৩০ এপ্রিল ২০২৪ / ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:১০/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ৩০, ২০২৪ ১২:১০ অপরাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত পাহাড় ধসের আশঙ্কায় আশ্রয় কেন্দ্র সহস্রাধিক পরিবার

     

 

শংকর চৌধুরী,খাগড়াছড়ি॥ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় খাগড়াছড়ির চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে পানি প্রবাহ কমেনি। এখনো নিচু এলাকার ঘরবাড়িগুলোতে পানি রয়েছে। তবে মঙ্গলবার ৯ জুলাই রাতে পানি কিছুটা কমলেও ভারী বর্ষণের কারণে তা আবারও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অব্যাহত টানা বর্ষণে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের কলাবাগান, নেন্সিবাজার, মোল্লাপাড়া, আঠার পরিবার, শালবন ও মোহাম্মদপুর এলাকায় পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় খাগড়াছড়ি জেলায় খোলা হয়েছে ৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী অর্ধ শতাধিক পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এরই মধ্যে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি। ভারী বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল আর পাহাড় ধসের আশঙ্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাহাড়ে বসবাসরতদের জীবনযাপন। মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) সন্ধ্যায় দীঘিনালা উপজেলা দুর্গম উল্টাছড়িতে পাহাড় ধসে যুগেন্দ্র চাকমা (৪০) নিহত হন। পাহাড়ের চূড়ায় তাদের ঘর ছিল। ঘরটি ধসে পড়লে তার মৃত্যু হয়। দীঘিনালার মাইনী নদীতে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে মেরুং বাজারের অধিকাংশ জায়গায় পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে উপজেলার মেরুং, কবাখালী ও বাবুছড়া ইউনিয়নের অন্তত ১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে ক্ষতিগ্রস্তরা। বন্যার পানিতে বড়মেরুং স্টিলব্রিজ ডুবে যাওয়ায় দীঘিনালার সঙ্গে রাঙ্গামাটির লংগদু সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। টানা বর্ষণের কারণে জেলারন বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম ও পৌর মেয়র মো: রফিকুল আলম জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন এবং পৌর প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। পুরো জেলায় ৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২শ মেট্রিকটন চাল ও দুই লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় দুর্গতের মাঝে খিচুরি ও শুকনো খাবার তিরণ করা হচ্ছে।
এদিকে,টানা বর্ষণের কারণে পানছড়ির ধুদুকছড়া, হারুবিল, বাবুরাপাড়া, মধুমঙ্গলপাড়া, পুজগাং বাজারসহ কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ধুদুকছড়া ব্রিজের মাঝে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। বাবুরা পাড়ায় স্টিলব্রিজ ও পুজগাং ব্রিজ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কমপক্ষে ২০-৩০টি গ্রামের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আর মহালছড়ি সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানি উঠেছে মহালছড়ি সরকারি কলেজও।

অপরদিকে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধস ও বন্যা কবলিত ক্ষতিগ্রদের মাঝে ১০ কেজি করে চাউল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, মুড়ি, বিস্কুট, মোমবাতি, ম্যাচসহ ১১ পদের ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার (১০ জুলাই) রাতে খাগড়াছড়ি শহরের “কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্ররিবার গুলোর মধ্যে প্রাথমিক ভাবে তিন হাজার পরিবারকে এসব ত্রাণ সামগ্রী তিরণ করা হচ্ছে জানিয়ে পরিষদ সদস্য মংসুইপ্র“ চৌধুরী অপু বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সবসময় গরিব, অসহায়, বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্থ, দূর্গতদের পাশে ছিল, আগামীতেও থাকবে। এই ত্রাণ সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য কিছুটা হলেও অভাব পুরণ করবে। সে সাথে পাহাড়ের যে কোন সমস্যায় অসহায়দের পাশে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে কাজ করে যাচ্ছে জেলা পরিষদ। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান পরিষদ নেতৃবৃন্দরা।

এ সময়, জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা, খোকশ্বের ত্রিপুরা,পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাংবাদিক নুরুল আজম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ পরিমল দেবনাথ, কাউন্সিলর মাসুদুল হক মাসুদ, গোলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান জ্ঞান রঞ্জন ত্রিপুরা, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ জাবেদ হোসেন, পৌর ছাত্রলীগের আহবায়ক রেজাউল করিম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply