বাংলা ভাষা উৎসবে পশ্চিমবঙ্গের কবি শ্রীরূপকুমার
অমর একুশের বাংলা ভাষা উৎসব-২০১৮ চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক জেএমসেন হলে ১২ ফেব্র“য়ারি সোমবার বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হায়দার আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই ভাষা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ভারতের বিশিষ্ট কবি-কথাসাহিত্যিক ও ইতিহাস গবেষক শ্রীরূপকুমার পাল।
ভাষা উৎসবের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব, বিশিষ্ট লেখক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। উৎসব ও আলোচনা সভায় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলার সূচনা ও মনস্তাত্ত্বিক পর্বের ইতিকথা’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সোহেল মো. ফখরুদ-দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান, অস্ট্রিয়া প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক আইনবিদ ডাবল পোস্টডক্টরাল ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন খান, বর্ষীয়ান সমাজকর্মী ও মানবতাবাদী শ্রীমতি রানু প্রভা বড়–য়া, ভাষা আন্দোলন স্মৃতি রক্ষা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ডা. এম এ মোক্তাদির, বিশিষ্ট কবি ও লেখক মাহমুদুল হাসান নিজামী, প্রকৌশলী কবি সঞ্চয়ণ কুমার দাশ, বিশিষ্ট লেখিকা দীপালী ভট্টাচার্য, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক শাশ্বতী নন্দী, কলকাতার বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী মনোজ মিত্র, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের বিশিষ্ট কবি তারকনাথ দত্ত, কবি জয়ন্তী পাল, সাহিত্যিক সুব্রত নন্দী, বিশিষ্ট সাংবাদিক এ কে এম আবু ইউসুফ, ব্যাংকার বাবু দুলাল কান্তি বড়ুয়া, কবি মেহরুন নেছা রশিদ, কবি করুণা আচার্য, চট্টগ্রাম জেলা দায়রা জজ আদালতের প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিপ্লব বড়ুয়া, বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুচ কুতুবী, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রহিম, প্রবীণ রাজনীতিবিদ অমর কান্তি দত্ত, সাংবাদিক শাহেনা আকতার হেনা, আলোকচিত্রী সোহেল তাজ, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, কবি শাহনুর আলম, আবদুল হালিম, তন্ময় চৌধুরী, হ্যাপী দাশ, প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন চৌধুরী, বাবুল কান্তি দাশ, মোহাম্মদ হাসান, সীমা বড়–য়া প্রমুখ। অমর একুশের বাংলা ভাষা উৎসব-২০১৮ এর শুরুতে চট্টগ্রামের প্রয়াত বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও ভাষাসংগ্রামী, মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম, মহাকবি আলাওল, মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, ভাষা আন্দোলনের স্থপতি অধ্যক্ষ আবুল কাশেম, প্রখ্যাত ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ভাষাসৈনিক মাহফুজুর রহমান, ভাষাসৈনিক চৌধুরী শাহাবুদ্দিন আহমেদ খালেদ, ভাষাসৈনিক সোলায়মান আলম খান, ভাষাসৈনিক আবুল কালাম আজাদ, একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতা কবি মাহবুবুল আলমসহ অসংখ্য ভাষীবীরদের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
ভাষা উৎসবে বক্তারা বলেছেন, ভাষার জন্য আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অনেক চড়াই-উতরাই পার করে চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছিল ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। বায়ান্নের আগুন-ঝরা সে দিনগুলো বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। বায়ান্নের ফেব্রুয়ারির এই দিনটি মাতৃভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতার ফসল। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা শুধু প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়ে আর সারাবছর মাতৃভাষা বাংলার খবর রাখি না। কী দাবি নিয়ে ভাষার এই অর্জন ঘটেছিল ও আমরা মায়ের ভাষা অর্জন করেছিলাম তা বেমালুম ভুলে না গিয়ে প্রজন্মের সামনে মাতৃভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। উৎসবে বক্তারা আরো বলেছেন, রক্ত অর্জিত বাংলা মায়ের ভাষার পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের এই প্রজন্মের সকলের দায়িত্ব। ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া শহীদদের আত্মাগুলো এখনো কাঁদছে। তাঁরা বলছেন আমরা তোমাদের কথা বলার অধিকারের জন্যে নিজেদের জীবন আত্মাহুতি দিয়েছি। আমাদের শহীদদের আত্মদানে অর্জিত মাতৃভাষাকে আমরা যথার্থ ব্যবহার করছি না। পবিত্র বাংলা মায়ের ভাষার সাথে ইংরেজি, উর্দু, হিন্দি মিলিয়ে মাতৃভাষাকে কলঙ্কিত করছি। এটি আমাদের জন্য শুভকর সংবাদ নয়। আগেই মাতৃভাষার চর্চা করতে হবে। তারপরেই অন্যান্য ভাষা শিখতে এবং শিখাতে হবে এ প্রজন্মকে। আমাদের উচ্চ আদালতসহ সর্বোচ্চ স্তরে বাংলা ব্যবহার এখনো সীমাবদ্ধতার মধ্যে। এই প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রাচীন জনপদের এই অঞ্চলের লক্ষ-কোটি মানুষের প্রিয় মাতৃভাষা বিসর্জন দেওয়া চলবে না। পদে পদে মাতৃভাষা আজো আক্রান্ত। আসুন এই ব্যবস্থার প্রতিরোধ করি। আমাদের দেশে এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলা টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রকৃত বাংলা ভাষা চর্চা হচ্ছে না। তারা বাংলার সাথে ইংরেজিকে মিশিয়ে নয় বাংলা নয় ইংরেজির মাধ্যমে পবিত্র বাংলা ভাষাকে কলঙ্কিত করছে। প্রজন্মকে অশুদ্ধ ভাষা চর্চার মহামারী থেকে উদ্ধার করে সঠিক বাংলা ভাষা চর্চায় উৎসাহিত করতে হবে। উৎসবে একজন মানবতাবাদী, সমাজকর্মী শ্রীমতি রানু প্রভা বড়ুয়া ও চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান ডাবল পোস্টডক্টরাল ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন খানসহ ভারত থেকে আগত নয়জন কবি-সাহিত্যিককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।