২ মে ২০২৪ / ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১২:০৩/ বৃহস্পতিবার
মে ২, ২০২৪ ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের ভয়ে গ্রামছাড়া সাধারণ মানুষ

     

 

হিমেল তালুকদার, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় একটি হত্যা মামলায় পুলিশের হয়রানীর কারনে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুরুষরা।

শনিবার দুপুরে ওই উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের দিলগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা এমন অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দিলগাঁও গ্রামে কোন পুরুষ নেই। প্রত্যেকটা ঘরবাড়ী ফাঁকা। এখন শুধু ওই গ্রামে কাঁন্না আর আহাজারি।

গত ২৬শে ফেব্র“য়ারি সকালে রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা গ্রামের কুলিক নদীতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে নিরেশ চন্দ্র রায় (৩৫) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় নিরেশের ভাই মহেন্দ্র নাথ রায় বাদী হয়ে রাণীশংকৈল থানায় দিলগাঁও গ্রামের ৭ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এজাহার ভুক্ত আসামীদের খুঁজে না পেয়ে রাণীশংকৈল থানা পুলিশ দিলগাঁও গ্রামের বাসিন্দাদের হয়রানী করছে বলে অভিযোগ করেন ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধা লতিফা বেগম।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মোর ৩টা বেটা খতিব, সফিক ও রশিদুল। মোর ছুয়ালা এই খুনের ঘটনার সাথত জড়িত নাই। তারপরও পুলিশ রাইতত মোর বাড়িত আসে আর মোর ছুয়ালাক খুঁজে। এই ভয়ে ১৬ দিন থেকে মোর ছুয়ালা বাড়িত নাই, পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছাড়ে পালায় বেড়াছে।

একই গ্রামের চম্পা আক্তার বলেন, পুলিশের হয়রানি ও গণগ্রেপ্তারের ভয়ে আমার স্বামী আবদুল গফ্ফার ১৫ দিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

কেঁদে কেঁদে মরিয়ম বেগম বলেন, পুলিশের গণগ্রেপ্তারের ভয়ে আমার স্বামী মোহাম্মদ আলী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কোথায় গেছে, বেঁচে আছে কিনা কিছুই জানিনা। বাড়িতে স্বামী না থাকার কারণে জমির ফসল (ভুট্টা) নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি না খেয়ে দুটো সন্তান নিয়ে দিনরাত যাপন পার করতে হচ্ছে।

একই গ্রামের হাসিনা বেগম । ১৪ দিন হয়ে গেল তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আলী ও ৮ম শ্রেণিতে পড়–য়া ছেলে সাদ্দাম হোসেন বাড়িতে নেই। তিনি বাড়িতে একাই আছেন।

স্বামী ও সন্তান কোথায় গেছে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা গ্রামের কুলিক নদীতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে একজন ব্যক্তি খুন হয়। আর এই খুনের আসামীদের বাড়ি আমাদের গ্রামে। পুলিশ প্রায় রাতে গ্রামে এসে অভিযান চালায়। আসামীদের না পেয়ে পুলিশ গ্রামের সাধারণ মানুষদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। এই ভয়ে শুধু তাঁর স্বামী ও সন্তান নয় ওই গ্রামের প্রায় ১৬৬টি পরিবারের পুরুষরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।

একই গ্রামের আনোয়ারা আক্তার বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনার পরদিন পুলিশ অভিযান চালিয়ে আমাদের গ্রাম থেকে দর্শন আলী, মোতালেব হোসেন ও মারুফা বেগমকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে য়ায়। অথচ এসব ব্যক্তিরা ঐ ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত না। সাধারণ মানুষদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এই ভয়ে গ্রাম থেকে সব পুরুষরা ভিনদেশে পালিয়ে গেছে।

নার্গিস আক্তার বলেন, সংসারে আয় রোজগার না থাকায় অর্ধহারে-অনাহারে মানবেতর দিনযাপন করছে দিলগাঁও গ্রামের অসহায় পরিবারগুলো। পুলিশের হয়রানি আর আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নারী ও শিশুরা।

রেহেনা বেগম নামে আরেকজন বলেন, বাড়ীতে পুরুষরা না থাকার কারণে আমরা নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি এবং গণগ্রেফতার বন্ধের দাবী জানান তিনি।

ভাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান আলী বলেন, পুলিশ প্রায় সময় দিলগাঁও গ্রামে এসে অভিযান চালায় এবং গ্রামের সাধারণ মানুষদের হয়রানী করছে। তাই সাধারণ মানুষদের হয়রানী না করতে পুলিশকে অনুরোধ করেন তিনি।

মামলার বাদী মহেন্দ্র নাথের মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় রাণীশংকৈল থানায় মামলাও করেছি এবং হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তবে এ মামলায় যে কোন নিরপরাধী মানুষ হয়রানীর শিকার না হয়।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে রাণীশংকৈল থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, আমরা গ্রামবাসীকে হয়রানী করছি না। মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের আমরা গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে মামলার একজন আসামী সফিকুল ইসলামকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বলেন, সাধারণ কোন মানুষকে হয়রানী করা হচ্ছেনা। যদি এমনটা হতো তাহলে মামলার মুল আসামীকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হত না। মানুষ যেগুলো কথা বলছে এগুলো সঠিক নয়।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply