২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সকাল ৭:৪৯/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চোখের জল আর ফুলেল শুভেচ্ছায় চিরবিদায় নিলেন রামুর সম্ভাবনাময় ছাত্রলীগ নেতা রিফাত

     

খালেদ হোসেন টাপু ,রামু
অসংখ্য সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খীদের চোখের জল আর ফুলেল শ্রদ্ধায় চিরবিদায় নিলেন রামুর সম্ভাবনাময় ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ রিফাত। শনিবার বিকেল ৫ টায় ৩০ মিনিটে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় স্টেডিয়ামে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে মাইমুন আলী (রঃ) জামে মসজিদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার জানাযায় শরিক হন অগণিত দলীয় নেতাকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী ও শোকার্ত মানুষ।

শনিবার বেলা পৌনে ১২টায় অসংখ্য নেতাকর্মী বিশাল মটর সাইকেল শোভাযাত্রার মাধ্যমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘর থেকে এম্বুলেন্স যোগে রিফাতের মরদেহ শ্রীকুলস্থ নিজ বাড়িতে আনা হয়। সেখানে দল, মত নির্বিশেষে বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত হয়ে ফুলেল শ্রদ্ধা এবং এক নজর দেখতে সমবেত হয়। এম্বুলেন্সে রাখা রিফাতের মরদেহ এক নজর দেখতে সুদূর আমেরিকা থেকে আসা মা খতিজা বেগম ছুটে যান। এরপর তিনি রিফাতের চেহারায় হাত বুলিয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে আত্মীয় স্বজনরা দ্রুত রামু হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার বাড়িতে এনে রিফাতের মাকে চিকিৎসা করিয়ে প্রাথমিকভাবে সুস্থ করেন।
জানাযা পূর্বে সংক্ষিপ্ত সভায় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, হোসাইন মোহাম্মদ রিফাত ছিলেন দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী এবং সে একজন পরীক্ষিত সৈনিক। সৎ, আদর্শ, নিষ্ঠাবান রিফাতের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তার অকাল মৃত্যু আমরা কোনভাবে মেনে নিতে পারছি না। আল্লাহ পাক যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন। আগামী ২২ আগষ্ট রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় স্টেডিয়ামে রিফাতের কুলখানি করার ঘোষণা দেন।
রিফাতের বাড়ি রামু ফতেখাঁরকুল দক্ষিণ শ্রীকুল গ্রামে। তিনি আমেরিকান প্রবাসী সৈয়দ আহমদ ও খতিজা বেগমের ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি মা-বাবা, ভাইসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্খী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের শ্রীকূল গ্রামের নিজ বাসায় ঘুম থেকে জেগে রিফাত (২৬) হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করে বমি করেন। তাকে দ্রুত কক্সবাজার আল ফুয়াদ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রামুর উদীয়মান সম্ভাবনাময় নেতা রিফাতের মৃত্যুকে ঘিরে ৩ দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক টাইমলাইনে প্রধান শিরোনামে শোকগাঁথা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন পেশার লোকজন সমবেদনার সাথে শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকেই ফেসবুক প্রোফাইলে নিজেদের ছবি পরিবর্তন করে রিফাতের ছবি ব্যবহার করছেন আবার অনেকে তাকে নিয়ে ফেলে আসার দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন। ফেসবুকে ঢুকলেই রিফাতের ছবি ও স্মৃতিকথা চোখে পড়ছে।
ছাত্রলীগ নেতা রিফাত ছিলেন অত্যন্ত সৎ, আন্তরিক, পরিশ্রমী ও কর্মঠ। দীর্ঘদিন ধরে রিফাত ছাত্রলীগের হাল ধরে রেখেছিলেন। দলীয় ঘোষিত বিভিন্ন মিটিং, মিছিলে অংশগ্রহণে তার কাছে রাতদিন সমান ছিল। যেকোন ঘটনার খবর শুনে তিনি ঘরে বসে থাকতে পারতেন না। রাত যতই হোক, নেতা, বন্ধু-বান্ধবদের ডাকে সাড়া দিতেন রিফাত। তিনি সহকর্মীদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়জন। সর্বদা হাস্যোজ্বল ও কর্মচঞ্চল এ প্রিয় রাজনৈতিক কর্মীর খবর শুনে কেউই প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার বাসায় সকলে ছুটে যান। তখনি সহকর্মীরা বুঝতে পারেন প্রিয় মানুষটি আসলে আর নেই। আকস্মিক এই মৃত্যুর খবর শুনে সকালেই সহকর্মীরা হাজির হন শ্রীকুলস্থ রিফাতের বাসায়। বাসায় তার মৃতদেহ দেখে সহকর্মী, আত্মীয় স্বজনদের বুক ফাটা কান্নায় সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

