২ মে ২০২৪ / ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:০২/ বৃহস্পতিবার
মে ২, ২০২৪ ৫:০২ অপরাহ্ণ

যুবলীগ নেতা ফরিদের খুনিরা গ্রেফতার হচ্ছে না হেতু কী?

     

পুলিশ বলছে অভিযান অব্যাহত আছে, এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসনের লোক দেখানো নিস্ফল অভিযান
বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে জনসম্মুখে কেঁদে চোখ ভাসালেন নিহত যুবলীগ নেতা ফরিদের সাত বছরের শিশু সন্তান সায়েম। মানববন্ধনে পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে অংশ নিয়ে মাইক্রোফোন হাতে সায়েমের মুখেও বার বার একই ধ্বনি, ‘বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে। বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই’। একই মানববন্ধনে নিহত ফরিদের মেয়ে ফারহানা আকতারের প্রশ্ন? এখন আমাদের কে দেখবে? আমাদের ভবিষ্যত কি হবে? সে জানায়, সন্ত্রাসীরা আমার শান্তিপ্রিয় বাবাকে অকালেই ঘুম পারিয়ে দিয়েছে, আমাকে বাবা হারা করেছে, মাকে স্বামী হারা করেছে। আমি এসব সন্ত্রাসীদের ফাঁসি চাই।
ফরিদের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে যারা আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে তারা এলাকায় প্রশাসনের নাকের ডগার উপরেই ঘুরছে। আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে যাতে আমরা মামলা তুলে ফেলি। বিষয়টি আমরা প্রশাসনের কাছে জানালেও তারা এখন পর্যন্ত একজন সন্ত্রাসীকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। ফরিদের মা ছালেহা বেগম মানববন্ধনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ছেলের হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের কোন তৎপরতা নেই, তিনি তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানান।
চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার ডিসি রোড এলাকায় ডিশ ব্যবসায়ী যুবলীগ কর্মী ফরিদুল ইসলাম হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবী তুলে নিহত পরিবারের সদস্যরা।আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চকবাজার ডিসি রোড গণি কলোনীর সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের সর্বস্তরের মানুষ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরাও অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব শফিউল আলম শফিসহ ফরিদের চাচা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী ও পরিবারের দাবী প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। ফলে যুবলীগ নেতা ফরিদুল ইসলাম হত্যার ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোন আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মানববন্ধনে নিহতের চাচা আবু তালেব, চকবাজার ও বাকলিয়া থানা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শফি হাজী প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ফরিদের হত্যাকারী রিয়াজ চৌধুরী রাসেল, মুরাদ, সারোয়ার, মজনু, মাসুদ ও মুছাসহ সকলকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওয়তায় এনে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে শাস্তি দেওয়া হোক। তারা বলেন, শান্তিপূর্ণ এ এলাকায় যারা খুন চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
যুবলীগ নেতা ফরিদ হত্যার আসামী ধরতে পুলিশে নিস্ফল অভিযান :
এদিকে নিহত পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরুল হুদা বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চিহ্নিত ও মামলার এজাহারভুক্তদের অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। যেখানেই খবর পাচ্ছি সেখানেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বুধবার ফরিদ হত্যার আসামীরা একটি ভবনে অবস্থান করছে জেনে আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। তবে তল্লাশী চালিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার অভিযোগ করে বলেন, জনগণের চোখ ফাঁকি দিতে প্রশাসনের লোক দেখানো নিস্ফল অভিযান পরিচালনা করছে। তাদের দাবী প্রশাসন চাইলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে পারে। উপর মহলের চাপ ও তাদের সৎ ইচ্ছার অভাবেই সন্ত্রাসীরা এলাকায় অবস্থান করা স্বত্ত্বেও গ্রেফতার এড়িয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত বুধবার ফরিদ খুনের তিন আসামী নবী, ফয়সাল ও রাসেল বাকলিয়া থানার শান্তি নগর বগার বিল এলাকার সবুজ কুঠির (রহিম সাহেবের বিল্ডিং এ অবস্থান করছে জেনে চকবাজার থানা পুলিশ সকালে ভবনটি ঘেরাও করে অভিযান চালায়। প্রায় একঘন্টার এ অভিযানে পুলিশ কাউকে না পেয়ে ফিরে যায়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুরে ডিস ক্যাবল ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় যুবলীগ কর্মী ফরিদ। এ ঘটনায় আহত হয়েছে নারীসহ চারজন। নগরীর ডিসি রোডের কালাম কলোনীতে ক্যাবল ব্যবসায়ি যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশা ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা ফয়সালের অনুসারীদের মধ্যে ক্যাবল ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরদিন শনিবার যুবলীগ নেতা ফরিদুল ইসলাম ফরিদ খুনের ঘটনায় নগরীর চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন ফরিদের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। এতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ মোট ৯ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরো ১৫ জনকে আসামীর তালিকায় রাখা হয়।
মামলায় যাদের নাম উল্লেখ আছে তারা হলেন, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মুছা, দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ও ফয়সাল এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত জানে আলম, নবী, ইকবাল, তৌহিদুল আলম, মাসুদ এবং মুরাদ। এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply