২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:৫২/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৮:৫২ অপরাহ্ণ

মৌলভীবাজারে এনডিএফ’র উদ্যোগে কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকী পালন

     

সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান

নানকার বিদ্রোহের রূপকার, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের ১৮-তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন বৈশ্বিক মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বাজার ও প্রভাব বলয় পুর্নবন্টন নিয়ে মুদ্রাযুদ্ধ, বাণিজ্যযুদ্ধ, আঞ্চলিক যুদ্ধ বিস্তৃত হয়ে বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি করেছে। সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, ইউক্রেন, লিবিয়া-আফ্রিকাসহ পৃথিবীর দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদীরা আগ্রাসন চালিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় বা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশকেও তারা এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত করতে চায়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থল সংযোগ সেতু এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের সংযোগকারী মালাক্কাপ্রণালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন তার প্রাধান্য অব্যাহত রাখতে চায় তেমনি সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া ও পুঁজিবাদী চীন তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের শিকার হয়ে আজ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায় চরম নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে শরনার্থীর অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। এর এক দিকে রয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, যারা মিয়ানমারেরর রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগিয়ে সে দেশের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলের পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তুলেছে। আর অন্য দিকে সাম্রাজ্যবাদের দালাল মিয়ানমার সরকারের সাথে জড়িত রয়েছে চীনের ভূমিকা। মিয়ানমারের সাথে বৃহত সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের গভীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক তথা সামগ্রিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বাধীন জোট চাইছে মিয়ানমারে চীনের স্বার্থকে বাধাগ্রস্থ করতে। সকল ধরণের জাতিগত নিপীড়নের জন্য দায়ী হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দালাল স্বৈরাচারী সরকার। তাই রোহিঙ্গা জনগোষ্টিসহ সকল নিপীড়িত জাতি ও জনগণকে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রাণাধিকারে প্রশ্নে সকল সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। ১৮ অক্টোবর বিকেলে শহরের কোর্ড রোডস্থ কার্যালয়ে কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এই আহবান জানান। সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংরাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া মৌলভীবাজার জেলা রিকশ শ্রমিক ইউইনয়নের সভাপতি সোহেল আহমেদ, তারেশ বিশ্বাস সুমন, মোঃ জসিমউদ্দিন প্রমূখ। সভায় বক্তারা আরও বলেন কমরেড অজয় ভট্টাচার্য সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও স্ব-শ্রেণীর বিরুদ্ধে দাড়িয়ে সিলেট অঞ্চলের দাসপ্রথা সমতুল্য ‘নানকার’ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেন এবং নানকার প্রথার উচ্ছেদ করেন। আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে তিনি বিপ্লবী সাহিত্য চর্চাও করেন। নানকার বিদ্রোহের উপর তিনি ‘নানকার বিদ্রোহ’ নামক ঐতিহাসিক প্রামাণ্য গ্রন্থসহ ইতিহাসের ছেড়া পাতা, সুবল মাঝির ঘাট, কুলিমেম, রাজনগর, বাতাসীর মা, অরণ্যানী, অর্ধশতাব্দী আগে এদেশের গণআন্দোলন কেমন ছিল ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেন, এছাড়াও তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন। একজন মার্কসবাদী লেলিনবাদী তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে তিনি সকল রূপের সংশোধনবাদের স্বরূপ উন্মোচনে কমরেড আব্দুল হকের সাথে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। আমৃত্যু সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী লড়াইয়ের এই অগ্রসেনানী ৭ বারে মোট ২০ বছর কারাবাস করেন। ১৯৯৯ সালের ১৩ অক্টোবর ৮৫ বছর বয়সে মহান এই বিপ্লবী নেতা মৃত্যুবরণ করেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply