২ মে ২০২৪ / ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৪০/ বৃহস্পতিবার
মে ২, ২০২৪ ২:৪০ অপরাহ্ণ

বিশ্বাসীদের মি’রাজুন্নবী এক মহাবিস্ময়কর মো’জিযা-মুশফিক এলাহী

     

নবুয়তের প্রকাশের ১১ বছর ৫ মাস ১৫ দিন। গভীর রজনী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব আরাম করছেন তাঁরই চাচাতো বোন উম্মে হানী এর ঘরে। হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) আসলেন নবি মোস্তফা (ﷺ) এর খিদমতে, একা আসেননি, এসেছেন আরো অনেক ফেরেশতা নিয়ে। রাসুলে আকরাম (ﷺ) অনুভব করলেন উনাকে কেউ ডাকছেন। চোখ খুলেই দেখেন শিয়রে ফেরেস্তাকুল সরদার হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) দণ্ডায়মান। হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) সালাম আরজ করে সসম্মানে রাসুলে আকরাম (ﷺ) কে নিয়ে গেলেন জমজম কূপের পাশে। বক্ষ বিদীর্ণ হলো, কলব ধুয়ে পুনঃস্থাপন হলো। জান্নাতী বিশেষ বাহন বোরাকে আরোহণ করে রাসুলে আকরাম (ﷺ) গেলেন বায়তুল মোকাদ্দসে। সফরসঙ্গী হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম)। পথিমধ্যে মুসা (আলাইহিস সালাম) এর স্মৃতি বিজড়িত তূর পাহাড় ও ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর জন্মস্থান বায়তে লাহামে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। বায়তুল মোকাদ্দসে এক বিরাট নামাজের আয়োজন। আজ এখানে নবীগণের নবী হুযুরে পাক (ﷺ) এর ইমাম আর মুসল্লি ১ লক্ষ মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসুলগণ।

এবার রাসুলে পাক (ﷺ) পর্যায়ক্রমে প্রথম থেকে সপ্ত আসমান পর্যন্ত গেলেন। প্রতিটি আসমানে সাক্ষাত হলো বিভিন্ন নবীগণের সাথে। চলে আসলো সিদরাতুল মোনতাহা। নূরের তৈরী হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) জানালেন তিনি আর একবিন্দু সামনে যেতেও অক্ষম। চলে এলো রফরফ নামক বাহন। আহা! কি ভাগ্যবান বাহন। তার উপর আরোহন করলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। সবুজ রঙয়ের রফরফে চড়ে ৩৬ হাজার বছরের পথ অতিক্রম করে আরশে মোয়াল্লায় পৌছালেন মেহমানে ইলাহী। যেতে হবে আরো অনেক পথ। অতিক্রম করতে হবে ৭০ হাজার নূরানী পর্দা। এক পর্দা থেকে অপর পর্দার দূরত্ব ৫শত বছরের।

৭০ হাজার নূরানী পর্দা অতিক্রম করে স্রষ্টার মেহমান পৌছলেন লা মকানে- স্রষ্টার দরবারে। উম্মতে মোহাম্মদী পেল ৪০ ওয়াক্ত নামাজ। আল্লাহ ও তার হাবীব মিলিত হলেন ধনুকের দুই মাথার চেয়েও অধিক নিকটে। (সূত্র- সূরা নাজমঃ৮-১০)। ফিরে আসছেন রাসুলে পাক (ﷺ)। রাস্তায় আটকালেন মুসা কালীমুল্লাহ, যিনি আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন, আল্লাহ পাকের এক ফোটা নূরের তাজাল্লিতে সেদিন ছাই হয়েছিলো তূর পাহাড়। সেই মুসা কালিমুল্লাহ (আলাইহিস সালাম) বললেন- ইয়া ইমামুল আম্বিয়া, আপনার উম্মতের জন্য ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় কষ্টের হবে। আল্লাহর দরবারে গিয়ে নামাজ কমিয়ে আনুন। আল্লাহর হাবিব আবারো গেলেন লা মকানে খোদার দরবারে। ৫ ওয়াক্ত নামাজ কমে ৩৫ ওয়াক্ত হলো। ফিরে আসার সময় আবারো মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন- আপনার উম্মতের জন্য এতো ওয়াক্ত নামাজ কষ্ট হবে, কমিয়ে আনুন আরেকটু। ঠিক এভাবে ৯ বার আল্লাহর হাবিব আল্লাহর দরবারে গেলেন। প্রতিবার ৫ ওয়াক্ত করে মোট ৩৫ ওয়াক্ত নামাজ কমলো। এক রজনীতে দুই মাহবুব মিলিত হলেন ১০ বার। আর আল্লাহর দর্শন আকাঙ্ক্ষিত মুসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর রাসুলকে ৯ বার আল্লাহর কাছে পাঠালেন, যতবার রাসুলে পাক(ﷺ) আসলেন মুসা (আলাইহিস সালাম) মিরাজের স্বাদ নিলেন রাসুলে খোদা, ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ) কে দেখে।ফিরে এলেন রাসুলে পাক (ﷺ)। সকালে মি’রাজের কথা বলতেই হেসে উঠলো মক্কার কাফেররা। কিছু মুসলিমরূপী মোনাফেক ও হেসেছিলো সেদিন। প্রমাণ পেয়েও তারা গল্প বলে উড়িয়ে দিয়েছিলো মি’রাজুন্নবী (ﷺ)। আর বিনাবাক্যে বিশ্বাস করছিলো সিদ্দিকে আকবর (রাদীয়াল্লাহু আনহু)। আজো যারা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের উত্তরসূরী তারা ইহাকে বেদাত, এই তারিখে রাত জেগে নামাজ পড়া, দিনে রোজা রাখাকে বিদাত বলে। আর সিদ্দিকে আকবরের আদর্শে আদর্শিত ঈমানদারগণ ইহাকে পবিত্র ও বরকতময় হিসেবে বিশ্বাস করে।তাই, আসুন এই মহান রজনী, যে রজনী না হলে মু’মিনের মিরাজ নামাজ পেতাম না, সে রাত কাটিয়ে দেই খোদার ইবাদতে। সেই রাত কাটিয়ে দেই কোরআন পাঠে, দরুদ পাঠে, যিকিরে যিকিরে। আর দিনটি কাটাবো রোজার মাধ্যমে। অন্তত সকল প্রকার পাপাচার থেকে এই দিনে নিজেকে হেফাজত করি। এই দিনে শপথ নেই আগামীতে ইসলামী আদর্শে জীবন গড়ার। আল্লাহ আমাদের সকল নেক ইচ্ছা কবুল করুক,আমিন।

 

 

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply