২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১০:৪২/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ১০:৪২ অপরাহ্ণ

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নিরাপত্তাহীনতায় চলছে রাজশাহী সজীব গ্রুপ প্রতিষ্ঠান

     

 মাজহারুল ইসলাম চপল
সারাদেশ আতঙ্কিত ও আলোচিত নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে সদ্য ঘটে যাওয়া সজীব গ্রুপ প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ড। এই ঘটনায় দেশের সর্বস্তরের মানুষের মনে যেন বেদনার দাগ কাটছে। এখন সকলেরই দৃষ্টি এই গ্রুপের অন্যান প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। এই গ্রুপের এমনই প্রতিষ্ঠান রয়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের চব্বিশনগর এলাকায়। হাসেম এগ্রো প্রসেসিং লিঃ ও হাসেম অটোরাইস মিলস্ লিঃ। এই এলাকাতে দীর্ঘদিন থেকে কোম্পানি দুটো নির্বিঘ্নে কাজ করে আসলেও বর্তমানে তা প্রশ্নবিদ্ধ। আগে থেকে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও অলৌকিক ক্ষমতায় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সচেতন মহল ও প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকদের একটি অনুসন্ধানী টিম যায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অবস্থিত সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে যেতেই অভিযোগের ফুলঝুড়ি নিয়ে হাজির সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা। সুকৌশলে জানার চেষ্টা করা হয় তাদের দুর্দশার কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক বলেন, ভেতরে শিশু শ্রম চলছে নির্বিঘ্নে, সেখানে যে জুস তৈরি হচ্ছে তা পচা ও ভাল আম মিশ্রিত। এ ছাড়াও সেখানে শিশুদের খাটিয়ে পারিশ্রমিক দিচ্ছে সামান্য। সেখানে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনিবারক যন্ত্র পর্যাপ্ত নাই। যেটা আছে তা শুধু নাম মাত্র। অথচ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করার কথা কলকারখানা পরিদর্শন ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের। তাদের কোন ভুমিকা নেই। এদিকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৮-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কেউ যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে, তাহলে ঐ প্রতিষ্টানকে অর্থদণ্ড করা হবে। তবে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে। কিন্তু রাজশাহীতে অবস্থিত সজীব গ্রুপের উক্ত প্রতিষ্ঠানে চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা। শ্রমিকদের নিরাপত্তায় নেই কোন উপযুক্ত সরঞ্জাম। প্রশ্ন উঠেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে। শ্রমিকদের অধিকার খর্বসহ নানাবিধ সমস্যা থাকলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেজান জুস কারখানায় কাজ করছে শতাধিক শিশু। এই শিশুদের বেশিরভাগ ১০ বছরের মধ্যে। আবার তারা নোংরা পরিবেশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও পাচ্ছেন না নায্য মূল্য। নেই কোন সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। এছাড়াও কারখানাটিতে ইলেকট্রিক চুল্লি থাকার কথা থাকলেও সেখানে জুস তৈরি হচ্ছে লাকড়ি বা খড়ির খড়ির আগুনে। প্রশ্ন রয়েছে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়ে। দেখার মত কোন কার্যক্রম নেই কোন প্রতিষ্ঠানের। মিডিয়ার অনুসন্ধানী টিম শত চেষ্টা করেও কারখানার ভিতরে ঢুকতে পারেনি। মিডিয়াকর্মীরা গেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজার ফোন বন্ধ করে দেয়, এবং লোক মারফত বলতে বলে ম্যানেজার নাই। তবে গেটে কয়েকটি শিশুকে দেখা যায়। পরে রাইস মিলের গেটে গেলে, সেখানে দায়িত্বরত এ্যসিন্ট্যান্ট ম্যানেজার সোহাগ জানান, আমাদের সব ঠিক আছে কিন্তু ভিতরের ঢোকার অনুমতি নাই। বিষয়টি নিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টার পর পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করলে জানা যায়, রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর এখন অসুস্থ্য। দায়িত্বরত উপ-পরিচালক (ডিডি) তিনি রয়েছেন মাতৃকালীন ছুটিতে, সহকারি পরিচালক (এডি) করোনা আক্রান্ত। আর অফিস লকডাউনে বন্ধ। পরবর্তিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ- মহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভুইয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সেখানে শিশু তো থাকার কথা নয়, আমি ১০ জুলাই কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। তবুও আমরা গুরুত্বসহকারে দেখবো। তিনি আরও বলেন, ১৪ বছরের উপরে কেউ শিশু আইনে পড়ে না। শিশুদের অধিকার খর্ব হচ্ছে বললে তিনি বলেন, আমাদের কেউ অভিযোগ দেয়নি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন নেই কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন এরুপ হওয়া কথা নয়। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কাজ করছেন শ্রমিকরা প্রশ্ন করছে উপ-মহাপরিদর্শক বলেন, সেখানে কাজের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কথা। তারপরও ঈদের ছুটি কাটলে আবার পরিদর্শন করবো।
                                                                                           যুবলীগ নেতা ও সাংবাদিক আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ
রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মোহনপুর মডেল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি যায়যায়দিন প্রত্রিকার মোহনপুর থানা প্রতিনিধি মো.আশরাফুল আলমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল) ঢাকায় এ প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল ১৩ জুলাই মঙ্গলবার রাতে তাকে বিশেষায়িত এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল নিয়ে গেছেন তার স্বজনরা। তিনি গত ৭ জুলাই স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগ ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এবিষয়ে আশরাফুলের ছোট ভাই ডেন্টিস ডাঃ মতিউর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার শারিরিক বিভিন্ন পরীক্ষা করেন। আশরাফুলের মাথায় জখমি জায়গায় অনেকগুলি সেলাই দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তার শরীরের ডান পাশ অবস হয়ে গেছে। তিনি কাউকে চিনতে ও কথা বলতে পারছেন না। এমআরআই অব ব্রেইনসহ কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, তার মাথায় জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। দিন দিন তার শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে রামেক হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। সেখানে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই বুধবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ভীমনগর গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। সেদিন দুপুরে জাহাঙ্গীর, সোহেল,বকুল, মুকুল মাস্টারের নেতৃত্বে প্রায় ৪০/৪৫ জনের সংঘবদ্ধ একটি দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুবলীগ নেতা ও সাংবাদিক আশরাফুলকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় আশরাফুল ও তার লোকজন লীজকৃত পুকুর পরিচর্যা করছিলেন। এসময় তারা আশরাফুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কয়েকটি আঘাত করে। তাকে বাঁচাতে প্রতিবেশী শিরিনা বেগম ও সমতুল্লা এগিয়ে আসলে তাদেরও কুপিয়ে জখম করে তারা। এ ঘটনায় বাগবাজার গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান (২৯)কে মারধোর করা হয়েছে। আশরাফুলের বাড়িঘর ও মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আসামীরা পালিয়ে যান। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ওই এলাকায় পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় মোহনপুর থানা পুলিশ কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply