২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১২:১৮/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ

পেটের ভেতর মস্তিস্ক!

     

আকাশ ইকবাল

অনেকে কথায় কথায় বলে ছেলেটার ছেলেটির মাথাভরা বুদ্ধি। এটা স্বাভাবিক কারণেই বলে। কারণ মানুষের বুদ্ধি মাথায় থাকে। আমি যদি বলি ছেলেটির পেটভরা বুদ্ধি তাহলে নিশ্চই আপনি আমাকে পাগল ভাববেন? ভাবার কথাই। কারণ সবাই জানে মানুষের বুদ্ধি পেটে নয় মাথায় থাকে। আচ্ছা মানুষের পেটে কি বুদ্ধি থাকে? আমি যদি আপনাকে প্রশ্ন করি, মাথায় কেন বুদ্ধি থাকে? স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিবেন মাথায় বুদ্ধি থাকে মস্তিস্ক আছে বলে। আর আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করে বলেন, পেটে কেন বুদ্ধি থাকে? তখন আমিও আপনার মতো স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিবো কারণ পেটেও মস্তিস্ক আছে। এখন আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত আমি পাগল। উল্টাপাল্টা বকছি। তাহলে আমি বলব, আমি যদি উল্টাপাল্টা বকি, তাহলে কি যারা আবিস্কার করেছে সেই বিজ্ঞানীরা উল্টাপাল্টা বলছে? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছে, এমনই এক মস্তিস্কের কথা। যার বাস পেটের মধ্যে। অর্থ্যাৎ খাদ্য পরিপাকতন্ত্রে। এদের উদ্দীপনা পোঁছে যায় মস্তিস্কে। তাই খাদ্যভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আমাদের আচরণ ও মানসিক অবস্থা। বিষয়টা আরেকটু বুঝিয়ে বলি ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমরা কি করি? অনেক চিন্তাভাবনা করি। এই সিদ্ধান্তের কাজটা করে আমাদের মস্তিস্ক। অনেক সময় এমনই হয় যে, অতিরিক্ত মানসিক চাপে পড়লে অথবা কোনো জটিল সিদ্ধান্ত নিতে গেলে পেটের ভেতর ইঁদুর দৌঁড়ায়। এটা কি পুরোই অলৌকিক বা কাকতালীয়। এটা বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো রকম সুযোগ নেই এখানে। কারণ পেটের ভেতরে দ্বিতীয় একটি মস্তিস্ক আছে। যা অবচেতন থাকে। সে জন্য এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেমকে বলা হয় অবচেতন মন বা সয়ংক্রিয় মস্তিস্ক। এই এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেমের কাজ অনেক। স্থ’ল এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেম ভেগাস ¯œায়ুর মাধ্যমে ইলেকট্রিকেল ইমপালস পাঠায় মস্তিস্কে। (এই ইলেকট্রিকেল ইমপালস দ্বারা মানুষ হাঁটে। অবাক করার মতো ব্যপার যে, ইলেকট্রিকেল ইমপালস মৃত মানুষকেও দু-একপা হাঁটাতে পারে)। এই পালস নিউরোট্রান্সমিটারে সেরোটেনিনের ব্যবহার বাড়ায়, যা মানসিক অবসাদ কমাতে ভূমিকা রাখে। এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেম যেমন মস্তিস্কে তথ্য পাঠায় ঠিক একই ভাবে মস্তিস্কও কাজ করে। এই ঘটনা ঘটে মস্তিস্কে যখন জটিল চাপ পড়ে। তখন ভেগাস ¯œায়ুর মাধ্যমে সেই সিগন্যাল আমাদের এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেমে আসে। এ জন্যেই পেটের ভেতর পাকস্থলীতে অস্বস্তি অনুভূত হয়। যাকে আমরা বলি ইঁদুর দৌঁড়। বিজ্ঞানীরা প্রাণীর পাকস্থলী শরীর থেকে কেটে আলাদা করে ফেলার পরও দেখেন, তা খাদ্য পরিপাক করতে পারে। তারপর থেকে গবেষণা হয় কীভাবে পাকস্থলী বা অস্ত্র আসলে কাজ করে। মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ দেহকোষের দশ গুন। যদিও নতুন গবেষণায় জানা গেছে, ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দেহকোষের সমান। ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে আছে ভাইরাস এবং নানা জীবাণু। এগুলো কিন্তু বেশির ভাগই আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। আর পরিপাকে অংশ নেয় অনেগুলোই ভাইরাস ও জীবাণু। তারপরও সেযেতু এগুলো ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস সেহেতু এগুলোর গতিবিধি লক্ষ রাখতেই হবে। ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের গতিবিধি সর্বক্ষণই লক্ষ রাখে এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেম। এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের গতিবিধি আবার পাঠায় মস্তিস্কে। এ জন্যই এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেম কে মস্তিস্কের সাথে তুলনা করা হয়।
উল্লেখ্য যে, আগেও বলেছি এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেম অবচেতন। এটি যুক্তিসংগত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাই একে দ্বিতীয় মস্তিস্ক বলা যায়। তবে এটির কাজ মস্তিস্কের মতো নয়।
লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply