২৩ এপ্রিল ২০২৪ / ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১০:০১/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ১০:০১ অপরাহ্ণ

সুনামগঞ্জে ৮৪৮ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, এখনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি মেরামতের

     

 

আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ

টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার পাকা ও কাচা রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। সৃষ্টি হয়েছে একাধিক খানা খন্দের। শুধুমাত্র জেলা সদরেই নয় ১১ টি উপজেলার সবকটি সড়কেই খানা-খন্দ তৈরি হয়েছে। বন্যায় এ সকল রাস্তাঘাট ভাঙ্গনের ফলে যেমন চালকদের সমস্যা হচ্ছে ঠিক তেমনি জনসাধারনেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। প্রায় ৮৪৮ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ২৫ লক্ষ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহুর্তে ভাঙ্গা রাস্তা মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন পানি না সড়লে অথবা বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে রাস্তা মেরামত করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়।

জেলার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়ন, রঙ্গারচর, সুরমা ইউনিয়নের বেশির ভাগ রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার রাস্তার বেহাল দশার কারণে যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই সড়কটি। এই সড়ক দিয়ে যাত্রী যেতে হয় গাড়ি থেকে নেমে। পড়ে ভাঙ্গা স্থান পার হয়ে আবার গাড়িতে ওঠতে হয়। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের।

এ দিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্রায় তিনটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের সৃষ্টি হয়েছে বাধা। তাছাড়া পৌর শহরের কালিবাড়ি, জামাইপাড়া, উকিলপাড়া সুলতানপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ।

তাছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়াবাজারসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার সড়কের ঢালাই পানি ঢেওয়ে ভেসে গিয়েছে।

তবে কর্তৃপক্ষ এই সব সড়ক সংস্কারে উদাসীন ভূমিকা পালন করছেন। অজুহাত হিসেবে বলছেন বৃষ্টির কারণে তারা সড়কগুলো মেরামত করতে পারছেন না।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তথ্যমতে, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৬৬টি স্থানে প্রায় ১৮৪ কি.মি, শাল্লা উপজেলায় ২৩টি স্থানে ৪৫ কি.মি, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৩০ টি স্থানে ৬০ কি.মি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৪২ টি স্থানে ১২৬ কি.মি, দিরাই উপজেলার ৯ টি স্থানে ২৮ কি.মি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫১ টি স্থানে ১৬৮ কি.মি, তাহিরপুর উপজেলায় ৩ টি স্থানে ১৬ কি.মি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৬ টি স্থানে ৬ কি.মি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ টি স্থানে ৭৫ কি.মি, ধর্মপাশা উপজেলায় ১৫ টি স্থানে ৫০ কি.মি, ছাতক উপজেলায় ১০ টি স্থানে ৫৮ কিলোমিটার রাস্তা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার মোট ২৭৫ টি স্থানের ৮১৮ কিলোমিটার রাস্তায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ১১ উপজেলায় প্রায় ৯৬ টি ব্রিজ ও কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে যার আনুমানিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে জেলা সড়ক ও জনপথের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যায় প্রায় ৩০ কি.মি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃর্তৃপক্ষ। তাছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কেও ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দোয়ারাবাজার উপজেলার শরিফপুর এলাকার বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার রাস্তার এলাকার অবস্থা খুব খারাপ। পানিতে রাস্তাঘাট ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এতে করিয়া আমরার চলাফেরায় অনেক কষ্ট হয়। দ্রুত এই রাস্তাঘাট সংস্কার করার দাবি জানাই।

সিএনজি চালক সাগর মিয়া বলেন, বন্যার পর থকি রাস্তাঘাটে যে ভাঙন দেখা দিছে এতে করিয়া আমরার গাড়ি চালাইতে খুব কষ্ট হয়। বিশেষ করি সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার, আবার সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা গুলোতে গাড়ি চলাচলে অনেক অসুবিধা হয়। বিরাট বিরাট গর্ত তৈরি হইছে যা দুঘর্টনা হওয়ার ঝুকি রাখে।

তাহিরপুর এলাকার বাসিন্দা মনফর মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের বেহাল দশা জেলার যোগাযোগের  একমাত্র রাস্তা ভাঙে গেছে তাই জেলা শহরের স্বাভিক যোগাযোগে ব্যগাত ঘটছে। আমাদের দাবি খুব দ্রুত যেন এই সড়ক গুলো মেরামত করা হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল আহমদ বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে আমাদের ৮১৮ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সেই সড়ক গুলো দ্রুত মেরামত করার চেষ্ঠা করছি।

জেলা সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বন্যায় আমাদের সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কও রয়েছে। আনুমানিক হিসেবে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি। বরাদ্ধ পেলেই কাজ শুরু হবে। জরুরী ভিত্তিতে চলাচলের জন্য ভাঙা স্থানে ইট দিয়ে মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করে দেয়া হয়েছে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply