২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ২:০৫/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

রমজান মাসে খাদ্যে ভেজাল, মজুতদারি, কালোবাজারি এবং কৃত্তিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা অত্যন্ত ‘গর্হিত কাজ’: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

     

পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে খাদ্যে ভেজাল, মজুতদারি, কালোবাজারি এবং নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টাকে অত্যন্ত ‘গর্হিত কাজ’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দেশব্যাপী আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তৃতীয় ধাপে এসব মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রমজান মাস। এসময় আমাদের কিছু ব্যবসায়ী জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারণ রমজান মাস কৃচ্ছ্রতা সাধনের সময়। মানুষ যাতে ভালোভাবে তাদের ধর্মকর্ম এবং যথাযথভাবে রোজা পালন করতে পারে সেদিকেই সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সেসময় এসব মুনাফা লোভীদের জিনিসের দাম বাড়ানো আর মানুষকে বিপদে ফেলার কোনও মানে হয় না।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মসজিদে জুমার খুতবার সময় আপনারা (ইমাম) কালোবাজারি ও মজুতদারি করা বা খাদ্যে ভেজাল দেয়া যে গর্হিত কাজ এ ব্যাপারে মানুষকে আরও সচেতন করবেন।’

নিম্নআয়ের মানুষকে বিশেষ কার্ড দেয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেশি দামে চাল ক্রয় করে মাত্র ৩০ টাকা কেজি দরে আমরা তাদের দিচ্ছি। রমজান মাসকে সামনে রেখে আমরা আরও ১ কোটি মানুষের মধ্যে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করব। সাধারণ মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, চাল, তেল, চিনি, ডাল, যা যা দরকার সেগুলো যাতে ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে, সেজন্য টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূলের কার্ড দিয়ে আমরা এ সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্ম নিয়ে যাতে কেউ বাড়াবাড়ি না করে এবং সত্যিকারের ইসলামের শিক্ষা সবার কাছে পৌঁছাতেই প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। ইসলামের মূল্যবোধের সঠিক প্রসার চায় সরকার। এ জন্য জেলা পর্যায়ে চারতলা আর উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এসব মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।

অতীত স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুরো পরিবারকে নিঃশেষ করার পর আমার ওপরও বারবার হত্যা চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু তারপরও আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কেননা, কিছু নির্দিষ্ট কাজ দিয়ে প্রত্যেককে দুনিয়াতে পাঠান আল্লাহ। আমার কখনও মৃত্যুভয় হয়নি। কারণ সুনির্দিষ্ট কাজের লক্ষ্যপূরণ করতে চাই আমি। বিচারের ভার কোনো মানুষকে দেননি আল্লাহ। ইসলাম ধর্ম মানে না বলে কাউকে হত্যা করতে হবে – এ কথা ইসলামে বলা নেই। কিছু মানুষের দুষ্কর্মের জন্য ইসলাম ধর্ম কলুষিত হচ্ছে। ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে শান্তির এ ধর্মকে মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। অথচ সবচেয়ে শান্তির ধর্ম হলো ইসলাম।’

ধর্মের নামে বিচারের অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামকে নিয়ে কেউ যেন বাড়াবাড়ি করতে না পারে, সে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যারা সত্যিকারের ইসলামকে বিশ্বাস করে তাদের অন্য ধর্মের প্রতিও সহনশীল হতে হবে। আমাদের বাংলাদেশে আমরা চাই সব ধর্মের সমান অধিকার; যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। শেষ বিচার তো আল্লাহ করবেন, বিচারের ভার আল্লাহর।

উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বরিশালের আগৈলঝাড়া, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার মডেল মসজিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইমাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি ও চলতি বছরে ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তৃতীয় ধাপে ৫০টিসহ এখন পর্যন্ত মোট ১৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেছেন শেখ হাসিনা। বাকিগুলোর নির্মাণকাজও শেষের দিকে।

সরকারি অর্থায়নে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। শুধু নামাজ আদায় নয়, এসব মসজিদ হবে গবেষণা ইসলামি সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষদের আলাদা ওজু এবং নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া ইমাম-মোয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে। মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম ও ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply