২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:৩৯/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ৯:৩৯ অপরাহ্ণ

দাউদকান্দির বই বিক্রেতা আবুল হোসেনের দূর্দিন

     

নিজস্ব প্রতিনিধি
দাউদকান্দির বই বিক্রেতা মোঃ আবুল হোসেনর চলছে এখন চরম দূর্দিন। যদিও একসময় এই বই বিক্রি করেই তার সংসার-ছেলেমেয়ে এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে পারতেন তিনি। কিন্তু এখন আর সেই সুদিন নেই তার। বই বিক্রি চলছে না আগের মতন। তারপরে আবার ফুটপাতে বসার জায়গাও সংকুচিত হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বই বিক্রির সেই পুরনো পেশা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন তিনি।

দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটা সংলগ্ন মাদলা গ্রামের মরহুম আব্দুল জলিলের ছেলে মোঃ আবুল হোসেন (৫০)। তিনি এক সময় শখের বশে ১৯৮৭ সালে উপজেলার গৌরীপুর, দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, মলয়বাজারসহ বিভিন্ন হাঁট-বাজারে বই বিক্রির কাজ শুরু করেন। তখন তার বই অনেকেই ক্রয় করার পাশাপাশি ভাড়া নিয়েও পাঠ করতেন। ব্যবসাটি বেশ ভালই চলছিল তার।
আবুল হোসেন এই বই বিক্রি করে তার দুই ছেলে ও এক মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। তার বড় ছেলে এসএসসি পাশ করে কুমিল্লার একটি সোনালী ব্যাংকে গার্ড হিসেবে চাকুরি করেন। আরেক ছেলে এইচএসসি পাশ করে এখন ওমান প্রবাসী। একমাত্র মেয়ে লিজা ২০১৬ সনে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।
তিনি মনে করেন, তার জীবনের বেশির ভাগ সময়ই বেশ আনন্দে কেটেছে। কেনো না, তিনি বিভিন্ন লেখকের লেখা বই পড়ে জীবনকে রঙ্গিন করেছেন। প্রকৃতির রঙ্গ-রস, মানুষের জীবন বোধ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে ধন্য হয়েছেন। তার পছন্দের লেখক রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ডাঃ লুৎফর রহমান, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখন ছেলেমেয়েরা বই পড়তে চায় না। তারা মোবাইল আর নেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাদের সময় কাটে ফেসবুক আর হিন্দি ও পশ্চিমা গানের মাঝে। আগেকার দিনে বিভিন্ন বই বিক্রি হতো। উপন্যাস ও কবিতার বই বিক্রি করতে পারতাম অনেক।
কিন্তু এখন তেমন কোন বই বিক্রি হয় না। কিছু রঙ্গিন ছবি সংবলিত পোস্টার এবং দোয়া-কালাম- ও ছবি-ই বিক্রি হয়। যা দিয়ে সংসার চালানো বেশ কঠিন। তা ছাড়া আগের মত ফুটপাতে বসার জায়গাও এখন আর পাওয়া যায় না। একশ’-দেড়শ’ টাকা ভাড়াও দিতে হয় ইজারাদারদের। তারপরেও পুরনো পেশা ছাড়তে মন চায় না। দিনে দিনে লাভের চেয়ে লোকশানের বোঝা চেপে বসছে ঘাড়ে। যার জন্য আর ধরতে রাখতে পারছিনা আমার শখের এই বই বিক্রির পেশাটি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply