২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৯:৪৭/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ে সোলার প্রকল্পে ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণ না থাকায় বিস্ফোরণের চ্যাঞ্চল্যকর তথ্য আসছে !

     

রাঙামাটি প্রতিনিধি 

পাহাড়ে সোলার প্রকল্পে ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণ না থাকায় বিস্পোরণের চ্যাঞ্চল্যকর তথ্য আসছে ! পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নবোর্ডের সোলার প্রকল্পে নানা অনিয়ম দুর্নীতির নিত্য নতুন তথ্য পাওয়াগেছে । সোলার প্যানেল উপকারভোগীদের প্রশিক্ষন না থাকায় তিন উপজেলায় বিস্পোরণ হয়েছে। ফলে কোন বিধি বিধান মানছে না বোর্ডের পরিচালনা পরিষদ । ২০১৯ সালে জুন মাসে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া ৭৬ কোটি টাকার সোলার প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ হওয়ার সাথে সাথে নতুন প্রকল্পের প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে । বর্তমানে আবারো ৪৫ হাজার সোলার প্রকল্পটি চলতি মাসের শেষের দিকে উদ্ভোধন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় সুত্রে জানাগেছে।

খোজ নিয়ে জানাগেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সোলার প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের ব্যবহার ওপর প্রশিক্ষণ না দেওয়ায় বিভিন্ন স্থানে সোলার প্যানেল বিস্পোরণ হওয়ার চ্যাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে ! বরকল,নানিয়াচর ও বাঘাইছড়ি বঙ্গতলীতে সোলার বিস্পোরণ হওয়ার অভিযোগ আসছে। সোলার বিতরণের আগে ব্যবহারে প্রশিক্ষন না দিয়ে প্রশিক্ষনের নামে বিল ভাউচার ও আনুষঙ্গিক ব্যয় করা হয়েছে । প্রায় ২০১৬ সাল হতে ১৮ মাস কোন সোলার প্যানেল স্থাপন করে নাই বলে ব্যাপক অভিযোগ। ভ্রমন ভাতা, মোটর সাইকেল মেরামত ও নতুন ক্রয়কৃত সোলার প্রকল্পের গাড়ীটি মেরামত দেখিয়ে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক টাকা বিল-ভাউচার দেখানো হয়েছে । ২০১৬-১৭ সালে প্রশিক্ষনে নামে ৩৫ লক্ষ টাকা ২০১৭-১৮ সালে ৬০ লক্ষাধিক টাকা মোট ৯৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করার অভিযোগ উঠেছে। সোলার প্রকল্পের আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা উক্তোলন করায় ২০১৬-২০১৭ ও ২০১৮ অর্থবছরে দুই কোটি টাকার অডিট আপক্তি থাকলেও তা ম্যানেজ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক সদস্য প্রশাসন মজ্ঞুরুল আলম বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না । কোন অনিয়ম হলে ওরা জবাব দিবে । আমি সোলার প্রকল্প থেকে চলে আসছি প্রায় তিনবছর হল। তিনি বলেন,কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে অডিট আপক্তি করবে । তার আমলে সোলার প্রশিক্ষন না দিয়ে বিল ভাউচার আনুষাঙ্গকিক ব্যয় প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে,তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান ।

