টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২ লক্ষীপুরে ১
টেকনাফ ও লক্ষীপুর প্রতিনিধি
হিঙ্গা ক্যাম্পের ত্রাস, শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম প্রকাশ হাকিম ডাকাতের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নুরুল আলম ওরফে কমান্ডার জুবাইর (৩৫) অবশেষে টেকনাফে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। এ সময় দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন ও ১৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবির যৌথ অভিযান চলাকালে বন্দুকযুদ্ধে লক্ষীপুরের এক মাদক ব্যবসায়ী টেকনাফে নিহত হয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টায় টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় নুরুল আলম নিহত হয়। সে টেকনাফের নয়াপাড়া শালবাগান আনসার ক্যাম্পের অস্ত্র লুট ও আনসার কমান্ডার আলী হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অতিষ্ঠ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। র্যাব-১৫ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, ভোর রাতে র্যাবের একটি টহল দল টেকনাফ দমদমিয়া এলাকায় কিছু লোককে চ্যালেঞ্জ করলে তারা অতর্কিত র্যাবের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এ সময় র্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। ২৫ থেকে ৩০ মিনিট ধরে চলে দুই পক্ষের গোলাগুলি। এ সময় অন্যরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। লেদা রোহিঙ্গা বস্তির সভাপতি মাস্টার আব্দুল মতলব লাশ শনাক্ত করেন। মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, গতকাল (শুক্রবার) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার দমদমিয়া ১৪নং ব্রিজ সংলগ্ন বেত বাগান এলাকায় র্যাব-১৫ টেকনাফ ক্যাম্পের কমান্ডার লে. মির্জা শাহেদ (পিপিএম, বার) বিএন এক্স এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দলের সাথে কুখ্যাত ডাকাত দলের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। র্যাবের গুলিবর্ষণে নিরুপায় হয়ে ডাকাত দল পিছু হটে যায়। ঘটনাস্থল তল্লাশি করে ২টি বিদেশি পিস্তল, ১৩ রাউন্ড বুলেটসহ নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের এইচ ব্লকের এমআরসি নং-৩৪৮৮১, শেড নং-১২৩০, ৬ নং কক্ষের বাসিন্দা মৃত হোসেন প্রকাশ লাল বুইজ্জার পুত্র ডাকাত নুরুল আলম (৩০) এর মৃতদেহ উদ্ধার করে। লেদা রোহিঙ্গা বস্তির সভাপতি মাস্টার আব্দুল মতলব লাশ শনাক্ত করেন। মৃতদেহ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। কুখ্যাত ডাকাত সর্দার, আরসা নেতা আনসার কমান্ডার নুর আলম ডাকাত ওরফে কমান্ডার জুবাইর নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। অনেককে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা গেছে।
এদিকে তার সাঙ্গপাঙ্গসহ একটি সন্ত্রাসী দল রঙ্গীখালী গ্রামের পশ্চিমে পাহাড়ে আস্তানা গেড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা লোক ধরে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদের আতংকে এলাকাবাসীর ঘুম নেই বলে জানা গেছে। অনেকে ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে বিজিবির যৌথ অভিযান চলাকালে বন্দুকযুদ্ধে লক্ষীপুরের এক মাদক ব্যবসায়ী টেকনাফে নিহত হয়েছেন। তিনি হলেন লক্ষীপুরের শাকচর গ্রামের বাসিন্দা মো. সিরাজুল ইসলামের পুত্র মো. বেল্লাল হোসেন (২৫)।
টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আছাদুদ-জামান চৌধুরী জানান, ‘২১ ফেব্রুয়ারি রাতে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ব্যবসায়ী মো. বেল্লাল হোসেনকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ মরিচ্যা চেকপোস্টে আটক করা হয়। আটক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায়, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ২২ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ২ বিজিবির নায়েক মো. হাবিল উদ্দিন এবং কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন ৩৪ বিজিবির নায়েব সুবেদার মো. ওহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে যৌথ টহল দল দ্রুত ধৃত আসামিকে নিয়ে বর্ণিত এলাকায় গমন করে ওঁৎপেতে থাকে। ভোররাতে কাটাবুনিয়া এলাকায় একদল ব্যক্তিকে দেখে যৌথ টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করে। টহল দলের উপস্থিতি লক্ষ্য করামাত্রই চোরাকারবারী দলীয় লোকজন টহল দলের উপর অতর্কিতভাবে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এ সময় বিজিবি’র যৌথ টহল দল আত্মরক্ষার্থে কৌশলগত অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। গুলির শব্দ থামার পর ভোরের আলোতে যৌথ টহল দলের সদস্যরা এলাকা তল্লাশি করলে মো. বেল্লাল হোসেন (২৫) কে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া উক্ত স্থান থেকে আনুমানিক ৯ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে’।