২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:৫২/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৫:৫২ অপরাহ্ণ

স্বাধীনতা বহু দামে অর্জন

     

মো. আবদুর রহিম

‘বাংলাদেশ’ নামটির সাথে জড়িয়ে আছে বহু মানুষের রক্ত, ত্যাগ ও নির্যাতন। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি চড়া দামে কেনা একটি শব্দ। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ। বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হলো ১৯৭১ এর ১৬ মার্চ। বাংলাদেশতো কারোর দয়ার দান নয়। পাকিস্তান ভারতের স্বাধীনতা অর্জন ছিল ব্রিটিশদের দয়ার দান। ‘বাংলাদেশ’ নামটি অর্জন করতে ১৯৪৭ সালের পর থেকেই জীবন যুদ্ধে নামতে হয়েছে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি উপলব্ধি করেছেন। ‘এই পাকিস্তান বাঙালির জন্য হয়নি। একদিন বাংলার ভাগ্য নিয়ন্তা বাঙালির হতে হবে? সেই লক্ষ্যে পৌছার জন্য বঙ্গবন্ধু ৪ জানুয়ারি ১৯৪৮ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পৃথিবীর দেশে দেশে রাজনৈতিক দল ও জাতির পিতা আছে। তবে বাংলাদেশ একটি মাত্র দেশ, যে দেশটি একটি জাতিরাষ্ট্র। এক জাতির এক দেশ ও একমাত্র নেতা বঙ্গবন্ধু। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা। আমাদের স্বাধীনতা মাত্র ৯ মাসের অর্জন নয়। এ স্বাধীনতার জন্য লড়াই সংগ্রাম শুরু সেই ১৯৪৭ এরপর হতেই। পাকিস্তানের ৫৬ ভাগ মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করত। বাংলাদেশের মানুষের মায়ের ভাষা বাংলা, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির জনক কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে সর্বপ্রথম ঘোষণা দেন ‘উর্দু হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। সেই থেকে বাঙালি অধিকার হারা। মায়ের ভাষা বাংলার জন্য চলে অবিরাম সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে চলে আন্দোলন। জেলে বন্দি শেখ মুজিব মায়ের ভাষার জন্য আমরণ ধর্মঘট শুরু করেন। ভাষার জন্য আন্দোলন চলার সময় বঙ্গবন্ধু মুজিব কারাবন্দি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিক সহ অগুনন প্রাণ ঝরে রাজপথে। শহীদের রক্ত গঙ্গায় স্বীকৃত হয় বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সাল থেকে বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে কখনো আপোষ করেননি। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ৯২ (ক) ধারা বলে বাতিল করার পর বঙ্গবন্ধু আরো দৃঢ় অবস্থানে নিজেকে সুদৃঢ় করেন। ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর গড়ে তোলার দায়িত্ব নেন। সেই সময় পাকিস্তানে মৌলিক গণতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ফাতেমা জিন্নাহর হারিকেন প্রতীকের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। আইয়ুব খান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে ভোটারদের প্রভাবিত করে ফাতেমা জিন্নাহকে পরাজিত করে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ লাগে। এ যুদ্ধে বাংলাদেশ অরক্ষিত ছিল। বঙ্গবন্ধু মুজিব ১৯৬৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে বাঙালির বাঁচার দাবী ‘৬ দফা’ প্রণয়ন করেন ১৯৬৬ সালে। ৬ দফা প্রচারকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বারবার গ্রেফতার করা হয়। এ ৬ দফা ঘিরে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার লক্ষ্যে তাঁর নামে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ রুজু করে। বঙ্গবন্ধু সহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবীতে ছাত্র জনতার ঐক্য সুদৃঢ় হয়। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে বাংলায় ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৯ এ গণঅভ্যূত্থান সংগঠিত হয়। আন্দোলনের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও অন্যরা বিনাশর্তে মুক্তি লাভ করেন। স্বৈরাচার আইয়ুব খানের পতন হয়। পাকিস্তান আবারো দখলে যায় সামরিক জেনারেল-ইয়াহিয়ার হাতে। তীব্র আন্দোলনের মুখে ইয়াহিয়া খান দেশে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করতে বাধ্য হন। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬তে ৬ দফার আন্দোলন, ১৯৬৮-১৯৬৯ এ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন ছাড়াও ১৯৬৪’র রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান ভারত যুদ্ধ ঘিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নেন। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা, বঙ্গবন্ধুই একমাত্র জাতীয় বীর, বঙ্গবন্ধুই একমাত্র বাঙালির মুক্তির দূত হিসেবে আবির্ভূত হন। বাঙালির নিজস্ব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ৬ দফা বাঙালির বাঁচার দাবী বা মুক্তি সনদ উপস্থাপন করেন সেই ৬ দফার ভিত্তিতেই ১৯৭০ এর ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত নেতা হিসাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত ম্যান্ডেট অর্জন করেন। পাকিস্তানী স্বৈরশাসকচক্র নানাভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করে বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু করে। নির্বাচিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নির্বাচিত রাজনৈতিক দল। পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ ও বহু রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুকৌশলে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা এবং নিয়মতান্ত্রিক আলোচনা অব্যাহত রাখেন। বঙ্গবন্ধুকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা আখ্যায়িত করতে না পারে তার জন্য তিনি রাজনৈতিক কৌশলে নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তান সরকার ১ মার্চ ১৯৭১ এ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশে সেনা মোতায়েন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এর নির্দেশে ১ মার্চ থেকে বাংলাদেশ পরিচালিত হয়। সেনানিবাস ছাড়া সব সরকারি দপ্তর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলে। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা আহবান জানান।’ তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর কালরাতে বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সরকার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তান। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএনএ ও এমপি’রা ১৯৭১ এর ১০ এপ্রিল সরকার গঠন করে এবং ১৭ এপ্রিল ‘মুজিবনগর’ অস্থায়ী ও প্রথম রাজধানী গঠন করে সরকার শপথ নিয়ে বাংলাদেশ পরিচালনা ও যুদ্ধ পরিচালনা করে। সরকারে রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ তাঁর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রী পরিষদের এম. মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান সহ কয়েকজন মন্ত্রী, সেনাবাহিনীর প্রাধান্য, নৌবাহিনীর প্রধান ও বিমান বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় গঠন করে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টর এবং ৪টি বিগ্রেডে বিভক্ত করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। ৯ মাস চলে মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধে ৩০ লক্ষাধিক মানুষ শহীদ হন, ২ লক্ষ ৬৯ হাজার নারী সম্ভ্রাম হারান, ১ কোটি মানুষ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। দেশে থাকা ৩ কোটি মানুষের ঘরবাড়ি জ¦ালিয়ে দেয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ হানাদার বাহিনী পরাজয় বরণ করে আত্মসমর্পণ করে। সেই থেকে আমরা স্বাধীন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ এ পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে এসে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন বাংলাদেশ পরিচালনার সুযোগ পান। তাঁকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ ভোরে পরিবারের অধিকাংশ সদস্য সহ হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত নানা ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে পথ চলে। জীবন বিসর্জন থেকে জেল-জুলুম নির্যাতন হয় চলার পথের সঙ্গী। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হয় নিগৃহীত-নির্যাতিত। বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল নিষিদ্ধ। অন্ধকার ছিন্ন করে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলায় ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২১ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও দৃঢ়চিত্তের ধরে রাখেন হাল। তাঁর হাতে ১৯৯৬ থেকে ২০০১, ২০০৯ থেকে ২০২৩ চলছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু’র ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সফল। বহুদামে কেনা স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিষ্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। আসুন, জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সাথে থাকি, পাশে থাকি।সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা স্মৃতি পরিষদ

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply