৩ মে ২০২৪ / ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:৫৭/ শুক্রবার
মে ৩, ২০২৪ ৫:৫৭ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে এখনও আসছে রোহিঙ্গারা

     

 মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় হুমকির মুখে সীমান্ত পেরিয়ে এখনও বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিচ্ছে।২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেই থেকে প্রাণ বাঁচাতে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমাতে শুরু করে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা। ওই ঘটনার এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। তবু রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এখনও বন্ধ হয়নি।

রয়টার্স এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, রোহিঙ্গাদের ক্রমাগত এই পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মিয়ানমারের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে। একইসাথে শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমার নেত্রী অং সান সুচির ইমেজকে হাস্যকর করে দিয়েছে।গত দুই মাসে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা পরিবারে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এদেরই একজন হামিদা বেগম। ১৮ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা নারী স্বামী ও দুই শিশু সন্তানসহ পালিয়ে এসে কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।পালিয়ে আসার আগের আতঙ্কময় দিনগুলোর কথা মনে করে রয়টার্সকে হামিদা জানান, বাংলাদেশে আসার আগে কয়েক সপ্তাহ মিয়ানমারের সেনাদের ভয়ে নিজেদের ঘরে ঘুমাতে পারেননি হামিদার স্বামী। কোনো কোনো রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও তাকে গ্রেফতার আতঙ্কে উঁচু গাছের ডালে রাত কাটাতে হয়। হামিদার বড় ছেলের বয়স দুই বছর; মেয়ের বয়স তিন মাস। বালুখালীতে বাঁশের তৈরি ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।হামিদা বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে এখনও আলো জ্বালানোর উপায় নেই। রাতে বাচ্চারা কাঁদলেও মোমবাতি জ্বালাতাম না। আলো দেখলেই সেনাবাহিনী এসে ধরে নিয়ে যায়।তিনি জানান, ২০১৭ সালের আগস্টের আগে উত্তর রাখাইনে তাদের গ্রামের জনসংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ হাজার। আর দুই মাস আগে তিনি গ্রাম ছেড়ে আসার আগে লোক ছিল একশোরও কম।হামিদা বলেন, গতবছরের আগস্টে পথের খরচ জোগাড় করতে না পারায় তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পারেননি। বেশির ভাগ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে পালিয়ে আসার পরও সেনাবাহিনী নিয়মিত তাদের গ্রামগুলোতে টহলে যেত, কখনও কখনও রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে যেত, কাউকে কাউকে বিনা পারিশ্রমিকে সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণের কাজ করতে বাধ্য করত।হামিদার এই দাবি যাচাই করা না গেলেও বালুখালিতে পালিয়ে আসা অন্য রোহিঙ্গারাও একই বক্তব্য দিয়েছেন।চলতি বছরের শুরু থেকে ১৩ হাজারের মতো রোহিঙ্গা কক্সবাজারে পালিয়ে এসেছে। এর মধ্যে চলতি আগস্ট মাসেই এসেছে অন্তত দেড়শো রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে ছয়জনের সঙ্গে কথা বলে রাখাইনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন করেছে রয়টার্স।প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে দীর্ঘদিন ঘর থেকে বের হতে পারেননি। কৃষিকাজ ও মাছ ধরা বন্ধ থাকায় অনাহারে থাকতে হয়েছে তাদের।এ প্রসঙ্গে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ক্যারোলিন গ্লুক বলেন, নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, তাদের সেখানে কারাবন্দির মতো দিন কেটেছে। কারফিউ এতটাই কড়া যে তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি, মাছ ধরতে যেতে পারেনি। কেবল নির্দিষ্ট একটা সময়ে আলো জ্বালানোর অনুমতি ছিল।সম্প্রতি ইউএনএইচসিআরের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এখনও যারা রাখাইনে রয়ে গেছেন, তারাও বাংলাদেশে চলে আসার পরিকল্পনা করছেন।রাখাইনে নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা থেকে সৃষ্ট সংঘাত এখনও মেটেনি বলে স্বীকার করেছেন মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন এনএলডির মুখপাত্র মিও নায়ান্ট। তিনি রয়টার্সকে বলেন, গত এক বছরে সেখানকার পরিস্থিতি বদলায়নি। অবস্থার উন্নতি হতে অনেক সময় লাগবে।গত বছর ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সহিংস অভিযান শুরুর পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেয়। সেই সময়ে মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ সরকার। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের চালানো নির্বিচারে হত্যা, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও গণধর্ষণের বর্ণনা করেছেন। এরপর থেকে জাতিসংঘ একে জাতিগত দমন অভিযান হিসেবে অভিহিত করে আসছে।গত এক বছরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। গত কয়েক দশকের বিভিন্ন সময়ে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ কারণে এটিকে বলা হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply