন নানুকে বললেন চাচা কেমন আছেন আপনার শরীর ভালো? নানু পরিচয় করিয়ে বললেন আমার নাতি। আমি সালাম করলাম নাম জিজ্ঞেস করল। আমি নাম বলার পর আমাকে বললেন ‘বাবর’ দিল্লির সম্রাট নানুর মতো হতে হবে। আমার লোম দাঁড়িয়ে গেল। উনার কথা আজীবন মনে রাখব, উৎসাহ দিলেন ভবিষ্যৎ রাজনীতি করার জন্য,বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হওয়ার জন্য। ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নানুকে আবারও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করেন। ৮৪+ বয়সে নির্বাচন মাঠে বিচরন, ওবাইদুল কাদের সাহেবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠক, নানুর বাসায় কেন্দ্রীয় নেতাদের আপ্যায়ন অনেক স্মৃতি জড়িত। ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নানুর সাথে যাওয়া। শ্রদ্ধেয় আবদুল হামিদ সাহেব স্মৃতিচারণ করলেন, ১৯৭০, ১৯৮৬ সালের এম.পি হোস্টেলের রাজনীতি, ইসহাক মিয়া ও আখতারুজ্জামান বাবু সাহেবের পাশের রুমে থাকতেন, চা এর আড্ডা চলতো প্রায় সময়, উনি নানুর সাথে কিছু রসিকতা করলেন।

গত কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের পরিবারকে ডেকে উনার মহামূল্যবান ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় দিয়ে ইসহাক মিয়ার পরিবারের খবরা-খবর নিলেন, সম্মান দেখালেন ইসহাক মিয়ার জন্যে। চোখের পানি মুছে স্মৃতিচারণ করলেন জীবনে এর চেয়ে বেশি সম্মানের আর কিছু হতে পারে না। উনি ১৯৬১ সালে চট্রগ্রামে সুলতান আহমদ কন্ট্রাক্টর এর মেয়ের বিয়েতে এসেছিলেন তখন নানুর জীপ গাড়ি করে কাপ্তাই যাওয়ার সময় টাইগার পাস এর পাহাড়ের সৌন্দর্যের কথা স্মৃতিচারণ করেন। আমরা ধন্য, চিরকৃতজ্ঞ জাতির পিতার কন্যার প্রতি। উনি বললেন তোরাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তোরাই তো আগামীতে আওয়ামী লীগের হাল ধরবি। তোরা চাচার রক্ত পরিশুদ্ধ। মাঠে কাজ করো মূল্যায়িত হবা। বড় মামা মো: রেজওয়ান, ছোট আন্টি কাউন্সিলর জাহেদা বেগম পপি, আমাদের চোখের পানি ঝড়লো উনার আবেগ, ভালোবাসায়।

অবশেষে ২০১৭ সালের ২৪ই জুলাই সকাল ১১:১৫ ঘটিকায় এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইন্তেকাল করেন। প্রধানমন্ত্রী শোকবার্তা পাঠালেন ‘বাংলাদেশ যতোদিন থাকবে লাল সবুজের পতাকায় বেঁচে থাকবেন ইসহাক মিয়া’। নানু বেঁচে থাকতে একটা কথা সব সময় আমাদের বলতেন, আমি তোমাদের আদর্শ ও সততার শিক্ষা দিলাম, তোমরা বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তে পরিচয় দিতে পারবা, গণপরিষদ সদস্য, সংবিধান প্রণেতা ও এম.পি এর দৈহিত্র সবাই সম্মানের চোখে দেখবে। নানুর রাজনৈতিক শিক্ষা, জীবনের আদর্শ, উপদেশ মেনে সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছি।

লেখক: ইসহাক মিয়ার নাতি ও সাবেক একান্ত সহকারী

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply