মদ খাইয়ে বলৎতকার করতে গিয়ে হামলার শিকার চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী
মিরসরাই প্রতিনিধি
মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল চৌধুরীর উপর হামলার ঘটনায় জট খুলতে শুরু করেছে। হামলার ঘটনায় এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে মিরসরাই থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সকালে মিরসরাই থানা পুলিশ সাখাওয়াত হোসেন (১৮) নামে এক কিশোরকে চট্টগ্রাম আদালতে চালান করেছে। আটককৃত কিশোর নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর থানার ৪ নং চর ওয়াফদা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড চর ওয়াফদা গ্রামের হকসাবের ছেলে।
মামলার তদন্ত কাজে সম্পৃক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আটককৃত কিশোর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলার ঘটনা শিকার করেছে। আটককৃত কিশোর জানায়, চেয়ারম্যানের যৌন নিপীড়ন থেকে রেহাই পেতে হামলা করেছে। চুরি, ছিনতাই, কিংবা রাজনৈতিক কারনে নয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল চৌধুরী হামলাকারীদের পূর্ব পরিচিত। পূর্বে একাধিক বার বাংলোয় শ্রমিকের কাজ করতে এসেছিল তারা।
চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ কিশোর সাখাওয়াত পূর্বে বাগানের কাজ করতে আসলে তাকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। পূর্বের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পুনরায় গত ১০ জুলাই বাংলোর কাজ আছে কিনা জানতে চায়। জাহেদ ইকবাল কাজের সুবাদে তাদের বাংলোয় আসতে বলেন। বাংলোয় আসার জন্য তার মোবাইল নাম্বারে ২শ টাকা বিকাশ করে ভাড়া বাবদ। এসময় তার সাথে ২২ বছরের আরও এক যুবক ছিল। ঘটনার দিন রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে পাহাড়ি এলাকার নির্জন বাংলোয় আলাদা পাশাপাশি দুটি কক্ষে শুয়ে পড়ে রাত ১০টার দিকে। রাত সাড়ে ১১টায় কিশোর সাখাওয়াত কে জোর পূর্বক চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী তার কক্ষে নিয়ে বলাৎকার করার চেষ্টা করেন। বলাৎকার থেকে নিজেদের রক্ষা করতেই দুইজনে মিলে চেয়ারম্যানের উপর হামলা করে। এতে মাদকাসক্ত চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল খেই হারিয়ে রক্তাক্ত হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলে বাহির থেকে গেইটে তালা লাগিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। গত বছর স্থানীয় এক প্রাইভেট ক্লিনিকের দেবু নামের এক আবাসিক ডাক্তারের সাথে তার সক্ষতা গড়ে উঠে। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সক্ষতার খাতিরে হাসপাতালের ডিউটি বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের বাংলোয় মদের আড্ডায় জেতেন তিনি। মাদকাসক্ত অবস্থা এই ডাক্তারকেও বলাৎকারের চেষ্টা করেন সাবেক এই চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও থানা পুলিশের সহায়তায় ডাক্তারকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনা জানাজানি হলে কর্তব্যরত হাসপাতাল থেকে বহিষ্কার করা হয় ওই ডাক্তারকে।
বিষয় গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, এসব বানোয়াট । আমি যদি এমন কিছু করে থাকি তাহলে আমার বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন। আর বাংলোয় কি হয়েছে কারা আমার উপর হামলা করছে কি দিয়ে হামলা করেছে এসব আমার স্বরণে নেই।
সাখাওয়াতের মা নাছিমা বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার ছেলে অত্যন্ত সহজ সরল। আমরা অত্যন্ত দরিদ্র তবু আমার ছেলেরা কোন খারাপ কাজের সাথে জড়িত না। আমার ছেলে গার্মেন্টসে চাকরি করতো। এক লোকের মাধ্যমে ভালো কাজের সন্ধানে মিরসরাইয়ের এক চেয়ারম্যানের বাগান বাড়িতে যায়। সেখানে ওই চেয়ারম্যান তাদেরকে রাতের বেলা জোর করে মদ খেতে দেয়। মদ খাওয়ার পর আমার ছেলে ও ফয়েল অসুস্থ হয় পড়লে তাদের সাথে খারাপ আচরন করেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের লালসা থেকে বাঁচতে তারা চেয়ারম্যান কে মদের গ্লাশ ও বোতল দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে আসে। আমার ছেলে কোন চোর ডাকাত নয়। আপনারা আমার ছেলেকে বাঁচান।
আটককৃত কিশোর সাখাওয়াতের এলাকা ৩নং চর ওয়াফদার ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন জানান, বুধবার সকালে এক কিশোরকে আমার এলাকা থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই থানা পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে বলে জেনেছি । ওই কিশোরের পরিবার হাতিয়া এলাকা থেকে এসে ৪ বছর আগে আমার এলাকায় বাড়ি করেছে। আমার জানা মতে পরিবারটি অত্যন্ত সহজ সরল ও নিরীহ প্রকৃতির। সাখাওয়াত জীবিকার তাগিদে কাজ করতে চট্টগ্রাম গিয়েছে।
মিরসরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কবির হোসেন জানান, চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী লিখিত হামলা ও লুটের অভিযোগের ভিত্তিতে সাখাওয়াত হোসেন নামে এক যুবককে আমরা আটক করে আদালতে প্রেরণ করেছি। হামলার ঘটনা রহস্য উদঘাটনে আদালতে রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হামলার মূল ঘটনা জানতে পারবো। তবে হামলার ঘটনা রহস্য জনক।