লামা উপজেল কৃষির সোনালী অতীত গিলে খেলো তামাক পাতা
মো.কামরুজ্জামান
লামা উপজেলার গগন মাষ্টারপাড়া-ছৈয়দনুর মাষ্টারপাড়া ও ইব্রাহীম লিডারপাড়া হ্নদয় মাষ্টারপাড়া, এই চার গ্রামের তিনদিক নদী বেষ্ঠিত। গ্রামটা দেখতে দ্বীপেরমতো। লামা খাল পোপাখাল ও মাতামুহুরী নদীরকুল ঘেষে গ্রামটি সমতল। পলিমাটির উর্ববর জমিতে গ্রামবাসীরা ব্যাপক আখের চাষ করতেন। তার কাছের নদীর এপার ওপারের আরো কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে আখের চাষ হতো। আখ খেতে শিয়ালের হানায় অতিষ্ট চাষীরা প্রতিরোধে নানান কৌশল অবলম্বন করতেন।
৮০’র দশকে আখ খেতের নয়নাভিরাম দৃশ্য ছিলো। আখের রস দিয়ে কৃষকরা চোলাই পদ্ধতিতে গুড় বানাতেন। মাটির কলসিতে জমানো ওইসব গুড় ভারবয়ে লামা বাজারে এনে সারিবদ্ধভাবে বিপনন করতেন। চকরিয়া-লোহাগাড়ার ব্যাবসায়ীরা কিনে নিতেন সেসব গুড়। ওই গ্রামটি ছিল আখ চাষ ও গুড় উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। সময়ের নিষ্ঠুরতায় এখন আর সে গ্রামে আখের চাষ হয়না। চোলাই পদ্ধতিতে গুড়ও হয়না। ওইসব গুড় তৈরির চোলাই পয়েন্টগুলো দখল করেছে তামাক চুল্লি(!) আখ চাষের জমি তামাকপাতার দখলে চলে গেছে। তামাকপাতাই গিলে খেলো উপজেলার আখ চাষের সেই সোনালী অতীত।
১৯৮৫ সালের দিকে তামাক কোম্পানীগুলোর (নীলকর) আগ্রাসন শুরু হয়। বর্জুয়ারা (তামাক কোম্পানী) আমাদের প্রান্তিক কৃষকের মগজ ধোলাই করতে লাগলো। অধিক মোনাফা দেখিয়ে ক্রমেই বর্গিরা হাত করে নিলেন আমাদের সোনার মানুষদের (ফসল উৎপাদনকারী)কে। সবুজ প্রকৃতির মাঝে স্বচ্ছ জলরাশি আর বিশুদ্ধ বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে দিতে লাগলো বিষময়তা। তাদের কর্পোরেট গোলামীর শৃঙ্খল যেন ঘোটা সমাজকে আবদ্ধ করে ফেলেছে। ফলে এর ভয়াবহতা আর রোধ করা গেলনা।
বিশাক্ত তামাক চাষ ও এর প্রক্রিয়াজাত করণে ফল-ফুল-পাখি, নদী-নালা, তরুলতা পাহাড়- প্রকৃতিসহ ঘোটা সমাজ পরিমন্ডলে এর বিরুপ প্রতিচ্ছায়া বিস্তার করেছে। বন উজাড়ের ফলে হারিয়ে গেছে বন্যপশু, পাখিসহ নানান কীটপতঙ্গ। মাটিতে রাসায়নিক-ক্যামিকেল ব্যবহার করায় জৈবিক শক্তি হারিয়েছে অনেকগুন। রাসায়নিক-ক্যামিলের অজ্ঞ ব্যবহার জনিত: কারণে নদীতে নানান জাতের ছোট মাছের প্রজন্ম বিনাশ হ আশংকাজনক হারে।
এছাড়া তামাক পক্রিয়াজাত করণের চুল্লি থেকে নির্গত বিশাক্ত গ্যাসে শাষজনিত নানান ব্যাধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্হানীয়ভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। নদীর চরসহ ধান চাষের জমিতে তামাক চাষের বিষয়ে নীতিমালার প্রয়োগ না করলে অচিরেই গ্রামীন সভ্যতা রক্ষায় খেসারত দিতে হবে সবাইকে।