বে টার্মিনাল প্রকল্পে ধীরগতি এখনো সম্ভব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়নি
শাহীন আহাম্মেদ
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বে টার্মিনাল নির্মাণ উপকূলে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু উদ্বোধন হলেও বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। দেশের আমদানি রপ্তানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে পতেঙ্গা হালিশহরের সাগর উপকূলজুড়ে বে টার্মিনাল গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
সুত্রমতে, গত দুই বছরে এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিজ সম্ভাব্যতা যাচাই কাজও সম্পন্ন হয়নি। দুই মাস আগে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হলেও দাপ্তরিক কাজের জন্য তাকে এখনো দেওয়া হয়নি কোন দপ্তর বা অফিস। প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পি পি পি) মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে হওয়ার কথা রয়েছে। তাই আগামী সেপ্টেম্বরে দিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আগ্রহী বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। এরপর ওই মূল কাজ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।
প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০ কোটি ডলার প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প বাস্তবায়নে দে পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি পি এস এ ও সৌদি আরবের রেড সি, গেটওয়ে টার্মিনাল কে, আর এস জি টি সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, নগরের পতেঙ্গা হালিশহর এলাকায় সাগর উপকূলের ৮৭১ একর ব্যক্তি মালিকাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে জেগে ওঠা আরও ১ হাজার ৬০০ একক সহ ২ হাজার ৫০০ একর জমিতে টার্মিনালটি নির্মাণের কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে ব্যক্তি মালিকাধীন ৬৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের অবশিষ্ট ৮০৩ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি মিলছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অধিগ্রহন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। তবে এ কাজে তেমন গতি নেই । চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়ে প্রায় পাঁচ গুন বড় প্রস্তাবিত বে টার্মিনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের, সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের বর্তমান অবকাঠামো ৪৫০ একর জমির উপর। এ বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনাল হলে ভিতরে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ। ফলে বন্দরে প্রতিবছর যে পরিমাণ আমদানি রপ্তানী পণ্য হ্যান্ডেলিং হচ্ছে বে টার্মিনালে হ্যান্ডলিং হবে এর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার উপর ভিত্তি করে জাহাজ গুলো জেটিতে ভেড়ে, আর মাদার ভেসেল গুলোকে বহিনোঙরে অবস্থান করতে হয়। বে টার্মিনালে দিনে রাতে জাহাজ জেটিতে ভিড়তে এবং ছেড়ে যেতে পারবে জাহাজ ও মাদার ভেসেল। এতে পণ্য পরিবহন খরচ ও বিপুল সময় সাশ্রয় হবে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বে টার্মিনাল অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন ব্যবহারকারীরা। চট্টগ্রাম বন্দরে গত বছর ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৭ টিইইউ এস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। একই সঙ্গে এ বন্দর ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৬ টন পণ্য হ্যান্ডেলিং করে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি ৬.৩৪ শতাংশ। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ হ্যান্ডলিং করে ৩ হাজার ৮০৭টি। অন্যদিকে চলতি বছর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে অন্তত ৩৪ লাখ টিইইউ এস কন্টেইনার, সাড়ে ১১ কোটি টন খোলা পণ্য এবং পাঁচ হাজার জাহাজ হ্যান্ডলিং করতে হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।