জানাযা পূর্ব বিশাল জনসমুদ্রে রিফাতের স্মৃতিচারণ ও মাগফেরাত কামনা করে আলোচনায় অংশ নেন, সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, রামু উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, রামু উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসাইন তানিম প্রমুখ। সভা পরিচালনায় ছিলেন কৃষকলীগের সভাপতি সালাহ উদ্দিন।

জানাযায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি জাফর আলম চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা শামসুল আলম, রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মন্ডল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জুনায়েদ বিপ্লব, আওয়ামীলীগ নেতা মাষ্টার ফরিদ আহমদ ও নুরুল হক, ফতেখাঁরকুল চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, গর্জনিয়া চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা জহির উদ্দিন কাজল, মাসুদুর রহমান মাসুদ, হাজী সাহেদ সরওয়ার, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুর শুক্কুর, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইসমাইল সাজ্জাদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি এড. মোজাফ্ফর আহমদ হেলালী, যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান ভুট্টো, জালালাবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, জেলা ছাত্রলীগ নেতা ইমরুল হাসান রাশেদ, যমুনা টিভি’র কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি ইমরুল কায়েস, যুবলীগ নেতা নবীউল হক আরকান, শাহাদাত হোসেন, দৈনিক বাঁকখালীর মফস্বল সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুর রহমান রুবেল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমজাদ আলী খান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড রামু উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আনছারুল হক ভূট্টো, সদস্য সচিব সাংবাদিক খালেদ হোসেন টাপু, রামু উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দীন, এমপি কমলের ব্যক্তিগত সহকারি আবু বক্কর ছিদ্দিক, সৈনিকলীগের সভাপতি মিজানুল হক রাজা, সাধারণ সম্পাদক রাসেদুল হক বাবু, তাঁতীলীগের সভাপতি নুরুল আলম জিকু, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ, শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক শফিকুল আলম কাজল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আজিজুল হক আজিজ, ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন, যুবলীগ নেতা ইছহাক চৌধুরী পাখী, উপজেলা সৈনিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফরহাদ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোঃ নাছির, সৈনিকলীগ নেতা মোঃ ইউনুচ প্রমুখ।

সভায় জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসাইন তানিম অত্যন্ত সৎ, যোগ্য, ন¤্র কর্মী উল্লেখ করে মরহুম হোসাইন মোহাম্মদ রিফাতকে রামু উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ঘোষণা করেন এবং যতদিন রামু উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না ততদিন রিফাতই রামু উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতি থাকবেন।

জানাযার পূর্বে সংক্ষিপ্ত সভায় সবার কাছে রিফাতের জন্য দোয়া চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রিফাতের চাচা সাব্বির আহমেদ। তিনি তার জীবদ্দশায় কাউকে কোনভাবে কষ্ট দিয়ে থাকলে তার জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এছাড়া আমেরিকা প্রবাসী হোসাইন মাহমুদ রিফাতের ছোট ভাই হাসান মাহমুদ আরফাত মুঠোফোনে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। জানাযায় ইমামতি করেন, জেলার বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন রামু বাইপাস কেন্দ্রিয় জামে মসজিদেরও খতিব মাওলানা হাফেজ আবদুল হক।
জানাযায় পূর্বে সভায় বক্তারা বলেন, রিফাত তাঁর চারিত্রিক গুনাবলী দিয়ে সব রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সর্বস্তুরের মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। যা বর্তমান সময়ে বিরল। রিফাতকে হারিয়ে শুধু ছাত্রলীগ নয়, পুরো আওয়ামী পরিবারের বিশাল শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। এ শুণ্যতা পূরণ হবার নয়। বক্তারা আরো বলেন, কক্সবাজার-রামুবাসীর কাছে ছাত্রনেতার চেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন তাঁর অনন্য সব গুনাবলী দিয়ে। দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে সবার কাছে হয়েছেন প্রিয়ভাজন। সমালোচনা বা কোন অপবাদ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। বরং সদা হাস্যোজ¦ল রিফাতের সততা, বিনয়ী স্বভাব ছিলো সবার কাছে অতি চেনা। বন্যাদূর্গত, শীতার্ত ও অসহায় মানুষেরও সহায় ছিলেন রিফাত। সাম্প্রতিক বন্যায় ছুটে গিয়েছিলেন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে। অন্যের স্বপ্ন পূরণের বাসনায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়া এ ছাত্রনেতা নিজের স্বপ্ন পূরণের আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বক্তারা রিফাতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকাহত স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply