সুনামগঞ্জে পশুর হাটগুলো জমে উঠলেও কাঙ্কিত ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না কোরবানির পশু বিক্রেতারা
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে কুরবানীর পশুর হাট বসেছে। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত গরু, ছাগল ও ভেড়া আসা শুরু হয়েছে পশুর হাটে। জেলা সদরের পশুর হাটগুলো জমে উঠলেও কাঙ্কিত ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না কোরবানির পশু বিক্রেতারা।
আর ১ দিন পরেই পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। ঈদকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গত বুধবার থেকে পশুর হাট বসেছে। শুরুতে হাট না জমলেও এখন পুরোদমে জমতে শুরু করেছে পশুর হাট, হাটে প্রচুর গরুর আমদানী হয়েছিল। রাস্তাগুলোও ভরে উঠেছিল গরু-ছাগলের পদচারনায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এসব গরু শতভাগই দেশী গরু। হাট ভর্তি এই গরুর অভাব না থাকলেও ক্রেতা ছিল তুলনামূলকভাবে কম,ফলে হতাশ বিক্রেতারা।
পশু বিক্রেতারা জানান, বাজারে গরু অনেক উঠেছে আজ দুদিন হয়ে গতবারের মতো এবার ক্রেতার দেখা পাচ্ছিনা। যদিও ক্রেতারা আসে দাম দর করে চলে যায় ফলে হাটে গরু থাকলেও গরুর পাশাপাশি আমাদেরকেও গরুর পাশে বসেই সময় কাটাতে হচ্ছে।
বালুর মাঠের ইজারাদার আবুবকর সিদ্দিক পল জানান, গরুর বাজার শুরু হয়েছে টিকই কিন্তু বিকি কিনি একবারে কম। এত নি¤œ মানের বাজার আর কখনও সুনামগঞ্জে হয়নি। লাভতো দূরের কথা আসল ইজারামূল্য উঠবে কিনা সে ব্যাপারে আমরা খুবই চিন্তিত ।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার জলিলপুর গ্রামের গরু বিক্রেতা মহিম উদ্দিন ও আব্দুল জলিল জানান, ক্রেতারা হাটে এসে শুধু দাম দর করছেন। এখনও অনেকেই পশু ক্রয় করছেন না। বুধবার থেকে সুনামগঞ্জে পশুর হাট শুরু হয়েছে। গতবারের তুলনায় গরুর দাম কিছুটা বেশি। রোববার পর্যন্ত পশু আসলে দাম কম বেশি হতে পারে।
সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের রাসনগর গ্রামের গরু বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জানান, আমার ১০টি গরুর মধ্যে একটি গরু অনেক বড়। এই গরুটি আমি দাম হেঁকেছি দেড় লাখ টাকা। ক্রেতারা দাম বলেছেন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। একজন ক্রেতা দাম করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
কুরবাননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বরকত জানান, ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও এলাকায় পশুর হাট শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। প্রথম দিন হাটে ২০টি গরু উঠেছিল। বৃহস্পতিবার গরু উঠেছে ৬০টি। আগামীকাল রোববার পর্যন্ত চলবে পশুর হাট। গত দুইদিনে পশুর হাটে বেচাকেনা হয়নি। ক্রেতারা এসেছেন, দাম-দর করে চলে যান।
কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সামছুল ইসলাম জানান, আমার ইউনিয়নে শ্রীমতি বাজারে আগামী শনিবার পশুর হাট বসবে। বুধবারের পশুর হাটে কিছু গরু উঠেছিল। এবার গরুর দাম কিছুটা বেড়েছে। গরু বেশি পরিমাণে হাটে আসলে হয়তো গরুর দাম পরিবর্তন হতে পারে।
গরুর বাজার নামে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী মঙ্গলকাটা বাজার। এই বাজারটি সপ্তাহে রবিবার ও বৃহস্পতিবার জমে উঠে। বৃহস্পতিবার বাজারে অনেক গরু উঠেছিল। কিন্তু ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি থাকলেও গরু বিক্রি হয়েছে খুবই কম।
বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রব জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসছে। বাজারে প্রচুর গরু উঠেছে। কিন্তু দাম ছাড়ছেন না গরুর মালিকেরা। আগামী রোবার হয়তো ভাল বেচাকেনা হতে পারে। গরুর মূল্যের পরিবর্তন হতে পারে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের বাঘবেড় বাজারে গরুর হাট বসেছে। ইউপি চেয়ারম্যান রুশন আলী জানান, সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও রোববার গরুর হাটে অনেক গরু, ছাগল আসে। বাঘবেড় বাজারের হাটে প্রচুর গরু উঠে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি বাজারে গরুর হাট বসেছে। মান্নারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব ুহেনা আজিজ জানান, প্রতি শুক্রবার পশুর হাট বসে। হাটে অনেক পশু উঠে।
রঙ্গারচর ইউনিয়নের ভল্লবপুর গ্রামের ক্রেতা মশিহুর হাসান বলেন,‘ঈদ ১২ তারিখে হবে। আগে গরু কিনলে রাখার সমস্যা হবে। তাই পরে কিনব।’
শহরের মল্লিকপুর গ্রামের মোহাম্মদ সহিদুল বলেন,‘গরু কেনার আরও সময় আছে। এখন কিনলে দাম-দর বুঝা যাবে না। তাই দেরিতে কিনব।’
শহরতলীর মইনপুর গ্রামের মজিদ মিয়া বলেন,‘আগে গরু কিনলে, গরুর দাম বেশি পড়তে পারে। তাছাড়া গরুর ঘাসও লাগবে। এই জন্য একটু দেরিতে কেনার চিন্তা করছি।’
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি সহিদুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জে কয়েকটি পশুর হাট রয়েছে, পশুর হাট গুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি জাল টাকা দিয়ে যাতে কোন বেচাকেনা না করতে পারে সে জন্য আমরা জাল টাকার মেশিন স্থাপন করেছি।