বালুখালী ইউনিয়েনের বসন্ত পাড়া এলাকার সুনয়ন চাকমা নীরু বলেন, আঞ্চলিক দলের স্থানীয় নেতা বিভিন্ন কেয়াং ও প্রতিষ্ঠানের নামে । একেক ঘরে ২/৩টা সোলার দিয়েছে টেকনিশিয়ান লিটন চাকমা, সাধনা দেবী চাকমা ৩শ ওয়ার্ডের কেয়াং নামে সোলার নিয়ে বাজার বিক্রি করা করেছে । নীরু আরো বলেন,পাহাড়ে আঞ্চলিক দলের স্থানীয় নেতাদের নামে ৭৬টি ১শ ওয়ার্ডেও সোলার নিয়ে প্রতিটি সোলার বিপরীতে স্থানীয় জনগন থেকে ৫হাজার ৩শ টাকা নিয়েছে বলে জানান।
সোলার প্রকল্পের টেকনিক্যাল কর্মকর্তা লিটন চাকমার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর । আঞ্চলিক দলের সম্পৃক্ততার দোহাই দিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার ফলে তার বিরুদ্ধে ১৫ /১৬ টি অভিযোগ দিয়েছে । লিটন চাকমার এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সদস্য প্রশাসন, দুদক, ডিজিএফআই ,রিজিয়ান কমান্ডার বরাবরে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছে।
সোলার প্রকল্পের টেকনিশিয়ান লিটন চাকমা প্রতিবেদকে জানান,আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিতরণ করেছি,তারা বাজারে বিক্রিয় করলে আমার করার কিছু নেই । আমার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলেও কিছু হবে না । কারণ আমার ওপরে সাবেক সদস্য প্রশাসন মঞ্জুরুল আলম ছিলেন । তার নির্দেশে সব করেছি । সোলার ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষনের কথা থাকলেও কেন প্রশিক্ষণ দেয়া তা আমি জানি না ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সোলার প্রকল্পের সমন্ময়ক মো.হাছান শাহরিয়া বলেন, প্রথম পর্যায়ে সোলার প্যানেল উপকারভোগীদের প্রশিক্ষনের নামে ও আনুষঙ্গিক ব্যয় দেখিয়ে বিল ভাউচার প্রচুর অর্থ আত্বসাতের বিষয়ে সাবেক সদস্য প্রশাসন মজ্ঞুরুল আলম বলতে পারবেন ।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, পশ্চাদপদ অবহেলিত জনগোষ্টির ভাগ্যেউন্নয়নে জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হয়েছে । কিন্ত উপকারভোগী ও সুবিধাভোগীরা হচ্ছে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা । হতদরিদ্র জনগণকে সোলার বিতরণের কথা থাকলেও তা যথাযথ মানা হয়নি। বিভিন্ন স্বচ্ছল বাসা বাড়ীতে বিতরণ করা হয়েছে ১০হাজার ৮৫০ টি ও বৌদ্ধ মন্দির,কেয়াং,গীর্জা ,মসজিদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৬-২০১৯ সাল তিনবছর মেয়াদী প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে অর্থবছরে ৪০ কোটি টাকা ও সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় ৭৬.০৬ কোটি টাকা ।
প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে দুর্গম এলাকায় প্রথম পর্যায়ে সোলার প্যানেল ব্যবহার ও উপকারভোগীদের প্রশিক্ষনের নামে ও আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ ২য় দফায় প্রায় ৬০ লক্ষাধিক টাকা অর্থ তসরুপ করা হয়েছে । কিন্ত সোলার ব্যবহারকারীদের কোন ধরনের প্রশিক্ষন দেয়া হয়নি। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা উক্তোলন করায় ২০১৬-২০১৭ ও ২০১৮ অর্থবছরে দুই কোটি টাকার অডিট আপক্তির খবর গোপন করা হয়েছে । প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন সদস্য প্রশাসন এম.মজ্ঞুরুল আলম, তিনি অবসরে গেলে বর্তমানে সদস্য প্রশাসন আশিষ বড়–য়া প্রকল্প পরিচালক হিসাবে আছেন।
বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য প্রশাসন আশীষ বড়–য়ার সাথে মুঠোফোনে চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি,
শেষ পর্যায়ে দেখা গেছে,বিভিন্ন নামে-বেনামে স্থানীয় বেশ কিছু সংবাদকর্মীসহ জনপ্রতিনিধি ,আঞ্চলিক দলের স্থানীয় নেতা,বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে সোলার প্যানেল নিয়ে বিক্রয় করার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নীতিমালা না মেনে বেশকিছু অনলাইন পত্রিকা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে অধিকাংশ প্রকল্প গ্রহন করার অভিযোগ উঠেছে । এছাড়া খাসভুমি ও ব্যক্তিগত জমিতে উন্নয়নের নামে প্রতিবছর একাধিক প্রকল্প নেওয়ার ব্যাপক আলোচনায় শীর্ষে স্থান পেয়েছে ।
উল্লেখ্য উন্নত জাতের বাশ প্রকল্প , প্রায় ২৩ কোটি টাকা,গবাদি পশু ১৩ উপজেলায় প্রায় ১৩ কোটি টাকার প্রকল্প কার্যক্রম প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মিশ্র ফলজ প্রকল্প ,কমলা প্রকল্প , উচ্চমুল্য মসল্লা চাষ প্রকল্পও পুর্ণবাসন প্রকল্প,সামাজিক সেবাপ্রদান প্রকল্পসহ কয়েকটি অদৃশ্য প্রকল্প বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে করতে গিয়ে একে অপরকে দেখিয়ে দিয়ে সকলে লুকোচুরি খেলে বিষয়টি এড়িয়ে যায় কর্মকর্তারা। নেই কোন মনিটরিং ব্যবস্থা ফলে এসব প্রকল্পের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নেই ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply